কান্নায় মিললো সাড়া : দেড় ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে ফিরলো স্বস্তি

কামরুজ্জামান বেল্টু: ১২ বছর বয়সী সৌরভের শরীরে গেঁথে আছে ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প, অসহনীয় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে সে। মা কবিতা খাতুনসহ কয়েকজন তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে যখন নেয়, তখন ঘড়ির কাঁটা সাড়ে ১২টা। চিকিৎসক দেখেই বললেন, জরুরি অস্ত্রোপচার দরকার। কিন্তু হাসপাতালের এনেসথেসিয়া ডা. ডালিম ছুটিতে। অপারেশন হবে কীভাবে? অগত্যা রেফার্ড করা হয়।
দরিদ্র পরিবারের ছেলে সৌরভ। তার শরীরে স্ট্যাম্প গেঁথে থাকার দৃশ্য দেখে চোখে পানি ধরে রাখতে পারছেন কেউ। আর তার মা কবিতা খাতুন? ছেলেকে ওই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য শুধু চিকিৎসক নয়, সামনে যাকে পাচ্ছেন তাকেই অনুরোধ করছেন। ছেলের শরীর থেকে ওই লাঠি বের করে দিন, ছেলেকে সুস্থ করে দিন। কবিতা খাতুনের আহাজারিতে অবশ্য মুখ ঘুরিয়ে রাখতে পারেননি চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সার্জারি কনসালটেন্ট ডা. ওয়ালিউর রহমান নয়ন। তিনি দৃশ্য দেখে চমকে ওঠেন। বলেন, হাসপাতালে এনেসথেসিয়া নেই তাতে কি? মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের এনেসথেসিয়াকে তিনি নিজেই কল করে বিস্তারিত বর্ণনা দিলেন। শিশু ও মাতৃ কল্যাণ কেন্দ্রের এনেসথেসিয়া ডা. শফিকুল ইসলাম দ্রুত হাসপাতালে পৌছুলেন। জরুরিভাবে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে শুরু হলো অস্ত্রোপচার। দীর্ঘ প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে অপারেশন করে কিশোর সৌরভের শরীর থেকে অপসারণ করা হয় কাঠের বিশাল দণ্ডটি।
কীভাবে শরীরে গাঁথলো ওই ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প? চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের সিঅ্যান্ডবিপাড়ার দরিদ্র অটোচালক আহসান হাবীব আসনের ছেলে সোহরাব হোসেন (১২) এবার প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছে। রেজাল্টের অপেক্ষায় সে। গতকাল বুধবার সকালে সে তার বন্ধু একইপাড়ার সোহানসহ কয়েকজনের সাথে মহল্লার একখণ্ড ফাঁকা স্থানে ক্রিকেট খেলে। খেলা শেষে বাড়ি ফেরার সময় রাস্তার পাশের বৈদ্যুতিন খাম্বায় ওঠে। হাত আর পায়ের চাপে উঠলেও তার পেছনে ছিলো সোহান। তার হাতেই ছিলো স্ট্যাম্প (ক্রিকেট খেলার জন্য দু প্রান্তে ৩টি করে কাঠের যে লাঠি লাগে)। ওই স্ট্যাম্প দিয়ে পেছনে ঠেলা দেয়। সৌরভ খাম্বা থেকে নামতে শুরু করতেই তার শরীরের নিম্নাংশে লিঙ্গের নিচে গেঁথে নাভি পর্যন্ত ছুয়ে যায় স্ট্যাম্প। তাকে দ্রুত নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। তার পরই ফুটে উঠে অসহায়ত্ব। অবশ্য ডা. নয়নের বিশেষ আন্তরিকতায় কিশোর পেয়েছে চিকিৎসা। চিকিৎসক বলেছেন, সৌরভ এখন আশঙ্কামুক্ত। তার বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কাও কম।