খুলনায় গতকাল শুক্রবার কিছুক্ষণের জন্য ঝড় তুলেছিলো মাশরাফি। অবশ্য সে ঝড় কাজে লাগেনি। বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য। খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি সে ঝড়। ১২ বলে ২২ করার পরই থমকে গেছেন মাশরাফি। তার একটু আগেই আউট হয়ে গেছেন টি-টোয়েন্টিতে নিজের সেরা ইনিংস খেলা মাহমুদউল্লাহ। এই দুজনের বিদায়েই নিশ্চিত হয়ে গেল সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে জিম্বাবুয়ের জয়। শেষ পর্যন্ত ১ ওভার বাকি থাকতেই বাংলাদেশ হেরেছে ১৮ রানে।
টপ অর্ডারের একের পর এক আত্মহত্যার মাঝে একমাত্র ব্যতিক্রম হয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়া মাহমুদউল্লাহর বীরত্বও ব্যর্থ হয়ে গেল এই পরাজয়ে। ১৭ রানে ৪ উইকেট পড়ার পর নেমেছিলেন, যখন আউট হলেন তখন বাংলাদেশের রান ১৩৪। তখনো ইনিংসের বাকি ৪ ওভার। কিন্তু বাংলাদেশের পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যায় তখনই। ৪১ বলে ৫৪ করেছেন মাহমুদউল্লাহ। টি-টোয়েন্টিতে তাঁর দ্বিতীয় ফিফটি। প্রথমটি এসেছিল তিন বছর আগে! জিম্বাবুয়ের ১৮০ রানের জবাবে বাংলাদেশ করতে পেরেছে ১৬২।২-০তে এগিয়ে যাওয়ায় সিরিজটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। তৃতীয় ম্যাচে সেটি বুমেরাং হওয়াতেই চতুর্থ ম্যাচে প্রায় পূর্ণ শক্তির দল ফেরানো হয়। কিন্তু আফগানদের কাছে নাকানিচুবানি খেয়ে আসা জিম্বাবুয়ে তৃতীয় ম্যাচে যে ‘মোমেন্টাম’টি পেয়েছিল, কিংবা বলা ভালো বাংলাদেশ যেটি হারিয়েছিল, সেটিও ওপরই দাঁড়িয়ে গেল চতুর্থ ম্যাচটিও।-টোয়েন্টির ভরা মৌসুমের ‘প্রস্তুতি সিরিজে’র পরীক্ষা-নিরীক্ষা দুই দফায় বিফল হলো। টানা দুই ম্যাচ হেরে সিরিজ ২-২ ড্র করল বাংলাদেশ।
সিরিজের শেষ ম্যাচে মুড়ি মুড়কির মতো উইকেট পড়েছে বাংলাদেশের। ১৮১ রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ ২.৪ ওভারেই হারিয়ে ফেলে ৪ উইকেট। মাঝখানে ‘আক্রমণই রক্ষণের সেরা উপায়’ তত্ত্ব মেনে নিয়ে ইমরুল-মাহমুদউল্লাহ পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছিলেন। কিন্তু ইমরুল কায়েস ১৮ রান করে ফেরায় আবারও চাপে পড়ে বাংলাদেশ। এরপরই ম্যাচের সেরা মুহূর্তটা পার করেছে বাংলাদেশ। নুরুল হাসানকে নিয়ে ৩৯ বলে ৫৭ রানের জুটিটা ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছিল বাংলাদেশকে। কিন্তু যখনই খেলায় স্বস্তি ফিরে আসছিল, তখনই ১৫ রানে আউট হয়ে গেলেন নুরুল।
এরপরও চেষ্টা চালিয়ে গেছেন মাহমুদউল্লাহ ও মাশরাফি। কিন্তু ৮ বলের মধ্যে দুজনই ফিরে গেলে তিন ওভার বাকি থাকতেই বাংলাদেশের পরাজয় নিশ্চিত হয়। বাকি সময়টা কেবল শুরুতেই এতগুলো উইকেট হারানোর আক্ষেপ বাড়িয়েছেন আরাফাত-হায়দাররা। শুরুতে ওই ধাক্কা না খেলে হয়তো ম্যাচ জিতেও যেতে পারত বাংলাদেশ।
বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণা দিয়েছেন হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। ৫৮ বলে ৯৩ রানের অপরাজিত এক ইনিংস খেলেছেন। ৭ রানের জন্য প্রথম জিম্বাবুইয়ান হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরি পাওয়া হলো না তাঁর। সেঞ্চুরি করতে না পারলেও বাংলাদেশের সর্বনাশ করে দিয়েছেন। ৩২ ও ৩৬ রান করে তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন রিচমন্ড মুতুম্বামি ও ম্যালকম ওয়ালার। তাতেই ১৮০ রান তুলেছে জিম্বাবুয়ে।
অথচ বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছিল দারুণ। প্রথম ওভারেই ভুসি সিবান্দাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন মাশরাফি। কিন্তু আবু হায়দারের দ্বিতীয় ওভারে পরপর দুই বলে মুতুম্বামির ক্যাচ হাতছাড়া করে সেই সূচনাকে পানিতে ফেলে দিয়েছেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা জিম্বাবুয়ের টপ অর্ডার কি আর সেই সুযোগ হাতছাড়া করে? শেষ দিকে তাই কোনো রকম ঝড়ঝাপটা তুলতে না পারলেও ঠিকই ১৮০ রান করে ফেলেছে সফরকারীরা।
বল হাতে আজ বাংলাদেশের বোলাররা ছিলেন ‘দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ’ মুডে। সবাই মিলেই বাজে বল করেছেন, রান দিয়েছেন। ফিল্ডাররাও ক্যাচ ফেলেছেন।
গত বছরের শেষ দিকের পুনরাবৃত্তি হলো আবারও। সেবারও ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়েকে ধবলধোলাই করার পর ড্র করেছিল টি-টোয়েন্টি সিরিজটি।