স্টাফ রিপোর্টার: আগমী মার্চে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করা নিয়ে সরকারের মধ্যে ভিন্ন চিন্তা-ভাবনা চলছে। নির্বাচনের সময় কিছুটা পেছাতে চায় সরকার। সরকারের এমন মনোভাব নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশন বলছে বিদ্যমান আইনের সংশোধন ছাড়া নির্বাচন মার্চ মাস থেকে পেছনোর সুযোগ নেই।
স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মো. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, নির্বাচন পেছানোর কথা ভাবনায় রয়েছে। তবে এটি নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার। বিদ্যমান আইনের সংশোধন বর্তমান অধিবেশন চলাকালে প্রায় অসম্ভব। করতে হলে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে করতে হবে। তবে নির্বাচন কমিশন যদি কয়েক ধাপে নির্বাচন করে ফেলতে পারে তাতে সরকারের আপত্তি নেই।
দায়িত্বশীল সূত্র স্বীকার করেছে নির্বাচন পেছনোর জন্য নির্বাচন কমিশনকে স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ বলেছেন, বিদ্যমান আইনে মার্চে বেশকিছু ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সরকার চাইলে আইন সংশোধন করতে পারে। সরকারি দল অবশ্য নির্বাচনী প্রস্তুতিও রাখছে। ইতোমধ্যে দলটি প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রার্থিতা নির্ধারণের পদ্ধতি ঘোষণা করেছে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগ প্রার্থিতা নির্ধারণ করবে। এ ক্ষেত্রে লিখিতভাবে এমপির ভূমিকা রাখা হয়নি। যদিও এমপিরাই মুখ্য ভূমিকায় থাকবেন।
আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের একজন দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, পৌর নির্বাচনের ফলাফল অনুকূলে আনতে দলীয় প্রতীক অনেককে সহায়তা করেছে। প্রশাসনও ইতিবাচক আচরণ করেছে অনেক ক্ষেত্রে দলীয় প্রতীকের কারণেই। সেজন্য ইউপিতে দলীয় প্রতীক পেলেই জয়- সম্ভব এমন ধারণা নিয়ে অনেকেই আগাম দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন। এতে মনোনয়ন বাণিজ্যের অবাধ সুযোগ যাতে তৈরি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হচ্ছে দলকে। তবে শেষ পর্যন্ত তা ঠেকানো সম্ভব হবে কি-না সেটি নিয়ে নিশ্চিত নয় দলীয় হাই কমান্ড।
প্রসঙ্গত, ২৯ মার্চের মধ্যে ৭৭২টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন শেষ করতে হবে। আইন অনুযায়ী কোনো পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর অভিমত হচ্ছে পূর্ববর্তী সময়ে নির্বাচন হলে একই পরিষদে দুজন চেয়ারম্যান বা দুজন করে মেম্বার হয়ে যাচ্ছেন। একজন চেয়ারে বসে কাজ করছেন অপরজন শপথ নিয়ে চেয়ারের অপেক্ষায় থাকছেন। এরকম অবস্থা ইউনিয়র পরিষদ থেকে দূর করার প্রক্রিয়া শুরু করা যায় কি-না সে ভাবনা আছে। তবে সবকিছু নির্বাচন কমিশন যেভাবে করতে চায় করতে পারে।
অপর একাধিক সূত্র অবশ্য জানায়, বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ অব্যাহত আছে। সবুজ সংকেত পেলেই ইসি পুরোদমে নির্বাচনী কাজে নেমে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সূত্র অবশ্য জানিয়েছে মার্চে নির্বাচন হলে তাতে ওই অফিসের পক্ষ থেকে আপত্তি নেই বলে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়। নির্বাচন পেছাবে কী না সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পেতে কয়েকদিন অপেক্ষা করার কথা বলছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
সূত্র জানায়, বেশকিছু বিষয় মাথায় নিয়ে নির্বাচন পেছনোর কথা ভাবছে সরকার। এরমধ্যে সরকারি দল আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল, বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল উল্লেখযোগ্য। এছাড়া এ সময়ে আইন-শৃংখলা বাহিনী নির্বাচনী কাজে সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করতে পারবে কি-না সেটিও বিবেচনায় রয়েছে। নানাদিকের খবর আছে মার্চের দিকে বাংলাদেশকে ঘিরে সন্ত্রাসী চক্র সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। যার প্রভাব নির্বাচনী মাঠেও পড়তে পারে। পাশাপাশি সরকার চাইছে নির্বাচনের অজুহাতে বিএনপি যাতে কাউন্সিল পিছাতে না পারে। তাদের ধারণা কাউন্সিল হলে বিএনপিতে বিভক্তি আসতে পারে। যা সরকারের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করতে।
ইসি সূত্র বলছে, আগামী ফেরুয়ারি মাসের দ্বিতীয়ার্ধে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি চলছে। তবে পুরো নির্বাচন নির্দলীয় ভিত্তিতে করার চিন্তাও সরকারের ভেতরে সক্রিয় রয়েছে। এসব চিন্তা মাথায় রেখে কমিশন ইতোমধ্যে নির্বাচন আচরণ বিধি ও নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার খসড়া প্রস্তুত করেছে। এ মাসেই কমিশনের সভায় অনুমোদনের পর তা ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এ বিষয়ে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, পৌরসভা নির্বাচনের মতো বিধিমালা করা হবে ইউপিতেও। গত ১ অক্টোবর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ৪ হাজার ৫৫৩টি ইউনিয়ন পরিষদের তালিকা, শপথ ও পরিষদের প্রথম সভার তারিখসহ প্রয়োজনীয় তথ্য পাঠিয়েছিল কমিশনে। এ তালিকা থেকে নির্বাচন করতে ৪ হাজার ৫৪৪টি ইউনিয়ন পরিষদের তালিকা পাঠানো হয়। এই ৪ হাজার ৫৪৪টি ইউপির মধ্যে কয়েক ধাপে নির্বাচনের জন্য ইসির পক্ষ থেকে তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।
বর্তমানে দেশে ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। সর্বশেষ ২০১১ সালে হুদা কমিশন ৪ হাজার ৫০১টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করে। ওই বছরের ২৯ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল উপকূলীয় ২৪ উপজেলার প্রায় ৬০০ ইউনিয়ন পরিষদে এবং ৩১ মে থেকে ৫ জুলাই দেশের বাকি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯-এর ২৯(৩) ধারা অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তারিখ পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিধান রয়েছে। এ হিসাবে ২৯ মার্চের আগের ১৮০ দিন অর্থাত গত বছরের ২ অক্টোবর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।