মালয়েশিয়ায় সাত মাস দুর্বিসহ জীবনের অবসান

মেহেরপুর গাংনী উপজেলার রুয়েরকান্দি গ্রামের স্বজনদের কান্নায় শোকের ছায়া
গাংনী প্রতিনিধি: মালয়েশিয়ায় ৭ মাস দুর্বিসহ জীবনের অবসান ঘটিয়েও বাড়ি ফেরা হলো না মেহেরপুর গাংনী উপজেলার রুয়েরকান্দি গ্রামের আলা উদ্দীন ওরফে আলালের (৫০)। ভাগ্য ফেরাতে মালয়েশিয়া পাড়ি দিয়ে অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন মাতৃভূমিতে। গত বুধবার রাতে মালয়েশিয়া থেকে বিমানযোগে ঢাকার পথে আসার সময় বিমানের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়।
আলা উদ্দীন আলাল রুয়েরকান্দি গ্রামের মৃত মারফত আলীর ছেলে। তার মৃত্যুতে স্ত্রী, দু ছেলে ও এক মেয়েসহ পরিবারের সদস্যরা অথই সাগরে পড়েছেন।
নিহত আলালের স্ত্রী শিল্পী খাতুন জানান, মানিকদিয়া গ্রামের আদম ব্যাপারী আব্দুল কুদ্দুসের মাধ্যমে মালয়েশিয়া যাওয়ার কথাবার্তা হয়। ঢাকার শিল্পপতি গাংনী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের সভাপতি ইঞ্জি. একরামুল হক তাজুর মাধ্যমে তাকে মালয়েশিয়া পাঠাবে- কুদ্দুসের এমন আশ্বাসে রাজি হয় আলাল। এর আগে তিনি মালয়েশিয়া যেতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হওয়ায় ইঞ্জি. একরামুল হক তাজুর মতো একজন ব্যক্তির মাধ্যম শুনে মালয়েশিয়ায় ভালো কাজের স্বপ্ন দেখেন আলাল ও তার পরিবার। মোবাইলফোনে তিনি ইঞ্জি. তাজুর সাথে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হন। কুদ্দুসের দেয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বরে ৩ লাখ ও কুদ্দুসকে নগদ আরো ৭০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন আলাল। গত ২৪ মে তাকে মালয়েশিয়া পাঠায় কুদ্দুস ও ইঞ্জি. একরামুল হক তাজু। কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টে পৌঁছে আলাল বুঝতে পারেন তার কোনো ম্যানপাওয়ার অনুমোদন নেই। এয়ারপোর্ট চুক্তিতে মালয়েশিয়া আনা হয়েছে। সেখানে কুদ্দুস ও ইঞ্জি. একরামুল হক তাজুর দালালরা আলালকে এয়ারপোর্ট মুক্ত করে তাদের ডেরায় নিয়ে যায়। তার কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয় পাসপোর্ট-ভিসা। মালয়েশীয় দালালরা আলালকে নুরি নামের এক দালাল এজেন্টের কাছে বিক্রি করে দেয়। আলালের মতোই বাংলাদেশের অনেক হতভাগা শ্রমিক নুরির মাধ্যমে বিনা বেতনে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। নুরি তাকে দিয়ে কিছু কাজ করালেও টাকা দিতো না। তাদেরকে বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে এমন হুমকি দিয়ে পারিশ্রমিক দিতো না নুরি। বেশ কয়েকদিন অনাহারে অর্ধাহারে একটি ঘরে তার দিন কাটছিলো। পাসপোর্ট ও ভিসা না থাকায় বদ্ধ ঘর থেকে বাইরের ভালো হাসপাতাল কিংবা চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার সুযোগ ছিলো না। নুরির লোকজন তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতো। এভাবে কয়েক মাস চলার পর আলালের শারীরিক অবস্থা গুরুতর হলে পরিবার কিছু অর্থ খরচ করে এয়ারপোর্ট চুক্তিতে তাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু পরিবারের কাছে পৌছুনোর আগেই বিমানের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়। গতকাল সকালে নিজ গ্রামে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
তার স্ত্রী ও চাচাতো ভাই তারিক হোসেন জানান, মালয়েশিয়ায় দুর্বিসহ জীবন নিয়ে কয়েক মাস পার করলেও আদম ব্যাপারী আব্দুল কুদ্দুস কিংবা ইঞ্জি. একরামুল হক তাজু পরিবারের কোনো কথায় কর্ণপাত করেননি। তাকে ফিরিয়ে আনা কিংবা ভালো কাজ প্রাপ্তিতে কোনো সহযোগিতা করেননি তারা। দুয়েক দিনের মধ্যে থানায় এজাহার দাখিল করা হবে বলে জানান ভুক্তভোগী পরিবারের সদ্যরা।
স্থানীয়সূত্রে আরো জানা গেছে, মানিকদিয়া গ্রামের আয়ুব মালিথার ছেলে আব্দুল কুদ্দুস স্থানীয় আরো কিছু মানুষকে ইঞ্জি. একরামুল হক তাজুর কথা বলে মালয়েশিয়ায় পাঠায়। তাদের অনেকেই এখনো মালয়েশিয়ায় দুর্বিসহ জীবন যাপন করছেন।