পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) : সালাম ও দরুদ

আল্লাহর রসুল মহানবি হযরত মুহাম্মদের (স.) জন্ম ও ওফাত দিবস আজ। চান্দ্রমাস রবিউল আউয়ালের ১২ তারিখ সুবহে সাদিকের সময় মা আমিনার কোল আলোকিত করে তিনি আসেন ধরিত্রীতে। ঈদ অর্থ-আনন্দ, আর ঈদে মিলাদুন্নবী অর্থ-নবী (স.) এর জন্ম বা জন্মোত্সবের আনন্দ। নবী করীমের (স.) আবির্ভাবের মধ্যদিয়ে বিশ্বমানব লাভ করে আলোর দিশা। আইয়ামে জাহেলিয়াতের অন্ধকার বিদীর্ণ করে মুহাম্মদ (স.) নিয়ে আসেন আলোকিত মহত্-সুন্দর জীবন বিধান।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, অ-মা আরসালনাকা ইল্লা রহমাতুল্লিল আলামিন অর্থাৎ আপনাকে প্রেরণ করা হয়েছে সমগ্র বিশ্বের রহমত স্বরূপ। বাস্তবিক পক্ষেই দার্শনিক বাগ্মী, ধর্ম প্রচারক, আইন প্রণেতা ও যোদ্ধা। মানবিক রীতি-নীতির উচ্চতম আদর্শের ধারক যিনি, তিনি মুহাম্মদ (স.)। তিনি বিনম্র তবু নির্ভীক, শিষ্ট তবু সাহসী, সন্তান বত্সল এবং বিজ্ঞজন পরিবৃত। তিনি সম্মানিত, মানব সমাজে তিনি উন্নত, সর্বদাই সত্যবাদী, প্রেমময় স্বামী, বন্ধুত্বে অবিচল এবং অন্যের প্রতি ভ্রাতৃসুলভ, দয়ার্দ্র, অতিথিপরায়ণ, উদার এবং নিজের জন্য সর্বদাই মিতব্যয়ী। কঠিন তিনি মিথ্যা শপথের বিরুদ্ধে, ব্যভিচারীর বিরুদ্ধে। খুনি, কুত্সাকারী, অর্থলোভী, মিথ্যা সাক্ষ্যদাতাদের তিনি প্রতিপক্ষ। ধৈর্যে, বদান্যতায়, দয়ায়, পরোপকারে, কৃতজ্ঞতায়, পিতা-মাতা ও গুরুজনদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে তিনি সর্বদা অনুসরণীয়।
নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না, মানবিক প্রবৃত্তির সবকিছু মুহাম্মদ (স.) এর মধ্যে বিদ্যমান ছিলো। যখন তার বয়স ৪০ হয়, তখন তিনি প্রত্যাদেশের মাধ্যমে নবুওত প্রাপ্ত হয়ে হেরা পর্বতগুহা হতে ফিরে এসে সত্য বাণীর ঘোষণা করেন। মক্কায় ১৩ বছরের নানা অত্যাচারে নির্যাতনে জর্জরিত হয়ে তিনি হিজরত করে মদীনায় চলে যান। মদীনায় তিনি একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। সব মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি সংবিধান প্রণয়ন করেন, যাকে মদীনার সনদ বলা হয়। মদীনার মুসলমান, ইহুদী, খ্রিস্টান পৌত্তলিক সবাই সেখানে স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে থাকেন। সমাজে প্রবাহিত হলো শান্তির ফল্গুধারা।
অবশেষে মক্কা বিজয় হলো। রসূল (স.) ‘যাআল হাক্কু অযাহাকাল বাতিলু ইন্নাল বাতিলা কানা জাহুকা’ বলতে বলতে আল্লাহর ঘর কাবায় প্রবেশ করেন। অতঃপর বিদায় হজের ভাষণে ১ লাখ ১৭ হাজার সাহাবীর সম্মুখে বলেন, আমি কি আল্লাহর বাণী পরিপূর্ণভাবে পৌঁছে দিয়েছি? সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব দেন। এই সময় কুরআনের সর্বশেষ আয়াত অবতীর্ণ হয় ‘আল ইয়াওমা আকমালতু লাকুম-দ্বী-নাকুম…’ অর্থাৎ আজকের দিনে আমি ইসলামকে পরিপূর্ণ করে দিলাম। মিলাদুন্নবীর (স.) পবিত্র দিনে এই মহামানবের প্রতি জানাই সালাম ও দরুদ। বিশ্ব মানবের শান্তি ও কল্যাণ করুক স্রস্ট্রা। আমিন।