ভারতের বিমান ঘাঁটিতে জঙ্গি হামলায় নিহত ৮

সন্দেহের তীর জয়েশ-ই-মোহাম্মদের দিকে : ১৩ ঘন্টার বন্দুকযুদ্ধে ৫ হামলাকারীরও মৃত্যু
মাথাভাঙ্গা মনিটর: ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশে বিমান বাহিনীর একটি ঘাঁটিতে জঙ্গি হামলায় ৮ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৩ জন সেনা সদস্য এবং ৫ জন জঙ্গি রয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো ৬ সেনা সদস্য। গতকাল শনিবার ভারতীয় সময় ভোর সাড়ে ৩টার দিকে পাঠানকোট বিমান ঘাঁটিতে এই আক্রমণ চালানো হয়। জঙ্গিদের মোকাবিলায় ১৩ ঘণ্টার অভিযানে সেনাবাহিনীর কমান্ডো এবং হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়। ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তারা জানান, ছিনতাই করা পুলিশের একটি গাড়ি এই আক্রমণে ব্যবহার করা হয়েছে এবং জঙ্গিরা ভারতীয় সেনাবাহিনীর পোশাকে ছিলো। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পাকিস্তান সফরের দশ দিনের মধ্যে জঙ্গি হামলার ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনায় সরব হয়েছে বিরোধীরা। প্রধানমন্ত্রী মোদী হামলার নিন্দা জানিয়ে অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর প্রশংসা করেছেন।
হামলার দায়িত্ব কোনো জঙ্গি সংগঠন স্বীকার না করলেও জয়েশ-ই-মোহাম্মদকে সন্দেহ করা হচ্ছে। একজন ভারতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, আক্রমণে ভারত শাসিত কাশ্মীরের জঙ্গিদের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। এক কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস, তারা জয়েশ-এ-মোহাম্মদ গ্রুপের সন্ত্রাসী’। কাশ্মীর-ভিত্তিক এই সংগঠনকে পাকিস্তান সমর্থন করে বলে ভারত অভিযোগ করে। তবে পাকিস্তানে এই অভিযোগ বরারবই প্রত্যাখান করে আসছে।
পাকিস্তান সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরের বিমান ঘাঁটিতে প্রবেশ করে ৬ জঙ্গি। এরা প্রত্যেকেই সেনাবাহিনীর পোশাকে ছিলো। ঘাঁটির যে অংশে যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার রাখা থাকে সেদিক থেকে হামলা চালাতে শুরু করে জঙ্গিরা। এখানেই মজুত রয়েছে ভারতীয় বিমানবাহিনীর অন্যতম অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান মিগ-২১ ও এমআই-৩৫। জঙ্গি হামলার পরই পাঠানকোটসহ পাঞ্জাবজুড়ে সতর্কতা জারি করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডের সেনা সদস্যরা।
ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআই জানায়, মূলত সেনাবাহিনীর বিমান অপহরণ করার উদ্দেশ্য ছিলো জঙ্গিদের। পাশাপাশি মিগ-২১ এবং এমআই-৩৫সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিমানে বিস্ফোরণ ঘটানো ছিলো তাদের লক্ষ্য। জঙ্গিরা তিনটি দলে ভাগ হয়ে কুয়াশার অন্ধকারকে কাজে লাগিয়ে পাঠানকোট বিমানঘাঁটিতে সেনাবাহিনীর নজর এড়িয়ে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়। দুটি দলে ছিলো দুজন, অপর দলে ছিলো ৩ জন। প্রথমে তারা বিস্ফোরণ ঘটায়। তারপর এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে। পাল্টা জবাব দেয় সেনাবাহিনী। পাঠানো হয় অতিরিক্ত সেনাবাহিনী। দিনের আলো ফুটতেই অভিযানে নামানো হয় সেনা হেলিকপ্টার। সকাল ৯টা নাগাদ প্রথমবার গুলির লড়াই থামে। তারপর ফের সকাল ১০টা ৫০ মিনিট থেকে শুরু হয় জঙ্গি-সেনা লড়াই।
পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে গোয়া সফর সংক্ষিপ্ত করে দিল্লিতে ফিরে আসেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিক্কর। প্রতিরক্ষামন্ত্রী পারিক্কর বিকেলে সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানদের সাথে বৈঠকে বসেন। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, জঙ্গি হামলায় একটি সেনা বিমানেরও কোনো ক্ষতি হয়নি। জরুরি ভিত্তিতে বৈঠকে বসেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালসহ কেন্দ্রীয় সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, প্রতিবেশি দেশের সাথে আমরা সবসময় সুসম্পর্ক রাখতে পছন্দ করি। কিন্তু কোনোভাবেই দেশের নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে না। আজ পাঞ্জাবে যে ঘটনা ঘটেছে তা খুবই নিন্দনীয়। পরিস্থিতির দিকে আমরা নজর রাখছি। নিহত সেনাদের প্রতি আমরা শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। দুপুরে দিল্লিতে ফের বসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জরুরি বৈঠক। পরিস্থিতি মোকাবেলায় নামানো হয় বিমানবাহিনীর বিশেষ ‘অ্যাটাক চপার’। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দিন দুয়েক আগে গুরুদাসপুরে এক পুলিশ সুপারের গাড়ি অপহরণের ঘটনা ঘটেছিলো। অপহূত হন পুলিশ সুপারও। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, হামলার আগে বেশ কয়েকবার পাকিস্তানে ফোন করে জঙ্গিরা। বিশেষ করে রাত ১২ টা থেকে ১ টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত ৪ বার পাকিস্তানের একটি নম্বরে জঙ্গিরা ফোন করেছিলো? হামলার পরেই গোটা এলাকা ঘিরে রাখেন সেনবাহিনীর একটি বিশেষ বাহিনী এবং এনএসজি কমান্ডোরা। বন্ধ করে দেয়া হয় জম্মু-কাশ্মীর জাতীয় সড়ক।
গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, ৩১ ডিসেম্বর রাতে সীমান্ত অতিক্রম করে ৮ থেকে ১০ জনের একটি জঙ্গি দল ভারতে প্রবেশ করে। হামলার মূল পকিল্পনাকারী আজহার মেহমুদ বলে গোয়েন্দাদের সন্দেহ। উল্লেখ্য, কান্দাহার বিমান অপহরণের ঘটনায় মূল কান্ডারি ছিলো এই মেহমুদ। পাশাপাশি পাকিস্তানের মদতপুষ্ট বেশ কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন যৌথভাবে এই হামলায় জড়িত বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে। গুরুদাসপুরের পরে পাঠানকোটে এইভাবে জঙ্গি হামলা নিঃসন্দেহে পাক-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের মাঝে ফাটল তৈরি করলো বলে মনে করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন, মানবতার শুত্রুরা ভারতের সাফল্য সহ্য করতে পারে না। এই ধরনের মানুষগুলোই পাঠানকোটে হামলা করেছে। কিন্তু আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী তাদের সেই আকাঙ্খা সফল হতে দেয়নি।