স্টাফ রিপোর্টার: এবার দলীয় প্রতীকে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে (ইউপি) লড়বে বিএনপি। তৃণমূল নেতাদের সেই নির্দেশনাই দেয়া হয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড থেকে। ভোট জালিয়াতিসহ নানা শঙ্কা সত্ত্বেও এ নির্বাচনে লড়াইয়ের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে দলটির। তবে ধানের শীষ প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে বিএনপির তৃণমূল নেতৃত্বকে। ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা নেতাদের মতামতের ভিত্তিতেই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। তাদের বাছাই করা প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেবে কেন্দ্র। এতে সই করতে পারেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর আগে পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নে সই করেন মো. শাহজাহান। আগামী শনিবার অনুষ্ঠিতব্য দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ইউপি নির্বাচনের সামগ্রিক দিক নিয়ে আলোচনা হবে। ওই বৈঠকে বিএনপির কাউন্সিলসহ সাংগঠনিক বিষয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হবে বলেও জানা গেছে।
জানা যায়, পৌর নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির নানা চিত্র তুলে ধরে কেন্দ্রে রিপোর্ট পাঠাচ্ছে বিএনপির তৃণমূল। ওই নির্বাচনে সরকারি দলের ভোট ডাকাতি ছাড়াও দলীয় ভুলত্রুটির বিষয়গুলো প্রতিবেদনে উঠে আসছে। দলীয় ভুলত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে ইউপি নির্বাচনে লড়বে বিএনপি। নির্বাচনে ভরাডুবিকেও রাজনৈতিকভাবে লাভ বলেই মনে করা হচ্ছে। তাই জেল-জুলুম, হামলা-মামলাসহ নানা হয়রানি সত্ত্বেও ইউপি নির্বাচনে লড়তে তৃণমূলের হাজার হাজার নেতা-কর্মী দৌঁড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। ধানের শীষ প্রতীক পেতে কেন্দ্রে যোগাযোগ রাখছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এলাকায় গণসংযোগও শুরু করে দিয়েছেন অনেকেই। বিএনপির প্রভাবশালী নেতাদের বাসায় বাসায় যোগাযোগ বাড়িয়েছেন সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনেই বিএনপি অংশ নেবে। অতীতেও অংশ নিয়েছে। আমরা জানি, এ সরকারের আমলে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তারপরও দেশের স্বার্থে গণতন্ত্রের স্বার্থে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে আমরা অংশ নেবো।’ নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, আগামী মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে সারা দেশে প্রায় সাড়ে চার হাজার ইউপিতে ভোট করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে মার্চে প্রায় ৭০০ এবং বাকিগুলো ধাপে ধাপে অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া মার্চে ২০টির মতো পৌরসভা নির্বাচনও হবে। পৌরসভার মতোই প্রথমবার ইউপি চেয়ারম্যান পদে দলীয়ভাবে ভোট নেয়া হবে। এতে ইসির নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা দলীয় প্রতীকে অংশ নিতে পারবেন। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্দলীয় ব্যক্তিদের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকছে।
জানা গেছে, ভোট ডাকাতির শঙ্কা সত্ত্বেও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে (ইউপি) লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। ইউপি চেয়ারম্যান পদে সারা দেশে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা গ্রহণের কাজ চলছে। পৌর নির্বাচনে অংশ নিতে গিয়ে ইউপি নিয়েও কার্যক্রম এগিয়ে নেয়া হয়েছে বলে বিএনপি জানায়। এ নিয়ে খুব শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করবে বিএনপি।
তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির হাইকমান্ডের সবুজ সংকেত নিয়ে ইউপি প্রার্থীদের অনেকেই মাঠপর্যায়ে গিয়ে প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে গণসংযোগ শুরু করেছেন। তফসিল ঘোষণার পরপরই আটঘাট বেঁধে মাঠে নামবেন সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। স্থানীয় বিএনপি নেতৃত্বের মন জয় করার চেষ্টাও করছেন প্রার্থীরা। তবে পৌরসভার মতোই প্রতিটি ইউপিতেই বিএনপির একাধিক প্রার্থী প্রচারণা চালাচ্ছেন। পৌরসভার মতো কেউ দলের মনোনয়ন না পেলে বিশাল একটি অংশ বিদ্রোহী হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান বলেন, পৌর নির্বাচনে এ সরকার জনগণের সব আশা-আকাঙ্ক্ষা ধূলিস্যাৎ করে দিয়েছে। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আমরা গণতান্ত্রিক রাজনীতি করি। তাই ভোট কেন্দ্র ছিনতাই করে নিলেও সামনে ইউপিসহ স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে অংশ নেয়ার সক্রিয় বিবেচনা রয়েছে। তবে এ নিয়ে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সিনিয়র নেতাদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।