আলমডাঙ্গার শান্তি নিকেতন ছাত্রাবাস থেকে অপহৃত কলেজছাত্র রনি রাজশাহী থেকে উদ্ধার

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গার শান্তি নিকেতন ছাত্রাবাস থেকে অপহৃত কলেজছাত্র রনি ওরফে মুন্নুকে গতকাল গভীর রাতে রাজশাহী থেকে পুলিশ উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে। গত সোমবার রনিকে জিম্মি করে অজ্ঞাত স্থান থেকে একই ছাত্রাবাসে অবস্থানকারী রাজশাহী এলাকার রিংকু মোবাইলফোনে অপহৃত রনির পিতার নিকট সোয়া লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। গতকাল অপহরকরা রনিকে শহরে এক হোটেলে খাওয়াতে নিয়ে গেলে রনি কৌশলে পালিয়ে রাজশাহী শহরের এক ড্রাইভারের বাড়িতে আশ্রয় নেয়।
জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার সকালে আলমডাঙ্গা থানার এসআই আসাদুজ্জামান সঙ্গীয় ফোর্সসহ মাইক্রোবাস নিয়ে অপহৃত রনিকে উদ্ধার করতে রাজশাহীর উদ্দেশে পাড়ি জমায়। রাত প্রায় পৌণে ১২টার দিকে পুলিশ রনিকে নিয়ে থানায় ফিরে আসে।
উল্লেখ্য, আলমডাঙ্গা উপজেলার ঘোলদাড়ি-পাইকপাড়া গ্রামের তোফাজ্জেল হোসেনের ছেলে রনি ওরফে মুন্নু (১৬) আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি ১ম বর্ষের ছাত্র। সে আলমডাঙ্গা কলেজপাড়ায় অবস্থিত শান্তি নিকেতন ছাত্রাবাসে অবস্থান করে কলেজে লেখাপড়া করতো। একই ছাত্রাবাসে অবস্থান করে আসছিলো রাজশাহীর রাজপাড়া উপজেলার সিপাহীপাড়ার মৃত আবুল কালাম আজাদের ছেলে রিংকু নামের এক বখে যাওয়া নেশাসক্ত যুবক। সে শহরের আনন্দধামের একটি ক্লিনিকের প্যাথলজিতে (রক্ত পরীক্ষা) চাকরি করতো। গত সোমবার সকালে বাইরে ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়ে রনিকে ছাত্রাবাস থেকে ডেকে নেয় রিংকু। সারা দিন পর বিকেলে রনির মোবাইলফোন থেকে রনির পিতা তোফাজ্জেলকে ফোন করে রিংকু জানায়- রনি এখন তাদের হাতে আটক। ছেলেকে ফিরে পেতে চাইলে দ্রুত সোয়া ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। ওই মোবাইল নম্বরে রিং দিলে অপহরকচক্র তাৎক্ষণিকভাবে ৫ হাজার টাকা দিতে বলে। বাকি টাকা সকালে। তাদের দাবি মোতাবেক ৫ হাজার টাকা বিকাশ করে তোফাজ্জেল হোসেন। একটু পরে আবারও রনির মোবাইলফোনসেট ব্যবহার করে রিংকু তোফাজ্জেল হোসেনকে জানায়- তাদের ডেরা থেকে রনি পালিয়েছে। তবে রনিকে ধরার জন্য তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে, তোফাজ্জেল হোসেন জানায়, চাঁদার দাবিতে ইতোপূর্বে তার বাড়িতে ২ বার বোমা হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। তার ধারণা ওই চাঁদাবাজচক্র নেশাসক্ত রিংকুকে ব্যবহার করে এ অপহরণের ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ঘটনায় তিনি গত পরশু রাতে আলমডাঙ্গা থানায় লিখিত এজাহার দায়ের করেন।
উদ্ধারকৃত রনিকে গভীর রাতে আলমডাঙ্গা থানায় উপস্থিত করা হলে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে রনি জানায়- রিংকুর নিকট সে ২ হাজার টাকা পেতো। পাওনা টাকার জন্য তাগাদা দেয়ার এক পর্যায়ে রিংকু গত সোমবার সকালে তাকে আলমডাঙ্গা শহরের অদূরে পারলক্ষ্মীপুর গ্রামে তার ফুফুবাড়ি নিয়ে যায় টাকা ফুফুর নিকট থেকে নিয়ে দেয়ার জন্য। ফুফুকে বাড়ি না পেয়ে রিংকু জানায় ফুফু কুষ্টিয়ায়। চলো কুষ্টিয়ায় গিয়ে টাকা দেবো। ধুরন্ধর রিংকুর প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে তারা দুজনে আলমডাঙ্গা স্টেশনে যায়। সেখান থেকে রাজশাহীগামী ট্রেনে করে রনিকে রাজশাহী শহরের জিরো পয়েন্টে অবস্থিত হামিদিয়া গ্রান্ড হোটেলে নিয়ে যায়। পরে পদ্মাপাড়ে নিয়ে ভয় দেখিয়ে রনিকে দিয়ে তার পিতার কাছে ফোন করায়। সে সময় রিংকুর দাবিকৃত মুক্তিপণের টাকার কথাও বলতে বলে। তাৎক্ষণিকভাবে রনির পিতা ৫ হাজার টাকা দিলে সে টাকা তুলে নিয়ে রিংকু তাকেসহ একটা হোটেলে খাওয়ার জন্য ঢোকে। সে সময় রনি হাতমুখ ধোয়ার নাম করে কৌশলে পালিয়ে গিয়ে রাস্তার এক চলন্ত অটোতে উঠে পড়ে। রাজশাহী শহরের ছোট মসজিদ মোড়ের মৃত মেছের আলীর ছেলে অটো ড্রাইভার রুবেল তাকে নিজ বাড়িতে আশ্রয় দেন।
আলমডাঙ্গা থানার এসআই আসাদ জানিয়েছেন, অটো ড্রাইভারের বাসায় রনির অবস্থানের সংবাদ পেয়ে ওই রাতেই তিনি রাজশাহী বোয়ালিয়া থানায় যোগাযোগ করেন। বোয়ালিয়া থানা পুলিশ রনিকে রাতেই উদ্ধার করে থানা হেফাজতে রাখেন। গতকাল রাতে এসআই আসাদ বোয়ালিয়া থানা থেকে রনিকে সাথে নিয়ে আলমডাঙ্গা থানায় ফেরেন।