মেহেরপুর জেলায় মসুর আবাদ দ্বিগুণ

মাজেদুল হক মানিক: মেহেরপুর জেলার মাঠে মাঠে এবার মসুর ক্ষেতের সবুজের সমারোহ। উত্তরের হিমেল হাওয়ায় দুলছে ছোট ছোট মসুর গাছ। চাষ উপযোগী এক চিলতে জায়গাতেও এবার আবাদ হয়েছে প্রধান ডাল জাতীয় এই ফসল। কয়েক বছর ধরে বাম্পার ফলনের সাথে ভাল দাম পেয়ে এবার চাষিরা কোমর বেঁধে লেগেছেন মসুর আবাদে। তাইতো গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি পরিমাণ জমিতে এবার মসুর আবাদ হয়েছে।
গাংনী উপজেলার ধলা গ্রামের জাহিদুল ইসলাম গ্রামের মাঠে গত মরসুমে ২ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছিলেন। এবার ধানের পরিবর্তে মসুর আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, ধান আবাদে খরচ বেশি হলেও কাঙ্ক্ষিত দাম মেলেনি। তার পাশের জমিতে যারা মসুর আবাদ করেছিলেন তারা ফলনের পাশাপাশি চড়া দাম পেয়ে লাভবান হয়েছেন। তাই এবার ধানের পরিবর্তে তিনি মসুর আবাদ করেছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাব মতে, গত রবি মরসুমে জেলা সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলায় ৬ হাজার ১৫৫ হেক্টর জমিতে মসুর আবাদ হয়েছিলো। এবার আবাদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ১৪৫ হেক্টর। গত বছর বারি জাতের মসুরের গড় ফলন হয়েছিলো ৮-১২ মণ পর্যন্ত। ফসল তোলার সময় প্রতি মণ মসুর ২ হাজার ৪শ টাকায় বিক্রি হলেও সে দর গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ মসুর সাড়ে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চাষিরা জানান, অন্যান্য ফসলের চেয়ে মসুর আবাদে খরচ একেবারেই কম। এতে প্রান্তিক দরিদ্র চাষিদের পক্ষে সহজেই মসুর আবাদ করা সম্ভব হচ্ছে। প্রতি বিঘা ধান আবাদে যেখানে ১০-১২ হাজার টাকা খরচ সেখানে মসুর আবাদে খরচ মাত্র ৩-৪ হাজার টাকা। বিঘায় অন্তত ১০ হাজার টাকা লাভ আসে। অন্যদিকে মসুর আবাদের সময় মাত্র সাড়ে তিন মাস। এর পরেই পাট কিংবা অন্যান্য ফসল সহজেই আবাদ করা যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে আরো জানা যায়, কয়েক বছর ধরে আগে থেকে জেলা থেকে মসুর চাষ বিদায়ের কাতারে সামিল হয়। সনাতন জাতের মসুরের ফলন এতোটাই কম ছিলো যে চাষিদের আবাদ খরচই ওঠানো সম্ভব ছিলো না। বছর পাঁচেক আগে মসুর চাষের ধারণা পাল্টে দেয় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারী) উদ্ভাবিত জাতের মসুর। প্রথম দিকে চাষিদের মসুর আবাদে অনীহা থাকলেও বাম্পার ফলন ও নায্য মূল্য পেয়ে চাষিরা মসুর চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। প্রতি বছরই বারী মসুর জাতের উন্নয়ন ঘটাচ্ছে। প্রথম বছরে বারী-১ দিয়ে চাষ শুরু হলেও জাত উন্নয়নে এখন বারী-৭ এ পৌঁছেছে। মেহেরপুর জেলার ভৌগলিক অবস্থান মসুর চাষের জন্য খুবই উপযোগী বলে জানান কৃষি কর্মকর্তরা। গত বছরের বাম্পার ফলন ও নায্য মূল্যের কারণে এবার চাষিরা মসুর আবাদ বেশি করেছেন। তবে বপনের সময় বীজের মান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন চাষিরা। বীজের ব্যাপক চাহিদার কারণে ভেজাল ও নিবন্ধনহীন বীজ ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। এ বিষয়ে দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হলে নড়েচড়ে বসে বিএডিসি। শুরু হয় অভিযান। আগামী রবি মরসুমের আগে থেকে অভিযান চলবে জানান কৃষি কর্মকর্তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক এস.এম মোস্তাফিজুর রহমান জানান, জেলায় উৎপাদিত মসুর জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায় সরবরাহ করা হয়। এতে দেশের ডালের চাহিদায় বড় ধরনের ভূমিকা রাখে মেহেরপুর জেলা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গত বছরের মতো এবারো বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষি বিভাগ। সে লক্ষ্যে চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শও দেয়া হচ্ছে।