‘বাংলা বিহার উড়িষ্যার মহান অধিপতি…’ জমকালো নবাবী পোশাক ও ভরাট গলার আওয়াজ কিংবা সুরেলা কণ্ঠে ‘ও দায়মা কিসের বাদ্য বাজে গো…’ গানের কলি এখন আর শোনা যায় না মফস্বলের যাত্রা মঞ্চে। সত্তর থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত বেশ প্রভাব ছিল এসব বিনোদন অনুষ্ঠান যাত্রাপালার। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে যাত্রাপালার অতীত ইতিহাস। দুর্দিনের কারণে গাংনীর যাত্রাশিল্পীদের অনেকেই এখন চা দোকানী।
গাংনী উপজেলার যাত্রাশিল্পী আশা এক সময় দেশের বিভিন্ন যাত্রাপালায় মঞ্চ কাঁপিয়ে বেড়িয়েছেন অভিনয় করে। কিন্তু অপসংস্কৃতির প্রভাব ও নগ্ন নৃত্যের কারণে যাত্রাপালায় তাদের অভিনয় দেখা যায় কালেভদ্রে। নব্বই দশক পর্যন্ত প্রতিবছর যাত্রা থেকে তারা আয় করতেন এক থেকে দেড় লাখ টাকা। এখন সারা বছর যাত্রা থেকে আয় আসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। জীবন-জীবিকার তাগিদে পেশা বদলে তিনি এখন চায়ের দোকানী। শুধু তিনিই নন, তার মতো এ উপজেলার মিলি, জমির উদ্দীন, কাইয়ুম, রফিকসহ অনেকে এ পেশা বদলেছেন। তাদের অনেকেই এখন চা বিক্রেতা।
শিল্পী আশা জানান, নব্বই দশক পর্যন্ত মানুষের অন্যতম বিনোদনের মাধ্যম ছিল যাত্রাপালা। বেহুলা লখিন্দর, জরিনা সুন্দরী, সিঁথির সিঁদুর, দেবী সুলতানা, বেদের মেয়ে জোসনাসহ বিভিন্ন যাত্রাপালা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসতো মানুষ। টিকিটের বিনিময় তারা দেখতো এসব যাত্রাপালা। তখনো যাত্রায় ছিল নৃত্য। কিন্তু ছিল না অশ্লীলতা। অধিক মুনাফার জন্য যাত্রার আয়োজকরা মঞ্চে অভিনয়ের চেয়ে নগ্ন নৃত্যের আয়োজন করে থাকেন। ফলে শিক্ষিত ও সংস্কৃতিমনা মানুষ যাত্রা থেকে বিমুখ হয়েছেন। যাত্রা শিল্পী কাইয়ুম জানান, আগে যাত্রা পালায় প্রতি অঙ্ক অভিনয়ের পর নর্তকীরা নাচ দেখাতেন। কোনো অশোভনীয় নাচ নয়, তারপরও অভিনয় দেখার জন্য দর্শকরা নাচ দেখতে অপারগতা প্রকাশ করতেন। কিন্তু বর্তমানে অশ্লীলতার কারণে অভিনয় থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। জীবন-জীবিকার তাগিদে তিনি হাসপাতাল গেটে চা বিক্রি করেন।