গোয়ালের গরু চুরি সন্দেহভাজনদের গণপিটুনি ও গণ প্রতিনিধি

ট্রাক ভিড়িয়ে গোয়াল থেকে গরু চুরি যে হয় না তা নয়, গোডাউনের ধান চাল চুরিরও উদাহরণ রয়েছে এই জনপদে। ফলে গরু চুরির পর সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ অমূলক নয়। তবে গরুচোর বলে খবর রটিয়ে, মসজিদের মাইকে প্রচার করে এক বা একাধিক ব্যক্তিকে গণপিটুনি দেয়া উদ্দেশ্য প্রণোদিত। চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা-জামজামি সড়কের যমুনারমাঠ নামক স্থান থেকে ছোট ট্রাকসহ ট্রাকচালক, ট্রাক আরোহী মোট ৬ জনকে ধরে যেভাবে পিটুনি দেয়া হয়েছে তা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ বটে। তাছাড়া পিটুনির সময় এক মেম্বারসহ দুজনের বিরুদ্ধে লক্ষাধিক টাকা ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগও উত্থাপন হয়েছে। এ অভিযোগে দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। ছিনিয়ে নেয়া টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে পুলিশের তরফে সাংবাদিকদের জানানো হয়েছে।
প্রায় প্রতি শীতেই চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গরু চুরির হিড়িক পড়ে। এবারও গোয়াল থেকে হালের বলদ চুরির অহরহ খবর পত্রস্থ হচ্ছে। এরই মাঝে আলমডাঙ্গা-জামজামি সড়কের যমুনারমাঠ নামক স্থানে মিনিট্রাকে গরু দেখে সন্দেহ হয়। সন্দেহভাজনদের আটক করে গ্রামবাসীর মাঝে নিয়ে বলা হয়, এরা গরুচোর। মসজিদের মাইকে প্রচার করে গণসমাবেশ ঘটিয়ে তার মাঝে ৬ জনকে ঠেলে দেয়া মানে হত্যারই ষড়যন্ত্র নয়কি? যেহেতু এলাকায় একের পর এক গরু চুরির ঘটনা ঘটছে। যে এলাকায় ৬ জনকে ধরে গরুচোর সন্দেহে পিটুনি দেয়া হয়েছে, সে এলাকার কৃষকের গরু চুরি হয়েছে, সেহেতু হুচুকের বিষয়টিও প্রাসঙ্গিক বটে। মুলত সে কারণেই প্রকৃত ঘটনা উন্মোচনে সুষ্ঠু, স্বচ্ছ্ব তদন্ত প্রয়োজন। টাকা ছিনিয়ে নেয়ার জন্য, বা হাতে পাওয়া লক্ষ্যাধিক টাকা হজম করতেই যদি কোনো জনপ্রতিনিধি পরিকল্পিতভাবে গণপিটুনির আয়োজন করে থাকে তা হলে তার উচিত শাস্তি সমাজের সার্থেই অনিবার্য। আর যদি গরুব্যবসায়ী সেজে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সুযোগ খোঁজে কোনো চক্র তাহলে তাদেরও মুখোশ উন্মোচন করে উপযুক্ত শাস্তি দেয়া প্রয়োজন।
কখনোই কাউকে গণপিটুনি দেয়া উচিত নয়। কেউ কোনো অপরাধ করলেও তাকে আইনে সোপর্দ না করে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া গুরুতর অপরাধ। এরপরও কেন গণপিটুনির ঘটনা বাড়ছে, কেন বন্ধ হচ্ছে না গরু চুরিসহ অপরাধীদের অপতৎপরতা? এসব প্রশ্নের আড়ালেই সুক্ষ্মভাবে লুকিয়ে আছে যেটা, সেটা হলো-ক্ষোভ আর হুচুকে মেতে ওঠার প্রবণতা। ক্ষোভ পুঞ্জিভুত হয় তখনই যখন প্রত্যাশীতদের নিকট থেকে প্রত্যাশা পুরণের বদলে উল্টো আচরণ পরিলক্ষিত হয়। আর গুজবে কান দিয়ে হুচুকে মেতে মানুষ হয়ে মানুষ মারার উল্লাস? এটা সমাজেরই ক্ষতিকর হীন প্রবণতারই ধারাবাহিক রূপ। এ থেকে মুক্ত হতে হবে। জনগণের আস্থা অর্জনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের আরো কর্তব্যপরায়ণ হয়ে জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করা মতলববাজদের মুখোশ খুলে সমাজকে করতে হবে সুন্দর। এ দায়িত্ব সকলের।