স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরসহ দেশের উত্তরাঞ্চলে শীতের তীব্রতায় জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। দেখা দিয়েছে শীতজনিত নানা রোগের প্রকোপ। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো টেকনাফে ২৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত। স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। ফলে আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। এছাড়া দেশের আবহওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে। মধ্যরাত থেকে দেশের কোথাও কোথাও ঘন কুয়াশা পড়বে। খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গা, যশোর, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, ও রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, বরিশাল বিভাগের কিছু এলাকার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। যা অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ৫ দিনের আবহওয়ার পূর্বাভাবে বলা হয়েছে, শেষের দিকে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। গতকাল চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৮ এবং সর্বোচ্চ ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। কয়েকদিনের মেঘ বৃষ্টির প্রভাবে এবং প্রবাহমান শৈত্যপ্রবাহের কারণে তাপমাত্রা তরতর করে নেমে আসছে। তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে সন্ধ্যার পর থেকেই মানুষের চলাচল সীমিত হয়ে যাচ্ছে। জরুরি কাজ ছাড়া তেমন কেউই রাস্তায় বের হচ্ছে না।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, তীব্র হাড় কাঁপানো শীতে চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের জীবনযাত্রা বির্পযস্ত হয়ে পড়েছে। শীতের কবলে পড়ে মানুষ ও পশু-পাখি কাহিল হয়ে পড়েছে। গত ৪ দিন এখানে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। গত ৪ দিন ধরে সন্ধ্যা নামতে না নামতেই ঘন কুয়াশার চাঁদরে ঢাকা পড়ছে এ উপজেলা। সেই সাথে তীব্র হচ্ছে শীতের প্রকোপ। এর ফলে দুর্ভোগ দুর্দশা বাড়ছে ছিন্নমূল ও দরিদ্র অসহায় মানুষের। কষ্টে পড়েছে বৃদ্ধ, শিশু, হতদরিদ্র মানুষ ও দিনমজুর। শীতের কারণে শীতজনিত বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। কনকনে শীতে সন্ধ্যায় বাজার-ঘাট প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ছে। এলাকার ছিন্নমূল মানুষেরা শীত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য খড়কুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। বাজারের পুরাতন কাপড়ের দোকানগুলোতে শীতবস্ত্র কেনার জন্য নিম্ন আয়ের ও ছিন্নমুল মানুষের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ঘন কুয়াশায় দুর্ঘটনা এড়াতে প্রধান সড়কগুলোতে যানবাহন দিনের বেলায় হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। এছাড়া গত কয়েকদিনের তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে রবি ফসলসহ বোরো বীজতলায় নানা রোগের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এদিকে শীতের তীব্রতা বাড়ায় ছিন্নমূল মানুষের জন্য কিছু সংস্থা শীতবস্ত্র বিতরণ করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সরকারিভাবে এ উপজেলায় এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ করতে দেখা যায়নি।
অপরদিকে বৃষ্টির দুইদিন পর শুক্রবার দুপুরে সামান্য সময়ের জন্য সূর্যের দেখা মেলে রাজশাহী অঞ্চলে। কিন্তু সূর্য বেশিক্ষণ রোদের উত্তাপ ছড়াতে পারেনি। যে কারণে শীতে জবুথুবু হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের প্রাণিকূল। সারাদিনের হিমেল হাওয়ার পর সন্ধ্যায় কনকনে ঠাণ্ডায় কাঁপছে পদ্মাপাড়ের জনপদ। শীতবস্ত্রের অভাবে ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষেরা কষ্ট পাচ্ছে। শীত নিবারণে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা ফুটপাতের কম দামের শীতবস্ত্রের দোকানে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। এছাড়া সন্ধ্যার পর ছিন্নমূল মানুষদের রাস্তার ধারে খড়-কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে। সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণও করা হচ্ছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এদিকে শীতের কারণে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যাই বেশি। রামেক হাসপাতলের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আরিফুল হক জানান, আগত রোগীদের মধ্যে বেশির ভাগই ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, হৃদরোগ ও অ্যাজমাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক লতিফা বেগম জানান, শুক্রবার রাজশাহীতে সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ৫ এবং সর্বোচ্চ ১৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ব্যবধান কমে যাওয়ায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। মাঘের বৃষ্টির পর প্রতিদিনই তাপমাত্রার ব্যবধান কমছে। জানুয়ারির শেষের দিকে রাজশাহী অঞ্চলে এক থেকে দুটি মৃদু (৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) অথবা মাঝারি (৬-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে শীতের তীব্রতার সাথে দেখা দিচ্ছে শীতকালীন নানা রোগের। তাই সুস্থ থাকতে অবলম্বন করতে পারেন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন ভেষজ উপায়। ছোট-বড় সবার জন্য উপকারী। স্বাস্থ্য সচেতনরা বলেছে, তুলসিপাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে রাখুন। চা তৈরির সময় লিকারে সামান্য তুলসি গুড়া মিশিয়ে দিলে চা এর স্বাদ ভালো আসবে, ঠাণ্ডাজনিত সমস্যাও দূর হবে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ছোট এক কাপ দই খেলে ঠাণ্ডা সংক্রমণের পরিমাণ কমিয়ে দেয় শতকরা ২৫ ভাগ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দইয়ে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় কার্যকর। ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা সারাতে মধুর জুড়ি নাই। শীতের রাতে মধু খেয়ে ঘুমাতে পারেন। প্রতিদিন সকালে গরম পানিতে মধু মিশিয়ে খেলে বেশি উপকার পাবেন। লেবুতে থাকা ভিটামিন সি এবং লৌহ ঠাণ্ডাজ্বর জাতীয় রোগের বিরুদ্ধে ভীষণ কার্যকর। এতে আরও রয়েছে পটাসিয়াম যা মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুকে সক্রিয় রাখে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ঠাণ্ডায় যারা ফুসফুস বা শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা, হাঁচি, কাশি, অ্যালার্জির সমস্যা, বুকে শ্লেষ্মা জমাসহ নানা সমস্যায় থাকেন তাদের জন্য খুবই উপকারী আদা-চা। শীতে নিয়মিত আদা-চা খেলে এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। শিশুদের বেলায় সর্দি কাশির সাথে সাথে ডায়রিয়া জনিত রোগও বাড়তে পারে। কারণ এই সময় রোটা ভাইরাসের আক্রমণও বেড়ে যায়। বাচ্চাকে সব সময় ফোটানো পানি খাওয়ানো উচিত। রাস্তার খাবার, কাটা ফল, কোল্ড ড্রিংক ইত্যাদি না খাওয়ানোই ভালো।