সমাজের প্রথা মেনে চলার বাধ্যবাধকতা থাকলেও রশি দিয়ে বেঁধে পিটুনির প্রথা কোনো সভ্যতা সমর্থন করে না। আইন? অবশ্যই আইনে কাউকে কোনো অবস্থাতেই ধরে নির্যাতনের সুযোগ রাখেনি। এরপরও নারী-পুরুষকে ধরে নির্যাতন কেন? মানুষ হয়ে মানুষের ওপর ওইভাবে নির্যাতনের উৎসবে মেতে ওঠার মধ্যেও নিশ্চয় তৃপ্তি আছে, আছে মজা। তা না হলে একজন নারীকে পরপুরুষের সাথে একটি ঘরে পেয়ে রশি দিয়ে বেঁধে কেউ মারপিট করে? একটি অন্যায় রুখতে গিয়ে আরেকটি অন্যায়।
বিয়ে বর্হিভূত দৈহিক সম্পর্ক সমাজের দৃষ্টিতে যেমন অন্যায়, তেমনই আইনের দৃষ্টিতেও। অবশ্য ওই অপরাধ দেশের প্রচলিত আইনের দৃষ্টিতে যতোটা নয়, তার চেয়ে অধিক গুরুতর হয়ে দাঁড়ায় সমাজের কারো কারো কাছে। কেন? আঁতে ঘা লাগার মতো নানা জবাব আছে বটে। বলা মুশকিল।
মৌলিক চাহিদার পরই জৈবিক চাহিদা কোনোভাবেই অস্বীকার করার জো নেই। যদিও যা কিছু গোপন তা নিয়ে অতো খোলামেলা আলোচনায় আগ্রহী নন বোদ্ধাদের একাংশ। তারপরও যে সমস্যা সমাজের, যে সমস্যা গোপন করে সমাধান মেলে না, সেই সমস্যাও আড়াল করা মানে সমস্যা সমাধানের চেয়ে তা জিইয়ে রাখা। মূলত সে কারণেই ‘আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়ে পিটুনির পর বিয়ের বিয়ের পিঁড়িতে’ ‘রঙ্গলীলায় মত্ত জুটিকে ধরে সালিসে বসিয়েছে বেরসিক জনতা’ এরকম নানা শিরোনামে খবর আঞ্চলিক ও স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় ঠাঁই পায়। যদিও দৈনিক মাথাভাঙ্গার সম্পাদনা পরিষদে এ ধরনের সংবাদ পরিবেশন নীতিমালা বহির্ভূত-ই। তবুও প্রকাশ করা হয় কেন? বদনাম হবে জেনে। কী রকম? ওইসব খবর ওরাই বেশি চান, যারা ধরে মজা দেখার উৎসবে মেতে ওঠেন। প্রকাশ করা না হলে অর্থ নিয়ে খবরটা চেপে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে। মূলত সমাজের এই চরম বাস্তবতার কাছে অসহায় আত্মসমর্পণেরই অপর নাম ওই ধরনের খবর প্রকাশ। আর কারা ধরে, ধরে কারা মাতে? সর্বক্ষেত্রে শতভাগ সঠিক না হলেও সুষ্ঠু তদন্ত হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাবে, তারাই অতি উৎসাহী, যারা ভাবে আমি থাকতে অন্যজন কেন? সালিসের নামে নির্যাতন? মাতবরদের মধ্যে মধ্যযুগীয় মানসিকতা লালন।
সমাজ কেন অসামাজিক কর্মকাণ্ড মেনে নেবে? তবে সমাজেরও তো বয়স হয়েছে! সমাজকেও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়া দরকার। আসামাজিক কর্মকাণ্ড করলে তাকে ধরে পুলিশে খবর দেয়া যেতেই পারে। তাই বলে গাছে বেঁধে নির্যাতনকে তো আর সমর্থন করা যায় না।
অবশ্যই বিয়ে বহির্ভূত দৈহিক সম্পর্ক কাম্য নয়। বহুগামী মানসিকতা সকলের মধ্যে যেমন নেই, তেমনই বহুগামিতা জন্মগতও নয়। রুচি, পরিবেশগত, শারীরিক চাহিদাসহ নানা বিষয় লুকিয়ে থাকতেই পারে। ধৈর্য, সহনশীল যেমন একজনকে সুপথে থাকতে সহায়ক, তেমনই সমাজের সকলকেই সহিঞ্চু হওয়াও বাঞ্ছনীয়। অন্যায়কে মেনে নিয়ে নয়, অন্যায় রুখতে আর একটি অন্যায়ও নয়। সমাজকে সুন্দর করতে হলে সমাজের সমস্যার কারণ শনাক্ত করে দিতে হবে সঠিক দাওয়াই।