আখচাষিরাই চিনিকলের প্রাণ তাই তাদের সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে

হারুন রাজু/হানিফ মণ্ডল: কেরুজ চিনিকলের ২০১৫-১৬ আখ মাড়াই মরসুমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান একেএম দেলোয়ার হোসেন মাড়াই কার্যক্রমের শুভ সূচনা করেন। চিনিকলের ক্যান কেরিয়ার চত্বরে অনুষ্ঠিত আলোচনাসভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে করপোরেশনের চেয়ারম্যান একেএম দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের একটি কথা মনে রাখতে হবে, কৃষি প্রধান দেশে চাষিরাই প্রাণ। যুগযুগ ধরে চাষিকূল আমাদের অর্থনৈতিক বুনিয়াদকে সমৃদ্ধ করেছে। কৃষি বান্ধব এ সরকার কৃষকের সকল সুবিধা নিশ্চিত করতে হাতে নিয়েছে বিভিন্ন কর্মসুচি। তেমনিভাবে দেশের চিনি শিল্পকে বাচাতে হলে চাষি ভাইদের এগিয়ে আসতে হবে সবার আগে। সেক্ষেত্রে বেশি বেশি করে আখ চাষের মধ্য দিয়েই সম্ভব দেশের এ মূল্যবান সম্পদ চিনিশিল্পকে রক্ষা করা। কৃষকদের পাশাপাশি মিলের কর্মকর্তাদের আন্তরিক হতে হবে। কৃষকদের সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারে রাখতে হবে খেয়াল। দিনদিন কৃষকরা আখচাষের দিকে ঝুকে পড়ছে। চিনিকলের অতীত ঐতিহ্য ফিরতে শুরু করেছে। এ ঐতিহ্য ধরে রাখার দায়িত্ব মিলের কর্মকর্তাদের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার দেশের মৃত ও রুগ্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্ধার করে তা সচল করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তাই আসুন সকল অনিয়ম, দুর্নিতীকে মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে একটি শিল্প সমৃদ্ধশীল গড়তে সকলেই আন্তরিক হই। অনুষ্ঠানে সভাপতি কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম আরশাদ হোসেন স্বাগত বক্তব্যে বলেছেন, কেরুজ চিনিকল এ অঞ্চলের মানুষের একটি মূল্যবান সম্পদ। এ সম্পদ রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে সকলকে। বিশেষ করে আখচাষিদের আন্তরিকতায় পারে মিলকে আরো এগিয়ে নিতে। বিশ্বাস করি এ অঞ্চলের আখচাষিরা বেশ আন্তরিক। তারা আরো বেশি আন্তরিক হলে কেরুজ চিনিকলের অতিত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সময় লাগবেনা। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, করপোরেশনের পরিচালক (উৎপাদন ও প্রকৌশলী) শিবেন্দ্রনাথ সরদার, সচিব, কেরুজ চিনিকলের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএসএম আবদার হোসেন, জয়পুরহাট চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস সালাম, মোবারকগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেন, নর্থ বেঙ্গল চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম আব্দুল আজিজ, রেইন উইকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহসান সিদ্দিকি, বাংলাদেশ চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারি ফেডারেশনের সভাপতি আতিয়ার রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল ইসলাম রবি, কেরুজ চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারি ইউনিয়নের সভাপতি তৈয়ব আলী, সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান, আখচাষি কল্যাণ সংস্থার সভাপতি আব্দুল হান্নান, যুগ্মসম্পাদক আ. বারী, হাজি আকমত আলী। মিলের ব্যবস্থাপক সম্প্রসারণ গিয়াসউদ্দিনের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম প্রিন্স, শ্রমিক নেতা ফারুক আহম্মেদ, চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) মোস্তফা কামাল, মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) মোশারফ হোসেন, মহাব্যবস্থাপক (প্রসাশন) মনোয়ারুল ইসলাম, মহাব্যবস্থাপক (কারখানা) মিজানুর রহমান, ডিজিএম সম্প্রসারণ সুরঞ্জন বারই, সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রসাশন) আকরাম হোসেন শিকদার, ব্যবস্থাপক বানিজ্য আকুল হোসেন, ডিস্টিলারী সেলস অফিসার শেখ শাহবুদ্দিন, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাজি খালেকুজ্জামান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সর্বচ্চ জমিতে আখ রোপন করায় দামুড়হুদার মজিবর রহমান এবং অধিক ফলন করায় দোস্তগ্রামের আ. লতিফকে ক্রেস্ট ও নগদ অর্থ পুরস্কৃত করা হয়েছে। পুরস্কার তুলে দেন করপোরেশনের চেয়ারম্যান একেএম দেলোয়ার হোসেন। দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে দোয়া পরিচালনা করেন কেরুজ জামে মসজিদের পেশ ইমাম আ. খালেক। করপোরেশনের চেয়ারম্যান, কর্মকর্তা ও নেতৃবৃন্দ মিলের ডোঙায় আখ নিক্ষেপের মধ্যদিয়ে ২০১৫-১৬ আখ মাড়াই মরসুমের শুভ সূচনা করেন। পরে অতিথি ভবনে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত মতবিনিময়সভায় চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের প্রশাসক মাহফুজুর রহমান মনজু উপস্থিত ছিলেন। এবারের আখ মাড়াই মরসুমে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন থেকে লক্ষ্যমাত্রা যা নির্ধারণ করে দিয়েছে তা হচ্ছে, ১০০ মাড়াই দিবসে ১ লাখ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৭ হাজার মেট্রিকটন চিনি উৎপাদন করতে হবে। এ মরসুমে মিলের নিজস্ব ১২ হাজার ৩শ একর জমিসহ ৮ হাজার ৮শ ৭০ একর জমিতে আখ রয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সর্বাত্তক চেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে বলে মিলকর্তপক্ষ জানিয়েছে। এছাড়া করপোরেশনের চেয়ারম্যানসহ কর্মকর্তা ও নেতৃবৃন্দ সকালে দর্শনা মেমনগরের আহম্মদ আলীর জমিতে আখ রোপন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন।