জহির রায়হান সোহাগ/আলম আশরাফ: হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত দেশের উত্তরাঞ্চলে জেকে বসেছে শীত। ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শ্রীমঙ্গল, রাজশাহী, নওগাঁ ও পাবনার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া যশোরও ঝিনাইদহেও শীতের তীব্রতা কম নয়।
চুয়াডাঙ্গায় গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক শূন্যতে উঠলেও সর্বোচ্চ তাপ কিছুটা নেমে গতকাল ঠেকেছিলো ২৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা গতকাল শ্রীমঙ্গলে ৬ দশমিক ৩ ডিগ্রিতে নামে। যা চলতি শীত মরসুমের সর্বনিম্ন। শীতের কারণে শিশু ও বৃদ্ধরা আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন নানা রোগে। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় অল্প আয়ের মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলছে। শীতের কবল থেকে বাঁচার জন্য গ্রামাঞ্চলের লোকজন খড়কুটো জ্বালিয়ে গা গরম করছে। অনেকেই ইতোমধ্যে সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, আমাশয়সহ শীতজনিত নানাবিধ রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। এবার দুস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হলেও চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরে তেমন তোড়জোড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। গতকাল অবশ্য ইসলামী ব্যাংক মেহেরপুর শাখার উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদসহ বিভিন্ন স্থানের ফুটপাতের পুরোনো কাপড়ের দোকানগুলোতে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। লেপ-তোষকের দোকানগুলোতেও বেড়েছে কেনাকাটা। লেপ-তোষক তৈরির ধুম পড়েছে। ফলে ধুনূরীদের কাটছে ব্যস্ত সময়। চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের পোস্ট অফিসের সামনে, রেলবাজারে, পুরাতন জেলখানার পাশে, কলেজ রোডসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর ফুটপাতের দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, নানা ধরনের শীতের কাপড় উঠেছে সেখানে। বিক্রিও হচ্ছে মোটামুটি। ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকায় এখানে জনসাধারণের আগ্রহও ভালো। প্রয়োজনীয় পোশাক বেশ সহজেই কিনছেন ক্রেতারা। এসব দোকানে বিভিন্ন দামের ফুলহাতা শার্ট-টি-শার্ট, ট্রাউজার, নারীদের মোটা কাপড়ের টপস আর বিভিন্ন ডিজাইনের কার্ডিগান বা পশমী জামা পাওয়া যাচ্ছে। হাতাকাটা সোয়েটার, লং জ্যাকেট, শাল, মাফলার, উলের মোটা কাপড়, শর্ট ও লং ব্লেজার, জ্যাকেট আর ব্লেজারের মিশ্রণে তৈরি নতুন ধরনের শীতের পোশাকও পাওয়া যাচ্ছে। একই সাথে আছে কাপড়ের সাথে মিলিয়ে শীতে ব্যবহার উপযোগী জুতো, মোজা ও বাহারি ডিজাইনের কম্বল ইত্যাদি। বিলাসবহুল মার্কেটের গলাকাটা দামের ভয়ে যেতে চান না মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্তের অনেকেই। তাদের পছন্দ ফুটপাতের এই বাজার। এছাড়া অফিসের কাজের ফাঁকে কেনাকাটা বা কাজের জন্য শহরে এসে ফেরার সময় কেনাকাটার এমন সব মানুষদেরও হাতের নাগালের এই দোকানগুলোই পছন্দ। আর এজন্যই জমে উঠেছে ফুটপাতের এসব বাজার। ফুটপাতের দোকানগুলোতে চায়নার বিভিন্ন ধরনের শাল ও চাদরের দাম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, দেশীর মধ্যে ভালো চাদরের দাম ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। শীতের শাল ৪০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। উলের তৈরি সোয়েটার বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ৩০০ টাকায়, কাপড়ের জুতো ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা, জ্যাকেট ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, ট্রাউজার ১৩০ থেকে ৩০০ টাকা, গরম কাপড়ের তৈরি প্যান্ট ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, পা-মোজা ৩০ থেকে ৮০ টাকা, হাইগলা গেঞ্জির দাম ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, টুপিওয়ালা গেঞ্জি দাম ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা ও মাফলার পাওয়া যাচ্ছে ৪০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে। এছাড়া হাতমোজা জোড়া প্রতি ৫০ থেকে ৮০ টাকা, কান টুপি ছোটদের জন্য ৪০ টাকা এবং বড়দের জন্য ৬০ টাকা থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা পোস্ট অফিসের সামনের ফুটপাতে পোশাক ক্রয়কালে লাভলুর রহমান জানান, ফুটপাতের এই বাজার অনেকটা সহজ ও সুবিধাজনক বলে এখানেই সেরে নিচ্ছি।
কার্পাসডাঙ্গা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদা কার্পাসডাঙ্গা ও আশপাশ এলাকাসহ শীত এলেই প্রায় প্রতি বছরেই শীতবস্ত্র বিতরণে এগিয়ে আসেন রাজনৈতিক, সামাজিক, এনজিওসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এবার প্রচণ্ড শীতে এলাকার হতদরিদ্র মানুষের যবুথবু অবস্থা হলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। অনেকেই বলেছেন রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেই শীতবস্ত্র বিতরণে এগিয়ে আসছে না কেউ। এলাকা ঘুরে দেখা গেছে কার্পাসডাঙ্গাসহ আশপাশের এলাকার বেশিরভাগ মানুষই বসবাস করে দারিদ্র সীমার নিচে। ফলে শীতবস্ত্র কিনতে হিমসিম খেতে হয় তাদের। তাই প্রচণ্ড শীতে কাহিল হয়ে পড়েছে এলাকার মানুষেরা। এই হতদরিদ্র মানুষেরা তাকিয়ে আছে শীতবস্ত্র কেউ বিতরণ করে কি-না।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি. মেহেরপুর জেলা শাখার উদ্যোগে মেহেরপুরের দুই শতাধিক অসহায়-দুস্থ ও হতদরিদ্র শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ইসলামী ব্যাংক কার্যালয়ে ওই শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি. খুলনা বিভাগীয় প্রধান আবু নাসের মোহাম্মদ নাজমুল বারী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন। এ সময় মেহেরপুর শাখার ম্যানেজার এএইচএম মোস্তফা কামাল, সেকেন্ড অফিসার আজিজুল ইসলাম, বিনিয়োগ অফিসার আলী হাসানসহ ব্যাংকের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। শীতবস্ত্র বিতরণকালে প্রধান অতিথি বলেন, এলাকায় অনেক শীতার্ত মানুষ রয়েছেন। যারা শীতবস্ত্র কিনতে পারেন না, অনেক কষ্টে জীবন যাপন করেন তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়াতে সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।