গাংনীর আমতৈল গ্রামে বাল্যবিয়ের আয়োজন : গ্রাম্য মাতবর ও কনের পিতা শ্রীঘরে

গাংনী প্রতিনিধি: বাল্যবিয়ে দিয়ে বর-কনে অভিভাবকদের পর এবার ফেঁসে গেলেন এক গ্রাম্য মাতবর। বাল্যবিয়ের আয়োজনের সাথে জড়িত থাকার অপরাধে কনের পিতা দরবেশ আলীর (৫৫) পাশাপাশি গ্রাম্য মাতবর লোকমান হোসেনকে (৪৫) ২৫ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতরাত ৯টার দিকে মেহেরপুর গাংনী উপজেলার আমতৈল গ্রামে কনের পিতা লোকমান হোসেনের বাড়িতে ওই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন গাংনী সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাহাত মান্নান।
ভ্রাম্যমাণ আদালতসূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী সুরাইয়া খাতুনের সাথে রাইপুর ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের রতন নামের এক যুবকের বিয়ে ঠিক হয়। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় বর পক্ষ কনের বাড়িতে দেখতে আসে। কনে পছন্দ হওয়ায় রাতেই বিয়ে জন্য সম্মত হয় বর-কনে পক্ষ। খবর পেয়ে গাংনীতে কর্মরত কয়েকজন সাংবাদিক বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল আমিনকে অবগত করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাৎক্ষণিক তার প্রতিনিধি হিসেবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাহাত মান্নানকে ঘটনাস্থলে প্রেরণ করেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান টের পেয়ে বর ও বরযাত্রীরা পালিয়ে গেলেও ধরা পড়েন কনের পিতা দরবেশ আলী। বাল্যবিয়ের আয়োজনের অপরাধ করে ও ভ্রাম্যমাণ আদালতে প্রভাব বিস্তারের অপচেষ্টা করেন বিএনপি থেকে সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগে যোগদানকারী গ্রাম্য মাতবর লোকমান হোসেন। তবে প্রভাব বিস্তার করতে গিয়ে তিনি নিজেই পড়লেন গ্যাড়াকলে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের আদেশে লোকমান হোসেনকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনে দরবেশ ও লোকমানকে দোষি সাব্যস্ত করে প্রত্যেককে ২৫ দিনের কারাদণ্ডাদেশ দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাহাত মান্নান।
এদিকে দণ্ড ঘোষণার পর টনক নড়ে লোকমানের। তখন নিজের দাম্ভিকতাকে লুকিয়ে এক জনাকীর্ণ পরিবেশে করজোরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ আদালত আদেশে অনড় থাকায় রাতেই দরবেশ ও লোকমানকে নেয়া হয় গাংনী থানা কাস্টডিতে। আজ সোমবার তাদেরকে মেহেরপুর জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হবে বলে জানান ভ্রাম্যমাণ আদালতের পুলিশ ফোর্সের টিম লিডার এসআই নাসির উদ্দীন।
উল্লেখ্য, আগামী ১ জানুয়ারি মেহেরপুর জেলাকে বাল্যবিয়ে মুক্ত ঘোষণা করার লক্ষ্যে প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত নিয়ে বাল্যবিয়ে মুক্ত ইউনিয়ন ঘোষণা করা হচ্ছে। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ কল্পে মাঝে মধ্যেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে বর-কনের অভিভাবকদের জেল জরিমানা অব্যাহত রয়েছে। ওই অভিযানের অংশ হিসেবেই গতরাতে আমতৈল গ্রামে অভিযান চালানো হয় বলে জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার।