চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের উত্তরবঙ্গে জেঁকে বসেছে তীব্র শীত
দেশজুড়ে শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা
স্টাফ রিপোর্টার: মেঘলা কাটতে না কাটতে চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের উত্তরবঙ্গে জেঁকে বসেছে শীত। তাপমাত্রা তরতর করে হ্রাস পাচ্ছে। শীতে জবুথবু হয়ে পড়ছে প্রাণীকুল। দরিদ্র্য দিন মজুরদের দুর্ভোগের শেষ নেই। অবশ্য স্বল্প হলেও চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরে দুস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হয়েছে। অপরদিকে আবহওয়া অদিধদফতর পুর্বাভাসে বলেছে, শ্রীমঙ্গল রংপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদ্যু শৈত্যপ্রবাহ। সারা দেশে এ শৈত্যপ্রবাহত বিস্তার লাভ করতে পারে। এদিকে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির সাথে সাথে চুয়াডাঙ্গার গরম পোশাকের দোকানে বেড়েছে বেচা-বিক্রি। রাস্তার পাশে নতুন পুরাতন গরম পোশাক নিয়ে বসা বিক্রেতাদেরও বিকেলে সামলাতে হচ্ছে বাড়তি ভিড়। প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাট বাজারেও গরম পোশাক কেনার ধুম পড়েছে।
গতকাল শনিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো উত্তরবঙ্গের ডিমলায় ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো টেকনাফে ২৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ ২৩ দশমিক ৭ ও সর্বনিম্ন ১০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। গত কয়েকদিন আকাশ মেঘলা ও বৃহস্পতিবার রাতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে মরসুমের শুরুতে কুমড়ো কলাই বেটে বড়ি দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েই হোঁচট খেয়েছেন বহু পরিবারের গৃহিণী। অবশ্য ফ্রিজের বর্দৌলতে ক্ষতির মাত্রা কিছুটা কমেছে। এখনও কয়েকদিন দেখে তথা আবহাওয়ার মতিগতি বুঝেই বড়ি দেয়ার প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে অভিজ্ঞমহল। অবশ্য দু-একদিনের মধ্যেই বড়ি দেয়ার মতো রাতে তীব্র শীত আর দিনে রোদের ঝিকিমিকি বদলে দিতে পারে বর্তমান পরিস্থিতি। তবে সকালে ও মাঝরাতে নদী অববাহিকায় ঘন ও হালকা কুয়াশা পড়তে পারে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহে আরেকটি শৈত্য প্রবাহ আসছে। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, সপ্তাহের শুরুতে ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে। আবহাওয়া বিভাগ জানায়, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। শ্রীমঙ্গল অঞ্চলসহ রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে ও তা অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া রাজশাহী, খুলনা ও ঢাকা বিভাগের কিছু কিছু এলাকায় শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। পূর্বাভাসে বলা হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশের রাতের তাপমাত্রা এক থেকে দু ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। ইতোমধ্যে রংপুর বিভাগে শৈত্যপ্রবাহের কারণে জীবন যাত্রা থমকে পড়ার উপক্রম হয়েছে। দুদিনের শৈত্যপ্রবাহে রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় তাপমাত্রা হ্রাস পেয়েছে। শনিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে নীলফামারীর ডিমলায় ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকার কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। এদিকে গতকাল ঢাকার একটি পত্রিকার সম্পাদককের নিজ গ্রাম দামুড়হুদার কুড়ুলগাছিতে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। সাংবাদিকদের অনেকেই উপস্থিত থেকে আবুল হাসেমের পক্ষে শীতবস্ত্র এলাকার দুস্থদের মাঝে তুলে দেন।
শনিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রংপুর বিভাগের ডিমলায় ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রংপুর বিভাগের রাজারহাটে সর্বনিম্ন ৯, দিনাজপুরে ৯ দশমিক ৪, সৈয়দপুরে ৯ দশমিক ৭ ও রংপুরে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আর শ্রীমঙ্গলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এক থেকে দুটি মৃদু বা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।
কার্পাসডাঙ্গা এলাকার ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি জানিয়েছে, পৌষের শুরুতেই কনকনে শীত পড়তে শুরু করেছে। এ শীত মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি শুরু করেছে এলাকার মানুষ। শীত আসার সাথে সাথে শীতের পোষাক কেনার ধুম পড়ে যায়। বিশেষ করে ফুটপাতে পুরোনো পোষাকের দোকানে নানা রকম পোশাক সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা বাজারের সড়কের ধারে অসংখ্য পুরাতন কাপড়ের দোকানে পাওয়া যাচ্ছে জ্যাকেট, সোয়েটার ও নানান রকম শীতের পোষাকের পসরা সাজিয়ে খানেকটা আগেভাগেই বসে গেছে দোকানিরা। এলাকার দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়ায় সেই সাথে পুরোনো পোষাকের মূল্য কম থাকায় এসব পোষাকের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন দরিদ্র মানুষেরা। এ বিষয়ে পুরোনো পোষাক ব্যবসায়ী নিউটনের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ভাগ্যের ওপর ভরসা করে পুরোনো কাপড়ের গাইট কিনি, এতে যদি ভালো পোষাক থাকে তা হলে লাভ হয় আর যদি নিম্নমানের পোষাক থাকে তা হলে গুনতে হয় লোকসান। শীত যতোই ঘনিয়ে আসছে ততোই বাড়ছে দোকানের সংখ্যা সেই সাথে বাড়ছে ক্রেতাও।