হিমশিম খাচ্ছে কতৃপক্ষ : আধুনিকায়নের নামে কি করছে
হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ : আধুনিকায়নের নামে কি করেছে মেকানিক্স? অভিযোগের তীর হোসেন ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপের দিকে
দর্শনা অফিস: নির্ধারিত তারিখের ২১ দিন পর কেরুজ চিনিকলের আখ মাড়াই মরসুমের উদ্বোধন করা হলো যে কারণে সে লক্ষ্য পূরণ হলো না। প্রতিষ্ঠান দর্শনা হোসেন ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপের অদক্ষ শ্রমিক দ্বারা মিলের গুরুত্বপূর্ণ বয়লিং হাউজ আধুনিকায়ন কাজের খেসারত গুনতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। ভোগান্তি পোহাচ্ছেন কৃষকরা। বয়লিং হাউজ আধুনিকায়নের বরাদ্দকৃত টাকা কি জলে পড়লো এ রকম প্রশ্ন বিভিন্ন মহল থেকে। আখ মাড়াই শুরুর আড়াই দিনের মাথায় বড় ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে পড়ে মাড়াই কার্যক্রম রয়েছে বন্ধ। হাজার হাজার মেট্রিক টন আখ ইয়ার্ডে পড়ে শুকাচ্ছে।
জানা গেছে, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রানালয় থেকে ২০১২ সালে ৪৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় মিলটিকে আধুনিকায়ন করণের জন্য। ২০১৩ সালের জুনে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস (বিএমটিএফ) আধুনিকায়নের কাজ শুরু করার কথা থাকলেও বিভিন্ন কারণে তা সম্ভব হয়নি। চলতি বছরের জুন মাসে মিলের বয়লিং হাউজের কাজ শুরু করা হয়। বিএমটিএফ’র কাছ থেকে সাব কন্ট্রাক্ট নেয় ভারতের সাইসিদা সুগার ইকুইমেন্ট কোম্পানি। দুঃখজনক হলেও সত্য এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণের এ কাজ করানো হচ্ছে দর্শনার ঝালাই মিস্ত্রী দিয়ে। গুরুত্বপূর্ণ এ কাজ কতোখানি ত্রুটিপূর্ণ হচ্ছে তা প্রমাণ মিললো মাড়াই শুরু হওয়ার আড়াই দিনের মাথায়। দর্শনা বাসস্ট্যান্ডের হোসাইন ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপের সত্ত্বাধিকারী আকবর আলী ও তার ছেলে মাহবুবুল ইসলাম ছট্টু বয়লার হাউজ নির্মাণ কাজের দেখভাল করছেন। নিজেদের নিয়ন্ত্রণে অদক্ষ, আনারি শ্রমিক দিয়ে মিলের অতি গুরুত্বপূর্ণ বয়লিং হাউজের কাজ প্রায় শেষের দিকে। আধুনিকায়নের এ কাজে আধুনিক যন্ত্রপাতি ছাড়া হাতুড়ে যন্ত্রপাতি দিয়ে চালানো হচ্ছে কাজ। সাইসিদা কোম্পানির ৪ জন প্রকৌশলী সর্বক্ষণিক উপস্থিত থেকে খোঁজ খবর নেয়ার কথা থাকলেও আকবর আলী তাদের ম্যানেজ করে রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অসংখ্য ত্রুটিতে ভরপুর এ কাজে আশাহত হয়ে পড়েছে এলাকার মানুষ। বয়লিং হাউজ নির্মাণ কাজ বিলম্বিত হওয়ার কারণেই চলতি মাসের ৪ তারিখের পরিবর্তে ২৫ তারিখে মিলের আখ মাড়াই মরসুমের উদ্বোধন করা হয়। সুত্র বলেছে, সাইসিদা কোম্পানির সাথে আকবর আলী কোনো প্রকার লিখিত চুক্তিনামা না থাকলেও মিলের বয়লিং হাউজে নিজের প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড টাঙিয়েছেন আকবর আলী। বয়লিং হাউজ নির্মাণের মতো গুরুত্বপূর্ণ এ নির্মাণ কাজের দায়িত্ব কিভাবে পেলেন আকবর আলী তা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।
অবশেষে সাধারণ মানুষের প্রশ্নের প্রতিফলন ঘটলো। গত শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে আখ মাড়াই শুরু হওয়ার ৬১ ঘণ্টার মাথায় গত রোববার রাত ১টার দিকে বয়লিং হাউজের ২নং কর্নেস ট্যাক্সের পাম্প বিকল হওয়ার কারণেই মিলের আখ মাড়াই বন্ধ হয়ে যায়। এ পাম্পটি স্থাপনের মাত্র ১০ দিনের মাথায় বিকল হয়ে পড়েছে। তবে হোসেন ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপ কি ধরনের পাম্প স্থাপন করলো তা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। অনেকেই বলেছে, বয়লিং হাউজের সব ধরনের যন্ত্রাংশই এ ধরণের ত্রুটিপূর্ণ। দু দিন আগে আর পরে সব যন্ত্রাংশেই দেখা দিতে পারে ত্রুটি। টানা ২০ ঘন্টার মধ্যেও মিলের আখ মাড়াই শুরু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। তবে চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম আরশাদ হোসেনের নেতৃত্বে কর্মকর্তারা ত্রুটির পর থেকেই পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছেন। ত্রুটি কাটিয়ে তুলতে কর্মকর্তাদের ভূমিকা চলছে জোরেসোরে। সচেতন মহল অভিমত ব্যক্ত করে বলেছে, মিলের এ লোকসানের হিসাব কে দেবে?