অনৈতিক কাজের অভিযোগ তুলে ধর্ম শ্যালিকা-দুলাভাইকে মধ্যযুগীয় নির্যাতন

আলমডাঙ্গার জোড়গাছায় প্রবাসীর স্ত্রীকে জোরপূর্বক তালাক দিইয়ে বাধ্য করা হলো দ্বিতীয় বিয়েতে
স্টাফ রিপোর্টার: অনৈতিক কাজের অভিযোগ তুলে দুজনকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়েছে। এতেই ক্ষান্ত হননি নামধারী কিছু নেতা ও গ্রামের মাতবররা। তারা দুজনের ঘর ভেঙে দু সন্তানের জনক ওয়াসের আলী ও প্রবাসীর স্ত্রী এক সন্তানের জননী রাফেজাকে জোরপূর্বক বিয়ে দিয়েছেন। অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে আলমডাঙ্গা উপজেলার জোড়গাছা গ্রামে।
গ্রামবাসীসূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার পোতারপাড়া গ্রামের আজিবর মিস্ত্রির ছেলে দু সন্তানের জনক ওয়াসের আলী (৩৪) বিচালি কেনার সুবাদে মাসখানেক আগে আলমডাঙ্গা উপজেলার জোড়গাছা গ্রামে যান। গ্রামের গাছতলাপাড়ার মালয়েশিয়া প্রবাসী শিলনের স্ত্রী এক সন্তানের জননী রাফেজার (৩০) সাথে তার পরিচয় ঘটে। তাদের মধ্যে শ্যালিকা-দুলাভাইয়ের সম্পর্ক তৈরি হয়। এরই মধ্যে গত পরশু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওয়াসের আলী জোড়গাছা গ্রামে এসে রাফেজার বাড়িতে ওঠেন। কয়েকজন সন্দেহ করে। অনৈতিক কাজের অভিযোগ তুলে গভীররাতে তাদেরকে আটক করা হয়। এরপর সারারাত ধরে তাদের ওপর চলে অমানুষিক নির্যাতন। গতকাল শুক্রবার দিনভর তাদেরকে পিঠমোড়া দিয়ে একসাথে বেঁধে রাখা হয়। গালাগালিসহ দুজনের ওপর নির্যাতন চলে। কেউ লাঠিসোঁটা, কেউ বা কিল ঘুষি মেরে জখম করে।
গ্রামের লোকজন জানায়, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ইসমাইল, আব্দুল খালেক, শাহাবুল ও গ্রামের মাতবর মোশারেফ, নূর ইসলাম ও সাজেদ মণ্ডলের উপস্থিতিতে এ ঘটনা ঘটে। কেউ কেউ বলেন তাদের নির্দেশেই ওয়াসের ও রাফেজাকে বেঁধে নির্যাতন চালানো হয়। তবে এ ব্যাপারে শাহাবুলের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা ধরিনি রাফেজার ভাসুর আমানুল্লাহ ধরে বেঁধে রাখে।
গ্রামবাসী আরো জানায়, বিকেলে ওয়াসের ও রাফেজার বিয়ে দেয়া হয়। ঘটনাস্থলেই রাফেজার স্বামীকে জোরপূর্বক তালাক দেয়ানো হয়, সেখানেই তাকে বিয়ে দেয়া হয় ওয়াসের আলীর সাথে। গ্রামবাসী জানায়, গতকাল সকালে ২ লাখ টাকা দেনমোহরে তাদের বিয়ে দেয়া হয়। এছাড়া অনৈতিক কাজের অভিযোগ তুলে রাফেজা ও ওয়াসের আলীকে সালিস বৈঠকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এই জরিমানার টাকা কী হয়েছে তা অবশ্য জানা যায়নি। বিকেলে ওয়াসের আলীর সাথেই রাফেজাকে নববধূ হিসেবে তুলে দেয়া হয়। কিন্তু তার ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে আর তার প্রবাসী স্বামী শিলনের কী হবে? এমন প্রশ্ন তুলে গ্রামের সচেতন অনেকেই বলেছেন, কার ঘরে কে ছিলো তা নিয়ে সামাজিক সালিস হতে পারে, কিন্তু তাদের ওপর মধ্যযুগীয় নির্যাতন চালিয়ে তাদেরকে সমাজে হেয় করা এবং দুজনের ঘর ভেঙে দেয়ার অধিকার কে রাখে? যারা এ ধরনের অমানবিক কাজের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন বলেও তারা মনে করেন।