কুর্শার সেই ঝণ্টুসহ তিন জনের ফাঁসি কার্যকর করা হচ্ছে আজ রাতে

হবি ও আনোয়ারের ফাঁসি একসাথে হলেও ৪৫ মিনিট পর ঝুলবে সেই আশা হত্যা মামলার আসামি ঝণ্টু
নূরুজ্জামান বাপী/কাঞ্চন হালদার: চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর ও কুষ্টিয়া এলাকার এক সময়ের ত্রাস, একাধিক খুন-গুম মামলার আসামি কুর্শার সেই ঝণ্টুসহ ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার রাতে। যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জাসদ নেতা কাজী আরেফ আহমেদসহ ৫ নেতাকে গুলি করে খুন করার দায়ে দেয়া মৃতুদণ্ডাদেশ কার্যকর করার প্রক্রিয়া করেছে যশোর কারা কর্তৃপক্ষ।
মৃত্যদণ্ডপ্রাপ্ত ৩ আসামির ফাঁসি আজ (বৃহস্পতিবার) রাতে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে দু’দফায় কার্যকর করা হবে। সূত্র বলেছে, রাত ১১টায় ফাঁসি হবে কুষ্টিয়ার মিরপুর থানার রাজনগর গ্রামের ইসমাইল হোসেনের পুত্র সাফায়েত হোসেন ওরফে হাবিব ওরফে হবি এবং একই থানার কুরশা গ্রামের উম্মত ডাকাত ওরফে উম্মত মন্ডলের পুত্র আনোয়ার হোসেনের। এর ৪৫ মিনিট পর রাত পৌনে ১২টায় ফাঁসি কার্যকর হবে কুর্শা গ্রামেরই মৃত আবুল হোসেনের ছেলে মো. রাসেদুল ইসলাম ঝন্টু ওরফে আকবরের।
প্রশাসনিক একটি সূত্র জানায়, বিচারিক প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকার পর সর্বশেষ ১৩ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দেন। ১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের কালিদাসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়মাঠে সন্ত্রাসবিরোধী এক জনসভায় চরমপন্থি সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে নির্মমভাবে নিহত হন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কাজী আরেফ আহমেদ, কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সভাপতি লোকমান হোসেন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. ইয়াকুব আলী, স্থানীয় জাসদ নেতা ইসরাইল হোসেন ও সমশের মণ্ডল। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সে সময় দেশজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় ও আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
এ মামলার আসামিদের তালিকায় ছিলো চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার কয়রাডাঙ্গার কথিত বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা নূরুজ্জামান নান্টুসহ অনেকে। নান্টুর অবশ্য এ মামলায় কারাদণ্ডাদেশ দেয় আদালত। মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত ৩ আসামির মধ্যে রাশেদুল ইসলাম ঝণ্টু চুয়াডাঙ্গা ফেরিঘাট রোডের উদীয়মান শিল্পপতি আশাবুল হক আশা অপহরণ ও খুন মামলার আসামি ছিলো। তাকে কয়েক দফা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদেও শেষ পর্যন্ত আশার মৃতদেহটি উদ্ধার করা যায়নি। লাগাতারভাবে ঝণ্টুকে নিয়ে দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশে তার বহু অপকর্মের চিত্র প্রকাশ্যে উঠে আসে। অবশেষে কাজী আরেফসহ তিন নেতাকে গুলি করে হত্যা করার দায়ে তাকেসহ আনোয়ার হোসেন ও হাবিবুর রহমান হাবির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার রাতে। ইতোমধ্যেই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের নিকটজনদের শেষ সাক্ষাতের কাজটিও সম্পন্ন করা হয়েছে।
এদিকে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত জাসদ নেতা এয়াকুব আলীর ছেলে ইউসুফ আলী রুশো বলেন, ‘আমার পিতাসহ ৫ নেতার খুনিদের শাস্তি হবে। এতে আমরা খুব খুশি। আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি। তবে এ রায় আরো আগে কার্যকর হওয়া উচিত ছিলো।’ কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মহসিন বলেন, কাজী আরেফ একজন নিঃস্বার্থ ও প্রচারবিমুখ নেতা ছিলেন। তিনি সন্ত্রাস ও সম্প্রদায়িকতামুক্ত দেশ গড়ায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন। তাকে যারা হত্যা করেছে, তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মাধ্যমে সমগ্র দেশবাসী কলঙ্কমুক্ত হবে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার কালিদাসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সন্ত্রাসবিরোধী জনসভায় চরমপন্থিদের ব্রাশফায়ারে প্রাণ হারান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কাজী আরেফ আহমেদ, কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সভাপতি লোকমান হোসেন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইয়াকুব আলী, স্থানীয় জাসদ নেতা ইসরাইল হোসেন ও সমশের মণ্ডল। হত্যাকাণ্ডের ৫ বছর পর ২০০৪ সালের ৩০ আগস্ট কুষ্টিয়া জেলা জজ আদালত এ হত্যা মামলায় ১০ জনের ফাঁসি ও ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। আসামিরা হাইকোর্টে আপিল করলে ২০০৮ সালের ৩১ আগস্ট ১ জন ফাঁসির আসামি ও ১০ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামির শাস্তি মওকুফ করে রায় দেন আদালত। সরকার পক্ষ সুপ্রিম কোর্টে আপিল করলে ২০১১ সালের ৭ আগস্ট হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখে রায় দেন আদালত। হাইকোর্টের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৩ আসামি রিভিউ আবেদন করেন। কিন্তু ১৮ নভেম্বর, ২০১৪ তারিখে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ৩ আসামির রিভিউ আবেদন খারিজ করে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ৫ সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। ফলে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে আর কোনো বাধা নেই। রিভিউ আবেদনের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকির এবং আসামি পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন।