মাথাভাঙ্গা মনিটর: যখন ক্রিজে এলেন, ম্যাচ অনেকটা ভারতের পকেটে। ওভারপিছু ছয়েরও কম রান নিতে হবে। হাতে ৮ উইকেট, তার ওপর ক্রিজের অন্য প্রান্তে মাত্রই সেঞ্চুরি পূর্ণ করা বিরাট কোহলি। মহেন্দ্র সিং ধোনির জন্য তো এ ম্যাচ জিতে বেরিয়ে আসা বাঁ হাতের খেল। এর আগে কতোবার ভারতকে এর চেয়েও কঠিন পরিস্থিতিতে জিতিয়ে এনেছেন ভারতের ‘দ্য ফিনিশার’!
কিন্তু এবার আর পারলেন না। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দলকে জেতানো দূরে থাক, উল্টো ৩ বল খেলে কোনো রান না করেই আউট হয়ে ফিরলেন ধোনি। তিনি আউট হতেই পরের দিকের অনভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানরা খেই হারিয়ে ফেললেন। ভারতও শেষ পর্যন্ত এমন ‘সহজেই জিতে যেতে পারতো’ ম্যাচটা হেরে গেল ২৫ রানে। সিরিজের চার ম্যাচে চতুর্থ পরাজয়। নিজেও খেলতে পারলেন না, দলকেও পথ দেখাতে পারলেন না ধোনি। তবে কী নিজের ‘মাইডাস’ স্পর্শ হারিয়ে ফেলেছেন ‘ক্যাপ্টেন কুল’? সিরিজের আগেই তার অধিনায়কত্ব, তার ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। গত খেলায় নিজে ওভাবে আউট হয়ে হাতে থাকা জয়টাকে পায়ে ঠেলে দিয়ে আসার পর ধোনির দিকে ছুটছে প্রশ্নের সুতীক্ষ্ণ সব তির। তবে কী ভারতে শেষ হতে চলল ধোনি-যুগ?
ভাবাবেগ, ক্রিকেটীয় বিশ্লেষণ, ভবিষ্যত অনিশ্চয়তা একপাশে রেখে শুধুই পরিসংখ্যান বিচার করলে উত্তরটা হয়তো ‘হ্যাঁ’-ই হবে। ব্যাটসম্যান, উইকেটকিপার, অধিনায়ক- তিন ভূমিকাতেই যে দিনে দিনে ধোনির ফর্মটার গরিবি হাল হচ্ছে। ব্যাট হাতে ফিনিশার তকমাটা জৌলুশ হারাচ্ছে, উইকেটের পেছনে আর আগের মতো ভরসা জোগাচ্ছে না তার গ্লাভস। আর অধিনায়ক হিসেবে? গতকালের ম্যাচটাকেই এখনকার ধোনির প্রতীকী ধরে নিতে পারেন। গত বছর ডিসেম্বরে টেস্ট থেকে অবসর নেয়ার পর থেকেই চলছে ধোনির এ দুর্দশা। রেকর্ড তা-ই বলে।
বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারের পর ধোনির অধিনায়কত্বে সর্বশেষ ১২ ওয়ানডের ৯টিতেই হেরেছে ভারত, টানা তিনটি সিরিজ হার। পুরো বছরটা হিসেব করলেও রেকর্ডটা ছন্নছাড়া- ২২ ম্যাচে ১০ জয়, হার ১১টি। ভারত গত বছর টি-টোয়েন্টি খেলেছে ৩টি। দুটিতে হেরেছে, একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত। অথচ ভারতের সফলতম এই অধিনায়ক ২০০৭ সালে দলের নেতৃত্বে আসার পর থেকে ১৯০ ওয়ানডের ১০৩টিতেই ভারতকে জয় এনে দিয়েছেন। টি-টোয়েন্টিতে ৫১ ম্যাচে ২৬ জয়। সাথে যোগ করুন ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ, টেস্ট ৱ্যাঙ্কিংয়ে ভারতকে শীর্ষে নিয়ে যাওয়া। সেই অধিনায়ক ধোনিকে এখন মনে হচ্ছে যেন দূরের কোনো স্মৃতি!
শুধু অধিনায়ক হিসেবেই নয়, ধোনির দুর্দশা চলছে ব্যাট হাতেও। এ অস্ট্রেলিয়া সিরিজেই চার ম্যাচে তাঁর রান ১৮, ১১, ২৩, ০। শুধু তৃতীয় ম্যাচের ২৩ রানেই ধোনিকে ‘ধোনি’ মনে হয়েছে, এর বাইরে পুরো সিরিজেই আর স্বরূপে দেখা দিতে পারেননি ৩৪ বছর বয়সী! প্রতিটি ম্যাচে যে ভারতের ‘আর ২০-২৫ রানে’র আক্ষেপ যাচ্ছে, সেটি হয়তো থাকত না যদি ধোনি ব্যাট হাতে ভালো খেলতেন। গত এক বছরেই ধোনির এমন সংগ্রাম চলছে, ২২ ওয়ানডেতে ৩৯.৯৩ গড়ে করেছেন মাত্র ৬৩৯ রান, সর্বোচ্চ ৯২। যেখানে তাঁর ক্যারিয়ার গড় ৫১.৩৫! ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে ধোনির ভারতের যখন এ দশা, ব্যাটসম্যান ধোনির যখন এ দুর্দশা, তখন উল্টো দিকে টেস্টে কোহলির ভারত বেশ সফল। এই সিরিজেই দুটি সেঞ্চুরি পেয়ে গেলেন কোহলি। সব মিলিয়ে তাই জল্পনা চলছে, ধোনিকে সরিয়ে কোহলিকে ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্বও দিয়ে দিলেই হয়। ৩৪ বছর বয়সী ধোনির ক্যারিয়ারেরই শেষ দেখছেন অনেকে।
এ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরই ধোনির বিদায় হতে পারে। ভারতের ক্রিকেটের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক হয়তো আরেকবার এ ট্রফিটা হাতে নিয়েই বিদায় নিতে চাইবেন, যে ট্রফি দিয়ে আট বছর আগে বিশ্বকে শুনিয়েছিলেন এক ঠাণ্ডা মাথার অধিনায়কের আগমণী গান। চক্রপূরণের অপেক্ষাতেই হয়তো আছেন ধোনি!