কোনো মা তার গর্ভে ধারণ করা সন্তানকে কি হত্যা করতে চায়? এরপরও পরিস্থিতির শিকার কোনো কোনো মা পাষানি হয়ে ওঠে। কেন? সমাজ ব্যবস্থা তাকে পাষানি করে। অবশ্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে কন্যাসন্তান স্বামী মেনে নেবে না হুমকিতে মায়াবী মায়েরও ঘাতক হওয়ার উদাহরণ রয়েছে। এর মাঝে চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার পল্লি নওদা পাঁচলিয়ায় একটি বাগানের গাছের ডালে ঝুলিয়ে রাখা ব্যাগ থেকে নবজাতকের মৃতদেহ উদ্ধারের পর নানা প্রশ্ন দানা বেঁধেছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় প্রশ্নটা হলো, নবজাতককে হত্যা করলো কে এবং কেন? ভুত-প্রেতে নয়, মানুষের সন্তান মানুষেই হত্যা করেছে। উদ্দেশ্য তো আছেই।
যে যে কারণেই করুক, হত্যা করে দৃষ্টান্তমূলক দণ্ডনীয় অপরাধ করেছেন। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী, কোনো মাতা-পিতাও তার সন্তানকে হত্যা দূরের কথা শারীরিক নির্যাতনও করতে পারেন না। যেহেতু নবজাতক হত্যা করা হয়েছে, সেহেতু পুলিশের ওপর তদন্তের দায়িত্ব আইনানুগভাবেই পড়েছে। এ ধরনের হত্যাকাণ্ড রোধে বিচার অনিবার্য। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন, বর্তমান পুলিশ কি সমাজের স্বার্থে উত্থাপিত প্রশ্নগুলোর জবাব খুঁজে বের করে প্রকৃত হত্যাকারী বা হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার কাজে আন্তরিক হবে? হওয়া দরকার। কেননা, সমাজের অপির্ত দায়িত্বই তো পুলিশ কর্তারা পালন করেন।
কোনো স্বামী যদি কন্যাসন্তান প্রসবের জন্য স্ত্রীকে দায়ী করে নির্যাতন করেন তা হলে তিনি বড় ধরনের অন্যায় করেছেন। এ অন্যায়টি হত্যার চেয়েও বড় নয় কি? এর প্রতিবাদ প্রতিরোধই কাম্য। সন্তান হত্যার বদলে তিনি ঘুরে দাঁড়ালে পুরুষের হিংস্রতা নিশ্চয় হ্রাস পেতো। আর তা না হয়ে যদি হয় অবৈধ সম্পর্কের ফসল? যদি হয় প্রবাসীর স্ত্রীর? কিংবা কোনো গৃহকর্তার নীরব ধর্ষণে গৃহপরিচারিকার গর্ভধারণ? নাকি প্রভাবশালীর অঙ্গুলির হেলানে দোলা কোনো বস্তির বা দুস্থ দরিদ্র পরিবারের উপযুক্ত মেয়ের? কোনো নারী-পুরুষের চাওয়া পাওয়ারই পরিণতি? পুলিশের দক্ষ তদন্তে উঠে আসুক সকল প্রশ্নের স্বচ্ছ জবাব।
পড়শি দেশে বিয়ে ছাড়াই যে কোনো নারী সন্তানের মা হওয়ার আইনগত বৈধতা পেয়েছেন। সমাজ? পুরোনো দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো কি অতোটাই সহজ? তবে হ্যাঁ, বদলানোর হাওয়া যখন উঠেছে দক্ষিণ এশিয়ায়, তখন হয়তো সেদিন বেশি দূরে নেই, যেদিন গর্ভধারিণীকে ডাইনি হতে হবে না। তাছাড়া আইন যেহেতু সমাজের জন্যই, সেহেতু আইনের যথাযথ প্রয়োগে প্রতিটি অপরাধেরই বিচার নিশ্চিত করা দরকার। অপ্রতুলতার কাটিয়ে উঠতেই হবে। বিচারে প্রকৃত দোষীর উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা দরকার। দোষী যেই হোক, তার উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে শুধু নবজাতক হত্যাই নয়, সকল প্রকারের অপরাধ প্রবণতাই হ্রাস পাবে।