প্রায় ৪ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগে মামলা

৫২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৩/৪শ ব্যক্তি আসামি : ইউপি মেম্বারসহ আটক ২
আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গার যমুনা মাঠে গরুচোর সন্দেহে ৬ জনকে গণপিটুনি ও তাদের নিকট থেকে প্রায় ৪ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ৫২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৩/৪শ’ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল রোববার গরুচোর সন্দেহে গণপিটুনির শিকার দামুঢ়হুদা উপজেলার বড় দুধপাতিলা গ্রামের আব্দুল গাফফার বাদী হয়ে এ এজাহার দায়ের করেছেন। দায়েরকৃত এ মামলার এজাহারভূক্ত আসামি হিসেবে ভোদুয়া গ্রামের ইউপি মেম্বার ও আগে চুরি যাওয়া এক গরুমালিককে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত ২২ ডিসেম্বর দিনগত রাতে অজ্ঞাত সঙ্ঘবদ্ধ চোরচক্র আলমডাঙ্গা উপজেলার ভোদুয়া গ্রামের আঈন উদ্দীন চৌধুরীর ছেলে জিন্নাহ চৌধুরীর প্রায় দেড় লাখ টাকা মূল্যের ২টি গরু ও একই গ্রামের আহাতাব আলীর ছেলে কাদের আলীর প্রায় ৩ লাখ টাকা মূল্যের ৪টি গরু চুরি করে নিয়ে যায়। একই রাতে গ্রামের ৬টি গরু চুরির মতো আতঙ্কজনক ঘটনায় গ্রামবাসী শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা এ ঘটনার পর থেকে রাতে বেশ সতর্ক অবস্থায় ছিলো। গত শুক্রবার গভীর রাতে আলমডাঙ্গা উপজেলার ভোদুয়া গ্রামের কৃষক আমজাদ হোসেন ও রেজাউল হকের একটি করে মোট ২টি গরু সঙ্ঘবদ্ধ চোরচক্র চুরি করে। গ্রামবাসীর হাতে পাকড়াও পিকাপভ্যানের ৫ যাত্রী নিজেদেরকে গরু ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে জানায় তারা গরু কিনতে জয়পুরহাট যাচ্ছে। গরু ব্যবসায়ী পরিচয় পেয়ে গ্রামবাসী ধারণা করে নেয় এরাই গরুচোর। চুরি করা গরু নিতে পিকাপ নিয়ে এসেছে। এমনটা ভেবে নিয়ে গ্রামবাসীরা ড্রাইভারসহ ৬ জনকে গণধোলাই দিতে শুরু করে। এরই মধ্যে বিনোদপুরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের মানুষ এ নির্মম পিটুনিতে যোগ দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে পিকাপভ্যানটিও উদ্ধার করে। এ সময় পিকাপের ভেতর রাখা খড়ের ভেতর থেকে পুলিশ গরুব্যবসায়ীদের ১ লাখ ৭৩ হাজার ১শ টাকা উদ্ধার করে। গণপিটুনির শিকার ৫ জন ব্যক্তি নিজেদেরকে গরুব্যবসায়ী দাবি করে বলেছেন, তাদের নিকট গরু কেনার মোট ৫ লাখ ৬৪ হাজার ২শ টাকা ছিলো। তার মধ্যে উদ্ধার হওয়া টাকা বাদে ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা গণপিটুনিকালে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ ছিনিয়ে নেয়া টাকার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে সংশ্লিষ্ট গ্রামবাসীদেরকে টাকা ফেরত দিতে নির্দেশ দেয়। ছিনিয়ে নেয়া প্রায় ৪ লাখ টাকা উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ গত শনিবার ভোদুয়া গ্রামের বাংলা মেম্বার ও চুরি যাওয়া গরু মালিক একই গ্রামের আমজাদ হোসেনকে আটক করে রাখে। গতকাল রোববার গণপিটুনির শিকার দামুড়হুদা উপজেলার বড় দুধপাতিলা গ্রামের মিনা মণ্ডলের ছেলে আব্দুল গাফফার বাদী হয়ে ওই নির্মম গণপিটুনি ও টাকা ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় ৫২ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ৩/৪শ’ অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে আলমডাঙ্গা থানায় এজাহার দায়ের করেন। ওই মামলার এজাহারভূক্ত আসামি হিসেবে ভোদুয়া গ্রামের এনামুল হক বাংলা মেম্বার ও চুরি যাওয়া গরুর মালিক একই গ্রামের আমজাদ হোসেনকে আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ।
অন্যদিকে, গরুচোর সন্দেহে গণপিটুনির শিকার ৬ জনের মধ্যে পিকাপভ্যানের ড্রাইভার চুয়াডাঙ্গা ইসলামপাড়ার শহিদুল হকের ছেলে শাকিল ও মামলার বাদী আব্দুল গাফফারকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। গণপিটুনির শিকার বাকি ৪ জন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা হয়নি।

Leave a comment