ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: কর্মহীন কর্মীদের নীতি বহির্ভূত কর্মকাণ্ড, অর্থের বিনিময়ে ভোট বিক্রি, দুর্বল সাংগঠনিক অবস্থা, কর্মীদের মানহীন নৈতিক আচরণ, মাঠপর্যায়ে নেতাদের প্রতি কর্মীদের ক্ষোভ, প্রার্থী ও সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের নেতৃত্বের দুর্বলতার কারণে সদ্য সমাপ্ত কোটচাঁদপুর পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর ভরাডুবি হয়েছে বলে রাজনৈতিক অভিজ্ঞ ও সুধীমহল মনে করছেন। নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হওয়ার পর দলীয় নেতা কর্মীরা মাঠে নামলেও দলের বৃহত একটি অংশ দলের সাথে থেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহিদুল ইসলাম জিরের হয়ে কাজ করেছেন। কর্মীদের মনোবল ভাঙতে এ অংশটি নানা অপতৎপরতা চালাতে থাকে। তারা প্রকাশ্যে ও গোপনে দলীয় প্রার্থীকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করে সাধারণ কর্মী ও ভোটারদের মনে চিড় ধরায়। তাছাড়া দলীয় মনোনয়ন পেতে বিলম্ব হওয়ার কারণে প্রতিপক্ষ প্রার্থীরা যখন মাঠ প্রস্তুতের কাজ সেরে ফেলেছেন তখন আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে ঝিনাইদহ, ঢাকাসহ বিভিন্ন নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ঘুরে কালক্ষেপণ করতে হয়েছে। তাছাড়া দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগের উপজেলা ও পৌর কমিটি যথাক্রমে প্রায় এক ও দেড় যুগ ধরে স্থবির হয়ে পড়ে রয়েছে। পৌর কমিটি বিগত প্রায় দেড় যুগে একাধিকবার আহ্বায়ক কমিটি করা হলেও ওয়ার্ড ও গ্রাম পর্যায়ে কোন কমিটি নেই। নেতারা ব্যক্তি পছন্দের কতিপয় লোক নিয়ে দীর্ঘ সময় রাজনীতি করে আসছেন। তাদের সাথে থাকা এসকল কর্মী ব্যক্তিপূজা ছাড়া রাজনৈতিক আদর্শগত কোন চেতনা না থাকার কারণে দলীয় অবস্থান নড়বড়ে অবস্থায় চলছে। দলের এ দৈন্যদশার কারণে নতুন প্রজন্মের শিক্ষিত, দক্ষ ও নিবেদিত যুবকরা এ দল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
২০০৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী অ্যাড. শফিকুল আজম খান চঞ্চল সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচনে জয়লাভ করার পর তিনি দলীয় পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে নিজ আত্মীয় স্বজন ও তার পছন্দের লোক ও দলের বাইরের কিছু লোকজন নিয়ে বেপরোয়া অরাজনৈতিক কাজকর্ম করার কারণে দলীয় অবস্থান তলানীতে পৌঁছায়। বর্তমান সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ নবী নেওয়াজ সাবেক এমপির থেকেও বেপরোয়াভাবে দলছুট কিছু নেতাকর্মী ও নিজ আত্মীয় স্বজন নিয়ে সমানে অর্থ বাণিজ্য ও দলীয় স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার কারণে বর্তমানে স্থানীয় রাজনীতি ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি বিগত বার বছরেও অনুমোদিত হয়নি। প্রস্তাবিত কমিটিতে থাকা নেতাদের ইতোমধ্যে এক ডজনের বেশি নেতাকর্মী মৃত্যুবরণ করেছেন। বাকিরা রয়েছেন নিস্ক্রীয়। উপজেলা কমিটির সভাপতি, সম্পাদক তাদের পদ পদবী ঠেকাতে কখনো কখনো নড়েচড়ে বসেন। তারপর লগ্ন পার হলেই নিরব হয়ে পড়েন। নেতাদের দেখভালোর অভাবে যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সকল সহযোগী সংগঠনের কর্মকাণ্ডেও ভাটা পড়েছে। ২০১০ সালের অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মেয়র সালাহউদ্দীন বুলবুল সিডলের পক্ষে তৎকালীন এমপিসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা কাজ করার করণে দলের মধ্যে বড় ধরনের ভাঙন সৃষ্টি হয়। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কাজী আলমগীর মাত্র ৭৮৫ ভোট পেয়ে জামানত হারান। সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে কথিত নেতাদের পুতুল খেলার কারণে দল আজ কর্মী শূন্য। আর এ সকল অপতৎপরতার কারণেই দলীয় প্রার্থী শহিদুজ্জামান সেলিমের পরাজয় বরণ করতে হয়েছে বলে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা মনে করছেন। কোটচাঁদপুরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের দলীয় ভোট সব দলের চেয়ে বেশি হওয়ার পরও এ সকল কথিত নেতার ভেল্কিবাজির কারণে গত ২৫ বছরেও মেয়র নামক সোনার হরিণটি ছুঁতে পারেনি আওয়ামী লীগ।