জীবননগর ব্যুরো: চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার বিরোধপূর্ণ গঙ্গাদাসপুর গ্রামের ভূমিহীনপাড়ায় ভয়াবহ বোমা হামলার ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছেন। জীবননগর স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে মোহাম্মদ আলীর মৃত্যুর পর যশোর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে আহত শাহাবুদ্দিন মারা যান। তার স্ত্রী মালেকার জীবনও সঙ্কটাপন্ন রয়েছে বলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন। এ ঘটনায় ২ মহিলাসহ আহত হয়েছেন ৫ জন। গতকাল সোমবার রাত ৭টার দিকে গঙ্গাদাশপুর পূর্বপাড়া ভূমিহীন পরিবারের ওপর ভয়াবহ এ হামলা চালানো হয়। এ ঘটনার পর পলায়নকালে উত্তেজিত গ্রামবাসী মনিরুলের স্ত্রী ইসমত আরাকে (৩৫) ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশসূত্রে জানা যায়, ৬২ ভূমিহীন পরিবারের ১১৬ বিঘা জমি নিয়ে গ্রামের একটি পক্ষের সাথে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। ভূমিহীন পরিবারের নেতৃত্বে রয়েছেন হানেফ আলী ও শাহাবুল ও গোলদার গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছে সীমান্ত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল মালেক মোল্লা। জনশ্রুতি রয়েছে দুপক্ষে রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের দুজন শীর্ষ নেতা।
২০১২ সালে গোলদার গ্রুপ হামলা চালিয়ে ভূমিহীন ৬২টি পরিবারকে বাড়ি ছাড়া করে। এ হামলায় সেসময় উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়। দীর্ঘ ৩ বছর পর হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের নির্দেশে ৬২টি পরিবার গত বছরের জুন মাসে বাড়ি ফিরে বসবাস শুরু করে। এ অবস্থায় গতকাল ভূমিহীন পরিবারের ওপর আবার হামলা চালানো হয়। আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মালেক মোল্লার ছেলে মিল্টন ও রেজাউল গোলদার ওরফে সনুর ছেলে বাদলের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন দুর্বৃত্ত এ হামলা চালায় বলে অভিযোগ করা হয়েছে। হামলাকারীরা শাহাবুদ্দীন ও মোহাম্মদ আলীর বাড়ি এবং হানেফের চার দোকানে একযোগে হামলা চালিয়ে শক্তিশালী ৭টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় এবং পিস্তল দিয়ে ৩ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে। এ সময় ভোজালির আঘাতে মোহাম্মদ আলীর নাড়ি-ভূড়ি বেরিয়ে পড়ে এবং বোমার আঘাতে শাহাবুদ্দিনের ডান পা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুর্বৃত্তরা আহত শাহাবুদ্দিনের ক্ষতিগ্রস্ত পা কেটে নিয়ে যায়। হামলায় আহত হয়েছেন নিহত শাহাবুদ্দিনের স্ত্রী মালেকা খাতুন (৫৫), আবু বকর সিদ্দিক ওরফে কালনার ছেলে মোমিনুর রহমান (৪২), নিহত মোহাম্মদ আলীর ভাই আব্দুল গফুর (৩৫), মৃত ফরজ মণ্ডলের ছেলে আমির হোসেন (৪৪) ও মকছেদ আলীর স্ত্রী সুরাতুন নেছাকে (৮৫) জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। জীবননগর স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তির পর চিকিৎসক মোহাম্মদ আলীকে মৃত ঘোষণা করেন এবং যশোর হাসাপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে শাহাবুদ্দিন মারা যান।
গঙ্গাদাসপুরের বিরোধপূর্ণ ১১৬ বিঘা জমির দখল নিতে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মালেক মোল্লার ছেলে মিল্টন ও রেজাউল গোলদারের ছেলে বাদলের নেতৃত্বে গোলদার গ্রুপের লোকজন এ হামলা চালায় বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এসএসপি সার্কেল সুফি উল্লাহ, ইউএনও নূরুল হাফিজ ও ওসি হুমায়ুন কবীর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। দুজনের মৃত্যুর ঘটনায় গ্রামটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। একই সাথে শোকার্ত মানুষের মাঝে চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে গ্রামটিতে বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে ইউএনও নূরুল হাফিজ বলেন, হামলাকারী সকল আসামির কেউ শাস্তি থেকে রেহাই পাবে না। এসএসপি সার্কেল সুফি উল্লাহ জানিয়েছে, ঘটনার সাথে জড়িত সকলকে গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক টিম অভিযানে নেমেছে। মূল হামলাকারীরা শীঘ্রই ধরা পড়বে বলে তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।