দেশের চিনিকলগুলোতে উৎপাদিত চিনি বিক্রির বিশেষ উদ্যোগ নিতে লেগে গেল কয়েকটি বছর। কয়েক বছরে যে ক্ষতি হলো তা পোশাবে কীভাবে? এমনিতেই লোকসানের বোঝার চাপে প্রতি বছর। বিরাষ্ট্রীয়করণের ঝুঁকি অক্টোপাশের মতো আষ্টেপিষ্টে। ৪ বছর ধরে চিনি পড়ে থাকলো গোডাউনে, কর্তাদের রহস্যজনক কুম্ভঘুম ভাঙাতে সিবিএ নেতাদেরও তেমন জোরালো কণ্ঠস্বর শোনা গেল না।
চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড দেশের চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের একটি প্রতিষ্ঠান। বিদেশ থেকে চিনি আমদানির কারণে শুধু কেরুজ উৎপাদিত চিনিই নয়, দেশের অন্যান্য রাষ্ট্রীয় চিনিকলগুলোর চিনিও অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে নষ্ট হচ্ছিলো। ৪ মরসুমের ৬৬ কোটি টাকার চিনি অবশেষে বিক্রি হয়েছে। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিনি বিক্রির জন্য মূল্য পুননির্ধারণই শুধু নয়, ক্রেতাদের বিশেষ সুবিধাও ঘোষণা করতে হয়েছে। দেশের রাষ্ট্রীয় বহু শিল্প কলকারখানা বিলুপ্ত হওয়ার জন্য যে বিষয়টি সর্বাধিক দায়ী, তা হলো যথাসময়ে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে না পারা। সে পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণেই হোক, আর শীর্ষ পর্যায়ের কর্তাদের উবরির জন্য অন্যদিকে বাড়তি দৃষ্টি দেয়ার কারণেই হোক, দেশের এ ধরনের ভারি শিল্পের সিদ্ধান্তহীনতার ক্ষতি মেনে নেয়া যায় না। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন, যে সিদ্ধান্ত ৪ বছর আগেই নেয়া যেতো, তা কেন তখন নেয়া হয়নি? বর্তমানের কর্তারা নিশ্চয় দায় এড়াতে পূর্বের কর্তাদের ওপর ছেড়ে দেবেন! অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাই-ই হয়। তারপরও বর্তমান কর্তারা সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্তাদের বুঝিয়ে যে চিনি বিক্রি করতে পেরেছেন, সেজন্য ধন্যবাদ জানাতেই হয়।
শিল্প বেকার সমস্যা ঘোচায়, বয়ে আনে স্বনির্ভরতা। গুরুত্বানুধাবনে পুরোনো শিল্পের আধুনিকায়নের পাশাপাশি নতুন শিল্প স্থাপনে দরকার আন্তরিকতা। কেরুজ চিনিকলের মতো ভারী শিল্প রক্ষার জন্য বাড়তি বুদ্ধির তথা বিচক্ষণ কর্তা দরকার। দরকার সরকারের বাড়তি নজর। জবাবদিহিতা না থাকলে বিচক্ষণ কর্তার কাজে অলসতা আসতে কতোক্ষণ? সোচ্চার হওয়া দরকার সংশ্লিষ্ট সকলকেই।