ঝিনাইদহে হোমিও চিকিৎসক খুনের আড়ালে ধর্মান্তর

স্টাফ রিপোর্টার: ঝিনাইদহে ছুরিকাঘাতে নিহত হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক সমির আলি ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারে কাজ করছিলেন দাবি করে স্থানীয় চার্চের কয়েকজন বলছেন, ওই কারণেই জঙ্গিরা তাকে হত্যা করেছে। অবশ্য সমিরের ছেলের ভাষ্য, তার বাবা মৃত্যুর আগে কোনোদিন ধর্মান্তরিত হননি, ইসলাম ধর্মেই ছিলেন। গতপরশু বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বালেখাল বাজারে নিজের চেম্বারে সমিরের লাশ পাওয়া যায়। অজ্ঞাত পরিচয় দুর্বৃত্তরা তাকে বুকে ছুরি মেরে করে হত্যার পর পালিয়ে যায়। ওইদিন রাতেই মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) ধর্মান্তরিত হওয়ায় সমিরকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলে খবর দেয় জঙ্গি হুমকি পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট সাইট ইনটিলেজেন্স গ্রুপ।
বৃদ্ধ সমির ২০০১ সালে ওয়ানওয়ে চার্চ বাংলাদেশ এর মাধ্যমে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন বলে দাবি করেন চার্চের ঝিনাইদহ এলাকার কো-অর্ডিনেটর হারুন অর রশিদ। তিনি বলেন, সমির খ্রিস্টধর্ম প্রচারে নিয়োজিত ছিলেন। জঙ্গিরা এ কারণেই তাকে হত্যা করেছে। স্থানীয় আলমপুর এজি চার্চের পালক জাহিদ বলছেন, এলাকার প্রায় ৫০০ লোক সমির আলির মাধ্যমে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেছেন। অবশ্য ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি হাসান হাফিজুর রহমানের ভাষ্য, সমির ২০০১ সালে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করলেও পরে আবার ইসলামে ফেরত আসেন। ইসলাম ধর্মে ফিরে এসে চিশতীয়া তরিকার অনুসারী হন সমির। পরে লালনের ভক্ত হন। ওসি হাফিজুরের এই দাবি সত্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন ওয়ানওয়ে চার্চের স্থানীয় সুপারভাইজার পিকুল মাধুরি। তিনি বলেন, গত বড়দিনের প্রার্থনায়ও সমির অংশ নিয়েছিলেন। ৩ জানুয়ারি শহরের পাশের গোপীনাথপুর গ্রামের একটি চার্চের সভায় তিনি ছিলেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, তার জীবন হুমকির মুখে। গত বছরের শেষভাগে রংপুর, দিনাজপুরসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বেশ কয়েকটি জঙ্গি হামলা ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে, যার শিকার হয়েছেন খ্রিস্টান সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মানুষ। পাবনার ঈশ্বরদীর ব্যাপ্টিস্ট মিশনের ‘ফেইথ বাইবেল চার্চ অব গড’ এর ফাদার লুক সরকারকে গলাকেটে হত্যার চেষ্টা, দিনাজপুরে পিয়েরো পারোলারি নামে এক ইতালীয় পাদ্রীকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা, চুয়াডাঙ্গায় স্থানীয় বাউল উৎসবের আয়োজক খুনসহ বেশ কয়েকটি ঘটনার পেছনে পুলিশ জেএমবি জঙ্গিদের হাত থাকার কথা বলেছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে খ্রিস্টান পাদ্রীরা আইএসের নামে হুমকির চিঠিও পেয়েছেন। অবশ্য সমিরের ছেলে মো. মনিরুজ্জামান দাবি করছেন, তার বাবা খ্রিস্টান হননি। বাবা নিয়মিত নামাজ পড়তেন। মুসলমান ছিলেন। সমিরকে সত্যিই জঙ্গিরা হত্যা করেছে নাকি পূর্ব শত্রুতাবশত কেউ এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ওসি হাসান হাফিজুর রহমান।