জীবননগর পৌরসভায় জাহাঙ্গীর আলম পৌর মেয়র নির্বাচিত

এম আর বাবু/সালাউদ্দীন কাজল: জীবননগর পৌরসভায় আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কৃত বিদ্রোহী প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বিপুল ভোটের ব্যবধানে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি তার নারকেল গাছ প্রতীকে পেয়েছেন ৬ হাজার ৪০৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান মেয়র হাজি নোয়াব আলী পেয়েছেন ৩ হাজার ২৪ ভোট। এছাড়াও আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের নাসির উদ্দিন পেয়েছেন ২ হাজার ৯৮৮ ভোট ও জামায়াতে ইসলামী মনোনীত জগ প্রতীকের মাও. সাজেদুর রহমান পেয়েছেন ১ হাজার ৫৯৬ ভোট।
সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১,২ ও ৩নং আসনে মাহফুজা পারভীন বিউটি ভ্যানিটি ব্যাগ প্রতীকে ২ হাজার ৫৭৯ ভোট পেয়ে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী মরিয়ম বেগম কাঁচি প্রতীকে পেয়েছেন ১ হাজার ৪০৮ ভোট। ৪, ৫ ও ৬নং আসনে পরিছন বেগম মৌঁমাছি প্রতীকে ২ হাজার ১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা আলম ভ্যানিটি ব্যাগ প্রতীকে পেয়েছেন ১ হাজার ৪০৫ ভোট এবং ৭, ৮ ও ৯নং আসনে রিজিয়া বেগম কাঁচি প্রতীকে ২ হাজার ৭৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রেখা খাতুন আঙ্গুর প্রতীকে পেয়েছেন ১ হাজার ৬শ ভোট।
সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১নং ওয়ার্ডে আপিল মাহমুদ উটপাখি প্রতীকে ৪৩১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী হাসানুজ্জামান টোকিও পানির বোতল প্রতীকে পেয়েছেন ৪১৪ ভোট। ২নং ওয়ার্ডে সাইদুর রহমান পানির বোতল প্রতীকে ৭৭৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মিনজুল হক টেবিল ল্যাম্প প্রতীকে পেয়েছে ৪৩১ ভোট। ৩নং ওয়ার্ডে আতিয়ার রহমান উটপাখি প্রতীকে ৭৫০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শাহাজামাল উদ্দীন ডালিম প্রতীকে পেয়েছেন ৬১৭ ভোট। ৪নং ওয়ার্ডে শোয়েব আহম্মদ অঞ্জন টেবিল ল্যাম্প প্রতীকে ৮৫৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নুর নবী উটপাখি প্রতীকে পেয়েছেন ৩৬৬ ভোট। ৫নং ওয়ার্ডে খন্দকার আলী আজম উটপাখি প্রতীকে ৫৪৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শামসুজ্জামান হান্নু পানির বোতল প্রতীকে পেয়েছেন ৩৯০ ভোট। ৬নং ওয়ার্ডে আবুল কাশেম ডালিম প্রতীকে ৬১৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সালাহ উদ্দীন কবীর টেবিল ল্যাম্প প্রতীকে পেয়েছেন ৫৩৯ ভোট। ৭নং ওয়ার্ডে ওয়াসিম রাজা উটপাখি প্রতীকে ৬৮২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আক্তারুজ্জামান পানির বোতল প্রতীকে পেয়েছেন ৬১৭ ভোট। ৮নং ওয়ার্ডে হযরত আলী পানির বোতল প্রতীকে ৭৫১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শহিদুল ইসলাম উটপাখি প্রতীকে পেয়েছেন ৬৮৭ ভোট এবং ৯নং ওয়ার্ডে আফতাব উদ্দীন উটপাখি প্রতীকে ৮২৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আলী আহম্মদ পানির বোতল প্রতীকে পেয়েছেন ৭১৪ ভোট।
জীবননগর পৌরসভা নির্বাচনে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৮ থেকে শুরু হয়ে একটানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্নভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোটাররা শীত উপেক্ষা করে সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রদান করেন। বিশেষ করে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিলো লক্ষণীয়। প্রতিদ্বন্দ্বী ৪ মেয়র প্রার্থী ছোটখাটো কিছু অভিযোগ ছাড়া ভোট অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরেপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
ভোটাররা জানান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে পারায় তারা আনন্দিত। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও ছিলো সতর্ক অবস্থায়। বেলা সাড়ে ১১টার সময় দৌলতপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের একজন ভোটার শিমা আক্তার বলেন জীবনে প্রথম ভোট দিলাম। নিজের ইচ্ছায় এবং নিজের পচ্ছন্দের যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরেছি। একই সময় কথা হয়, বৃদ্ধ আব্দুল করিমের সাথে। তিনি বলেন, জীবনে অনেক ভোট দেখেছি কিন্তু এতোসুন্দর ভোট আর কখনো দেখিনি। নিজের পচ্ছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছি।
সরেজমিন বেলা ১১ টার সময় দৌলতপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে গিয়ে প্রিজাইডিং অফিসার মো. শামনুর রহমানের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওই কেন্দ্রের মোট ভোট সংখ্যা ১ হাজার ৮৫৪। এর মধ্যে বেলা ১১টা পর্যন্ত ৬৯৬ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। বেলা সোয়া ১১টার দিকে জেলা পরিষদ ডাকবাংলো ভোট কেন্দ্রে গিয়ে প্রিজাইডিং অফিসার মো. মোতাহার হোসেনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওই কেন্দ্রে ১ হাজার ৮৬৭ ভোটারের মধ্যে বেলা সোয়া ১১টা পর্যন্ত ৫৯০ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। বেলা সাড়ে ১টার দিকে জীবননগর পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে গিয়ে প্রিজাইডিং অফিসার মো. আমজাদ হোসেনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওই কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৯৩। এর মধ্যে ১ হাজার ৩০৪ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। নির্বাচনকে ঘিরে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের বাইরে ও ভেতরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ছিলো। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত, বিজিবি, ৱ্যাব, পুলিশ, আনসারসহ একাধিক আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে কাজ করেছে।