সিঙ্গাপুরে জঙ্গি সন্দেহে ২৭ বাংলাদেশি গ্রেফতারের ঘটনায় আবারো জোর আলোচনায় এসেছে জঙ্গি তৎপরতার বিষয়টি। অন্যদিকে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে নির্বিচারে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালিয়েছে সন্দেহভাজন জঙ্গিরা। এ দুটি ঘটনা বিশ্বমিডিয়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ বর্তমান বিশ্বের অন্যতম একটি সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। গত বছর প্যারিসে রক্তাক্ত জঙ্গি হামলার পর আইএস প্রতিরোধে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করে কয়েকটি দেশ। পরিতাপের বিষয় হলো, কিছুতেই জঙ্গিদের দমন করা যাচ্ছে না। উপরন্তু বিভিন্ন দেশে জঙ্গিদের নতুনভাবে সংগঠিত হওয়ার খবর আসছে।
সম্প্রতি সিঙ্গাপুর নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতার ২৬ বাংলাদেশিকে দেশেও পাঠানো হয়েছে। জঙ্গিবিষয়ক এসব তথ্য ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশের জন্য যে অস্বস্তিকর তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বরের মধ্যে ২৭ বাংলাদেশিকে জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সিঙ্গাপুর নিরাপত্তা বাহিনী গ্রেফতার করে। সিঙ্গাপুরে নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করা এরা আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা ও ইরাক-সিরিয়ায় সক্রিয় জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) মতাদর্শকে সমর্থন করে সপ্তাহে একবার বৈঠকে মিলিত হয়ে সশস্ত্র জিহাদ নিয়ে আলোচনা করতেন। এছাড়া দেশে ফিরে কিভাবে সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করা হতো। বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতার সাথে সংশ্লিষ্টদের কাছে অর্থ পাঠানোর অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। ফলে বিষয়টি কিছুতেই খাটো করে দেখার উপায় নেই। বার বার বলা হয়েছে জঙ্গি তৎপরতা রোধে অর্থের উৎস বন্ধ করা জরুরি একটি বিষয়। সরকারকে এ ব্যাপারে বিভিন্ন সময় পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে কিন্তু বাস্তবতা হলো, শেষ পর্যন্ত তা ফলপ্রসূ হতে দেখা যায়নি। জঙ্গি দমনে সরকারকে আরো যে আন্তরিক হতে হবে, বর্তমান তথ্য এ বার্তাই দিচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়। আতঙ্কের ব্যাপার যে, সিঙ্গাপুর থেকে দেশে পাঠানো অভিযুক্ত জঙ্গিদের স্বীকারোক্তিতেও ধর্মের নামে সশস্ত্র জিহাদ সমর্থন করার ব্যাপারটি উঠে এসেছে। কেউ কেউ মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে জিহাদে যোগ দেয়ার কথাও ভাবছেন। এসব তথ্য বাংলাদেশের জন্য কতোটা ঝুঁকির তা নতুন করে বলার কিছুই নেই। বাংলাদেশে জঙ্গি আছে এমন অভিযোগ বিভিন্ন দেশের, পক্ষান্তরে সরকারের ভাষ্য হচ্ছে দেশি-বিদেশি একটি চক্র বাংলাদেশকে জঙ্গিরাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার অপচেষ্টা করছে।
অন্যদিকে পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়ে গুলির ঘটনায় ৩০ জনের নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে সে দেশের ইংরেজি দৈনিক ডন। আর বিবিসি লিখেছে, নিহতের সংখ্যা ২১ এবং আহত অর্ধশতাধিক। ফেসবুক পোস্টে ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে সে দেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান। এটা স্পষ্ট যে, দেশে দেশে জঙ্গি হামলার যোগসূত্র রয়েছে। তাছাড়া জঙ্গি আন্তর্জাতিক কানেকশনও বহুল উচ্চারিত বিষয়। জঙ্গি দমনে সমন্বিত কৌশল নির্ধারণ করারও পরামর্শ রয়েছে। প্যারিসে হামলার পর বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করেছিলেন, জঙ্গিরা যে কোনো সময় যে কোনো স্থানেই হামলা চালাতে পারে। বাস্তবেই এমনটি দেখা যাচ্ছে। ফলে এদের দমনে কোনো ধরনের অনুকম্পা যেমনি কাম্য নয়, তেমনি কালক্ষেপণও প্রত্যাশিত হতে পারে না। জঙ্গিরা বিচ্ছিন্ন কোনো শক্তি নয়। ভারত-পাকিস্তান-আফগানিস্তানভিত্তিক আল-কায়েদা ও তালেবান মতাদর্শের বিভিন্ন উগ্রবাদী সংগঠন, এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা ভয়ঙ্কর ইসলামিক স্টেটের মতো জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গেও বাংলাদেশের জঙ্গিদের সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ার তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক কিছু মহল বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে এই জঙ্গিবাদকে মদদ দিচ্ছে, আছে এমন তথ্য-প্রমাণও। ফলে জঙ্গিবাদবিরোধী লড়াইটাও হতে হবে বহুমুখী। এ জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোকে নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়ার কথাও বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে। দেশ সম্পূর্ণ জঙ্গিমুক্ত করার লক্ষ্যে সরকারের কঠোর পদক্ষেপই আমাদের প্রত্যাশা।