গাংনীর স্কুলছাত্র আল আমিনের দাফন সম্পন্ন { ছেলেকে চোখের আড়াল না করতেই বিদেশ যেতে দেয়নি মা

মাজেদুল হক মানিক: অভাবের সংসারে একদিন ঘর আলো করে জোৎস্না খাতুনের কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে ছেলে সন্তান। পিতামাতার আদরে সে একে একে পার করে ১৫টি বসন্ত। পা দেয় ষোলতে। তার পরেও বাবা মায়ের কাছে ছিলো সেই ছোট্ট আল আমিন। তাইতো আদুরে বুকের ধনকে সব সময় আঁচলের নিচে আগলে রাখতেন মা। মা-ছেলের গভীর মায়ার বন্ধনের কারণে তাকে প্রবাসে যেতে দিতে রাজি হননি মা জোৎস্না খাতুন। সংসারের সচ্ছলতা আনতেই পিতা তাকে বিদেশে পাঠাতে চেয়েছিলেন। মায়ের ইচ্ছে ছিলো লেখাপড়া শেষ করে সে ব্যবসা করবে। যাতে মায়ের চোখের সামনেই থাকতে পারে। কিন্তু কে জানতো বিদেশ যাওয়া না হলেও সে চিরতরের মত অজানায় পাড়ি দেবে? তাও আবার বাবা-মায়ের চোখের সামনে মৃত্যুযন্ত্রণা নিয়ে ছেলের বাঁচার আকুতির স্মৃতি যেন পাগল করে তুলেছে গোটা পরিবারকে। মেহেরপুর গাংনীর চৌঁগাছা গ্রামের এসএসসি পরীক্ষার্থী আল আমিনের মা জোৎস্না খাতুন ছেলে সম্পর্কে এমনই বর্ণনা দিয়ে মুছা যাচ্ছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে আল আমিনের লাশের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে আল আমিনের লাশ নিয়ে বাড়ি পৌঁছান তার স্বজনরা। এ সময় তার মায়ের বুক ফাটা আর্তনাদে এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। শোকে মুহ্যমান উপস্থিত সকলেই। ছেলে হারানো মায়ের আহাজারিতে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি অনেকেই। শুধু তার মা নয়, পিতাসহ ছোট দুই বোন ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও ছিলেন পাগল প্রায়। শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে গিয়ে আল আমিনের অভিযুক্ত ঘাতক সাগর হোসেনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার দাবি করেন উপস্থিত অনেকেই। আর কোন পিতামাতার বুক যেন খালি না হয় সে জন্য সাগরকে দ্রুত গ্রেফতার পূর্বক উপযুক্ত সাজা নিশ্চিত করার দাবিও জানান তারা।
এদিকে গতকাল বিকেলে গাংনী ডিগ্রি কলেজ প্রাঙ্গণে নিহতের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে গ্রামবাসী ও আত্মীয় স্বজনসহ অনেকেই উপস্থিত হয়েছিলেন তাকে শেষ বিদায় জানাতে। জানাজা শেষে ডিগ্রি কলেজের পাশেই চৌগাছা কেন্দ্রীয় কবরস্থানে আল আমিনের দাফন সম্পন্ন হয়। দোয়া মোনাজাতে মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়।
ছেলে হারানো পরিবারে শোকের পাশাপাশি অভিযুক্ত ঘাতকের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও উঠেছে। মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে মামলার কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম হোসেন। তবে অভিযুক্ত সাগর হোসেনকে গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান চলছে বলেও জানান তিনি। এ ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া সাগরের সহযোগী জাহিদুলের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন ওসি।
উল্লেখ্য, চৌগাছা গ্রামের এসএসসি পরীক্ষার্থী আল আমিনকে বিষাক্ত কোনো মারণনাশক পান করিয়ে গত রোববার গাংনী মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকা থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইলফোন নিয়ে পালিয়ে যায় তার পিতার খালাতো ভাই কাজিপুর গ্রামের সাগর হোসেন। আল আমিনকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে গাংনী এবং ওইদিনই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুইদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জালড়ে বুধবার আল আমিনের মৃত্যু হয়। বিষাক্ত কোনো তরল পদার্থ পানের কারণে আল আমিনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান সেখানকার চিকিৎসক। নিহত আল আমিন এবার গাংনী পৌর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এস.এস.সি পরীক্ষার্থী ছিলেন।