কীটনাশকের বিষে ‘নীল’ ফুলকপি-লালশাক

স্টাফ রিপোর্টার: শীতের সবজি ফুলকপি ও লালশাকে পাওয়া গেছে অত্যন্ত ক্ষতিকারক রাসায়নিকের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি। সরকারের জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, এ দুটি সবজিতে ক্ষতিকর বিভিন্ন কীটনাশকের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে চার থেকে ৩৬ গুণ পর্যন্ত বেশি। ক্ষতিকর কীটনাশক মিশ্রিত এসব সবজি খেলে কিডনি, লিভার অকার্যকর হওয়াসহ স্নায়ুবিক দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। এমনকি শিশুদের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ফসলে বা সবজিতে কীটনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয় এক ধরনের রাসায়নিক অর্গানিক কমপাউন্ড। আর নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে এর অতিরিক্ত মাত্রা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ফলে সবজি চাষে রাসায়নিক ব্যবহারের মাত্রা যতো বাড়বে মানবদেহের জন্য বিপদও বাড়বে তার সাথে পাল্লা দিয়ে।
জানা গেছে, সরকারের জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি সম্প্রতি শীতের সবজি ফুলকপি ও লালশাকের নমুনা নিয়ে এতে নানা রাসায়নিকের মাত্রা পরীক্ষা করেছে। ১ নভেম্বর থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত ফুলকপি এবং ১৬ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত লালশাকের নমুনার ওপর পরিচালিত গবেষণায় এ দুটি সবজিতে মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতিকর কীটনাশকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
ল্যাবরেটরি কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার জন্য কৃষক পর্যায়, পাইকারি বাজার এবং খুচরা বাজার থেকে দুটি সবজির একাধিক নমুনা সংগ্রহ করে। পরীক্ষার পর দেখা গেছে, কৃষক পর্যায়ের নমুনায় ফুলকপির ক্ষেত্রে ক্ষতিকর কীটনাশক ম্যালাথিয়নের অস্তিত্ব রয়েছে কেজিপ্রতি ২৫১ মাইক্রোগ্রাম। যার স্বাভাবিক মাত্রা কেজিপ্রতি ২০ মাইক্রোগ্রাম। অর্থাৎ অনেকেরই প্রিয় ফুলকপিতে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে ১২ গুণ বেশি কীটনাশকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। একইভাবে এতে ক্ষতিকর কীটনাশক ক্লোরোপাইরিফিস রয়েছে কেজিপ্রতি ১৬০৫ মাইক্রোগ্রাম। যার স্বাভাবিক মাত্রা ৫০ মাইক্রোগ্রাম। মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এ উপাদানটি রয়েছে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে ৩২ গুণ বেশি।
পাইকারি বাজার থেকে সংগৃহীত ফুলকপির নমুনায় ক্লোরোপাইরিফিসের মাত্রা পাওয়া গেছে কেজিপ্রতি ১৭০ মাইক্রোগ্রাম। একইভাবে প্যারাথিয়ন মিথাইলের উপস্থিতি রয়েছে ৭৯ মাইক্রোগ্রাম। যার স্বাভাবিক মাত্রা কেজিপ্রতি মাত্র ১০ মাইক্রাগ্রাম। অর্থাৎ মাত্রতিরিক্ত কীটনাশকের উপস্থিতি রয়েছে ৮ গুণ। খুচরা বাজার থেকে সংগৃহীত ফুলকপির নমুনা পরীক্ষায় ক্লোরোপাইরিফিসের উপস্থিতি মিলেছে কেজিপ্রতি ৫২০ মাইক্রোগ্রাম। এখানে স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ গুণ বেশি মাত্রায় এ ক্ষতিকর কীটনাশকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
একইভাবে খুচরা বাজার থেকে সংগৃহীত লালশাকের নমুনায় ক্লোরোপাইরিফিসের মাত্রা পাওয়া গেছে ১৫৭৭ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত। এর স্বাভাবিক মাত্রা হচ্ছে ৫০ মাইক্রোগ্রাম। ক্ষতিকারক কীটনাশকের অতিরিক্ত পরিমাণ এ সবজির ক্ষেত্রে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩১ গুণ বেশি।