স্টাফ রিপোর্টার: তবে কি ধীরে ধীরে টি-টোয়েন্টি ধাঁধার জট খুলতে শুরু করল বাংলাদেশ? প্রথম যখন এই খেলাটি আসে, ভাবা হয়েছিলো, এটাই তো বাংলাদেশের খেলা। শুরু থেকে অতি আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলে আসা বাংলাদেশ শুরুটাও করেছিলো আশা জাগানিয়া। কিন্তু পরে পরিষ্কার হয়ে গেছে, দ্রুতগতির এ ক্রিকেটে পাল্লা দিয়ে বদলে যাওয়া পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে হলে অভিজ্ঞতা চাই। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের রেকর্ড মোটের ওপর আফগানিস্তানের চেয়েও খারাপ।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে গত টি-টোয়েন্টি সিরিজ ড্র করলেও এবার প্রথম দু ম্যাচেই দাপুটে জয়। সামনে পড়ে আছে আরও দু ম্যাচ। টানা দু ম্যাচে স্বস্তির জয় পেলেও মাশরাফি বিন মুর্তজা যেন পুরো তৃপ্ত নন। দু ম্যাচেই বাংলাদেশ ছোটখাটো বেশ কিছু ভুল করেছে। আর টি-টোয়েন্টি এমনই এক খেলা, এখানে ছোট্ট একটি ভুলেরও দিতে হতে পারে বড় মাশুল। একটা ক্যাচ ফেলাই হয়ে যেতে পারে ম্যাচের ফল নির্ধারক। মাশরাফির এক ওভারেই ক্যাচ পড়েছে দুবার! সামনে এশিয়া কাপ, যেটি এবার টি-টোয়েন্টি সংস্করণে হবে। এর পরপরই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। টি-টোয়েন্টির বড় মিশন আছে বলেই আপাতত চোখের সামনে প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে হলেও বাংলাদেশ অধিনায়কের ভাবনায় আসলে সেই বড় ম্যাচগুলোই। মাশরাফি ভালো করেই জানেন, এ ধরনের ভুল বড় ম্যাচে করার সুযোগ নেই।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ শেষেই যে কোমর কষে লাগতে হবে এশিয়া কাপ আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে। সেখানে অপেক্ষা করছে আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ। মাশরাফির কণ্ঠে তাই আরও উন্নতি করার তাগিদটা খুব স্পষ্ট, ‘ভালো হয়েছে অবশ্যই। দলগতভাবে আমরা বোলিংটা ভালো করেছি। ব্যাটিংটাও খারাপ হয়নি। হয়তো বা কিছু উইকেট পড়ে গেছে, সেট হয়ে যেখানে আরও বড় ইনিংস খেলা যেত, এই জায়গাগুলো ঠিক করতেই হবে। কারণ আরও বড় চ্যালেঞ্জ যখন আসবে, তখন যে ত্রিশ-চল্লিশ করবে তাকে আরেকটু বড় ইনিংস খেলতে হবে। কিছু জায়গা আছে সব সময়ই উন্নতি করা যায়।’ গতকাল এক সময় জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের রানে বাঁধই তুলতে পারছিল না বাংলাদেশের বোলাররা। এর আগে ব্যাটিংয়ে সেট হয়েও তামিম-সৌম্যরা ইনিংসটা টেনে নিয়ে যেতে পারেননি। টি-টোয়েন্টির খেলা মানেই প্রতি বলেই মেরে খেলার চেষ্টা করতে হবে, এমন নয়। ক্রিকেটে এক-দুই রান নিয়ে স্ট্রাইক সচল রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাল বাংলাদেশের ৪৫ রানের উদ্বোধনী জুটির কথাই ধরুন। ৩৩ বলে ৪৫ তোলা ওই জুটিটায় ৩৬ রানই এসেছে চার-ছক্কা থেকে। এরই মধ্যে ১৭টি ডট বল খেলেছে বাংলাদেশ, মানে কিনা প্রায় তিন ওভার! সিঙ্গেলস থেকে রান নিয়েছে ৭টি। বেশি ডট বল খেলা হলে ব্যাটসম্যানের ওপর মানসিক চাপ বেড়ে যায়। ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতাও বাড়ে। বাউন্ডারির চেয়ে সিঙ্গেলস নেওয়ার প্রতিই তাই জোর দিতে চান অধিনায়কও, ‘টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে খেলা কখনোই নিখুঁত হয় না। কখনো কখনো দেখা যায় ব্যাটিংয়ের সময় সিঙ্গেলস কমে যাচ্ছে। তখন সেটা বাউন্ডারি মেরে পূরণ করতে হয়। তবে সিঙ্গেলস যতটা নেওয়া যায় ততই ভালো। এক-দুইয়ের সাথে বাড়তি কয়েকটা বাউন্ডারি এলে সংগ্রহটা অনেক বড় হয়ে যায়। আমাদের লক্ষ্যটা, মনোযোগটা এখানেই। নিখুঁতভাবে টি-টোয়েন্টি খেলাটা কঠিন হলেও উন্নতির জায়গা কিন্তু থেকেই যায়।’ বাংলাদেশের শক্তির জায়গা ছিল ফিল্ডিং। প্রথম দুই ম্যাচে এখানে পুরো নম্বর পায়নি দল। প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে বলেই হয়তো সেটির চড়া মাশুল গুনতে হয়নি। তবে বড় টুর্নামেন্টে ভাগ্য অতটা সুপ্রসন্ন হবে না। কাল তো একবার খেপেও গিয়েছিলেন মাশরাফি। বড় ভাইয়ের শাসন করে দিয়েছেন। অধিনায়ক বললেন, ‘ফিল্ডিং এমন একটা জিনিস, যেটা চাইলে উন্নতি অবশ্যই করা যায়। আমরা চেষ্টা করছি। তবে একদিনে উন্নতি করা তো অবশ্যই কঠিন। চেষ্টা করাটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমার বিশ্বাস এভাবে চেষ্টা করে গেলে একটা সময়ে আমরা ভালো করব। ক্যাচ না ফেলাটা টি-টোয়েন্টিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এমন ভুল হতেই পারে। সেটি যেন আর না হয় সেই চেষ্টা আর মানসিকতা থাকতে হবে। তৃপ্তির চেয়ে আরও উন্নতি করার ক্ষুধাটাই সতীর্থদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চান অধিনায়ক। সামনে যে কঠিন পরীক্ষা!