আত্মবিশ্বাসযুক্ত সদিচ্ছা সকল যুদ্ধ জয়ের মূল অস্ত্র

ধূমপায়ীদের সিংহভাগই ধূমপানের ক্ষতি টের পান। ছাড়ার চেষ্টাও করেন। ছাড়েন ঠিকই, যখন শরীরের সর্বনাশের মাত্রাটা বেশি হয়ে যায়। আগেভাগে ছাড়তে পারলে যেমন নিজের সুস্থতা মেলে, তেমনই উপকৃত হয় পরিবার, প্রতিবেশী তথা সমাজ। প্রজন্মও পাবে তার সুফল।
ধূমপান হলো তামাককে বিশেষ প্রক্রিয়া করে তাতে আগুন দেয়ার পর নির্গত ধোয়া শ্বাসের সাথে শরীরে গ্রহণের প্রক্রিয়া। গবেষণায় দেখা গেছে সিগারেটের ধূমপানে নিকোটিনসহ ৫৬টি বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ বিরাজমান। অবাক হলেও সত্য যে, এর একটিও মানবদেহের জন্য নূন্যতম উপকারে আসে না, বরং অকালে মৃত্যু ডেকে আনে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিভিন্ন বৈজ্ঞানিকগণসহ মোটামুটি সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত যে, ধূমপান যক্ষ্মা, ফুঁসফুসের ক্যান্সারসহ নানা রোগের অন্যতম প্রধান কারণ এবং ধারক ও বাহক। এটা জানার পরও কি ধূমপান করা চলে? সচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে ধূমপান বর্জন ঘরে-বাইরে যেন বিপ্লব ঘটিয়েছে। এখনও যারা ধূমপানে আসক্ত তাদের আজই ধূমপান ছেড়ে দেয়া উচিত। ধূমপান শুধু ধূমপায়ীদেরই ক্ষতি করে না, পাশে থাকা নারী-পুরুষকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে যেমন, তেমনই শিশু কিশোররাও কৌতূহল বশে সেদিকে ঝুঁকতে থাকে। ছাড়তে গিয়ে আসক্তি? নানাভাবেই পরীক্ষিত, ধূমপান ছাড়ার জন্য ওষুধ পথ্য বা মন্ত্র তন্ত্রের দরকার নেই, নিজের সদিচ্ছাই যথেষ্ট। দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ। এ আইন না মানলে ৩শ টাকা জরিমানা। একই ব্যক্তি একইভাবে একই আইন পরবর্তীতে অমান্য করলে তার জরিমানা দ্বিগুন হারে বাড়বে। শাস্তির পরিমাণ কম হলেও দেশে এ আইন প্রণয়ন ও তা প্রয়োগের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টিতে সহায়ক। অবশ্যই আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সকল প্রতিষ্ঠান প্রধানদেরই নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানকে ধূমপানমুক্ত করার বিশেষ উদ্যোগ নেয়া জরুরি। সাংগঠনিকভাবেও ধূমপানমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার উদ্যোগ অবশ্যই অভিনন্দন পাওয়ার দাবি রাখে। চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের একটি প্রতিষ্ঠানের পর দামুড়হুদার স্বেচ্ছায় রক্তদান সংগঠন সন্ধিমেলার ধূমপায়ী সভ্যরাও ধূমপান ছেড়ে দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন। স্বেচ্ছায় রক্তদাতারা অবশ্যই সুন্দর সমাজ গঠনে অগ্র সৈনিক। অগ্র সৈনিকেদের ধূমপানে আসক্তি কি মানায়? তাদের ইতিবাচক এ উদ্যোগ ও সিদ্ধান্তকে অভিবাদন।
অনেকেই অঙ্গীকার করেন, ছাড়েনও। কেউ কেউ বলেন, বহুবারই তো ছেড়েছি, পারলাম কই! যতোবার ছেড়েছি, ততোবারই তো ধরেছি। এ ধরনের উক্তি ব্যর্থতাকেই জানান দেয়। পারবো না কেন? পারতে হবে, আত্মবিশ্বাসযুক্ত সদিচ্ছা সকল যুদ্ধ জয়ের মূল অস্ত্র।