বর-কনে পক্ষসহ বাবুর্চি ও ডেকোরেটর মালিকের অর্থদণ্ড

গাংনীতে বাল্যবিয়ে বিরোধী পৃথক দুটি স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর জেলায় বাল্যবিয়ে বিরোধী অভিযানে বর-কনে পক্ষের জেল-জরিমানার পর এবার বাবুর্চি ও ডেকোরেটর মালিকের অর্থদণ্ড করলেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল বুধবার মেহেরপুর গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামে বাল্যবিয়ের অনুষ্ঠানে রান্না ও ডেকোরেটরের মালামাল সরবরাহের দায়ে ওই অর্থদণ্ড হয়। এছাড়াও বর-কনেসহ তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয়। একই সাথে অপ্রাপ্ত বয়স্ক এক কনেকে স্বামীর সংসার থেকে পিতার সংসারে ফেরত পাঠানেরা আদেশ দেন গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবুল আমিনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সাহারবাটি গ্রামের আরশেদ আলীর মেয়ে গাংনী মহিলা ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী রজনী খাতুনের বিয়ের আয়োজন করা হয় সদর উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের আদিল নামের এক যুবকের সাথে। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল আমিন কনের বাড়িতে অভিযান চালান। এ সময় বর-কনে ও কনের পিতা-মাতাকে ৪ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বাল্যবিয়ের অনুষ্ঠানে রান্নাবান্না করায় সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের বাবুর্চি সিরাজুল ইসলামকে এক হাজার টাকা এবং গাংনী ভাইবোন ডেকোরেটর মালিকের কাছ থেকে ৫শ টাকা জরিমানা আদায় করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এদিকে একই ভ্রাম্যমাণ আদালত দুপুরে গাংনী পৌরসভাধীন শিশিরপাড়া গ্রামের অভিযান চালায়। বাল্যবিয়ের অপরাধে শিশিরপাড়া গ্রামের সাহারুল ইসলাম ও তার পিতামার কাছ থেকে ৪ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন। সাহারুল ইসলামের নববধূ জুগিন্দা গ্রামের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী আফরোজা খাতুনকে তার পিতা-মাতার কাছে ফেরতের নির্দেশ দেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক। এ বিষয়ে নবনির্বাচিত কাউন্সিলর মিজানুর রহমানকে দায়িত্ব দেন তিনি। আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে কনেকে তার পিতার কাছে প্রেরণ না করলে বরের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দেন তিনি। এ সময় গ্রামবাসী আর বাল্যবিয়ে দেবে না বলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে দু হাত তুলে শপথ পাঠ করেন।
এদিকে সাহারুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে বর ও কনে সম্পর্কে পাওয়া যায় মুখরোচক তথ্য। অভিভাবকদের নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণে প্রেমের ফাঁদে পড়ে বাল্যবিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মন্তব্য সচেতন মহলের। কনে আফরোজা অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া হলেও সাহারুলের সাথে তার তৃতীয় বিয়ে হয়েছে। অপরদিকে সাহারুল ইসলামেরও এটি তৃতীয় বিয়ে। গত সোমবার তারা মুজিবনগরের বাগোয়ান ইউপি নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজি) আখলাখ হোসেনের কাছে বিয়ে রেজিস্ট্রি করেন। বাল্যবিয়ে রেজিস্ট্রির অপরাধে আখলাখ হোসেনকেও ভ্রাম্যমাণ আদালতে দণ্ড দেয়ার কথা বলেন ইউএনও।
কনে আফরোজা খাতুন জানান, এর আগে তার বিয়ে হয় আড়পাড়া গ্রামে। সেখানে ডিভোর্স হলে মাস চারেক আগে পাকুড়িয়া গ্রামের এক রাজমিস্ত্রির সাথে বিয়ে হয়। সেখানে ১৫ দিন সংসার করার পর তাকে ডিভোর্স দেয় আফরোজা। এর পেছনে বর্তমান স্বামী সাহারুলের সাথে প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি।
প্রেমের সম্পর্কের বর্ণনা দিতে গিয়ে আফরোজা ও সাহারুল ইসলাম বলেন, সাহারুল ও আফরোজার মোবাইলফোন নম্বর প্রায় একই। শুধু শেষের একটি সংখ্যা ভিন্ন। নিজের নম্বরে ফ্লেক্সি দিতে দিয়ে আফরোজার নম্বরে চলে যায়। এর সূত্র ধরে সাহারুল আফরোজার সাথে মোবাইল আলাপে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এ কারণে আফরোজা দ্বিতীয় স্বামী ছেড়ে সাহারুলের কাছে চলে আসে বলে জানান আফরোজা। সচেতন মহল বলছে, দারিদ্র্যতা, সচেতনতার অভাব, প্রেমসহ সামাজিক নানা কারণে বাল্যবিয়ে হয়। অভিভাবকদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে কিছু ছেলেমেয়ে অতি অল্প বয়সে প্রেমের ফাঁদে পড়ে অজানার উদ্দেশে পাড়ি জমায়। শেষ পর্যন্ত বাল্যবিয়ে করলেও সামাজিক বাস্তবতায় অনেক অভিভাবক তাদের বিয়ে মেনে নেন। তাই প্রেমঘটিত বাল্যবিয়ের বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতনতার বিষয়ে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন মহল।