উন্নত দেশগুলোতে ক্যান্সারে আক্রান্ত ও ক্যান্সারে মৃত্যুর হার ক্রমান্বয়ে কমছে। অপরদিকে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে বাড়ছে ক্যান্সার আক্রান্ত ও আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুহার। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি গবেষণাপত্রে বলেছে, ক্যান্সার শনাক্তকরণ পদ্ধতির উন্নতি এবং ধূমপানের মতো ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো পরিহারের মধ্যদিয়ে উন্নত দেশগুলো নতুন করে ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়া এবং ক্যান্সারে মৃত্যুহার কমছে। এ থেকে শিক্ষা নিতে পারলে আমরাও যে ক্যান্সার থেকে রক্ষা পেতে পারি, কমাতে পারি ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার।
সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে, আমাদের দেশে প্রতিবছর প্রায় ৩ লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে মৃত্যু হয় প্রায় আড়াই লাখ মানুষের। স্বল্পোন্নত দেশ বিধায় বাংলাদেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্যান্সার শনাক্ত হয় বেশ বিলম্বে তথা বিপজ্জনক স্তরে পৌঁছুনোর পর। অনেক ক্ষেত্রে ভুলভাবে রোগ শনাক্ত হয় বলেও যেমন অভিযোগ রয়েছে, তেমনই ক্যান্সার থাকলেও ধরা পড়ে না মূলত চিকিৎসায় অসচেতনতার কারণে। নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার নির্ণয় করা গেলে তার কার্যকর চিকিৎসা করা যায়, এমনকি আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রায় সম্পূর্ণ নিরাময়ও লাভ করা সম্ভব হয়। আমাদের দেশে ভেজাল খাদ্যের কারণে দিন দিন ক্যান্সারের মতো মারণ ব্যাধির প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। বাজারে প্রাপ্ত সব ধরনের খাদ্যের মধ্যে ন্যূনতম ৪০ শতাংশই বিষাক্ত। ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষায় এই বিষের পরিমাণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানদণ্ডের বিচারে ৩ থেকে ২০ গুণ বেশি। আরও আশঙ্কার কথা হলো, ৮২টি নমুনা পরীক্ষায় কয়েক দশক পূর্বে নিষিদ্ধ হওয়া ডিডিটি, ক্লোরডেন, হেপ্টাক্লোর জাতীয় ভয়াবহ কীটনাশক মিলেছে ৪০ শতাংশ খাদ্যদ্রব্যেই। তাহাছাড়া, কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি পচনশীল ফলমূল, মাছ-মাংসে যেভাবে ফরমালিনের সাহায্যে পচনরোধ করে মানুষকে খাওয়ানো হয়েছে তাও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা, বিজ্ঞানীরা ফরমালিনকে ক্যান্সার সৃষ্টিকারক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বহু আগেই।
ক্যান্সার এখনও অনেকাংশে রহস্যের অবগুণ্ঠনে রয়েছে। আমাদের দেশে ক্যান্সার আক্রান্তের সবচেয়ে বড় বিপদ হলো- এর যতোটুকু চিকিৎসা এখন করা সম্ভব, তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। দ্বিতীয়ত, ক্যান্সার শব্দটি মৃত্যুদূততুল্য, তাই কেউ এই রোগে আক্রান্ত হলে তার পরিবারটির ওপর যেন মানসিক বিপর্যয়ের আকাশ ভেঙে পড়ে। দেহে ক্যান্সার বাসা বাঁধার সম্ভাব্য অনুঘটকগুলো সম্পর্কে জানা বোঝার পাশাপাশি বাতড়ি সতকর্তা অবলম্বনের বিকল্প নেই। সুস্থ জীবনযাপনের জন্য শুধু ক্যান্সার নয়, স্বাস্থ্য সচেতনতা প্রয়োজন। এ জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রয়োজন বাস্তবমুখী পদক্ষেপ।