শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় পালিত হলো শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় পালিত হলো শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস
স্টাফ রিপোর্টার: বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় জাতি গতকাল স্মরণ করেছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের। এ উপলক্ষে রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ফুলে ফুলে ভরে ওঠে। সকালে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলীয় নেতাদের সাথে নিয়েও শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি। একই সময় রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধের শহীদবেদিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সদস্যবর্গসহ নানা বয়সের হাজারো মানুষ জড়ো হন মিরপুর আর রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধে। তাদের হাতে ছিলো জাতীয় পতাকা আর কণ্ঠে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের চিহ্নিত ঘাতকদের বিচারের রায় পর্যায়ক্রমে কার্যকর করায় সন্তুষ্টি। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, চিকিৎসক, শিল্পী, লেখক, প্রকৌশলী আইনজীবী, সাংবাদিকসহ বহু খ্যাতিমান বাঙালিকে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করে রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরা। পরে শরীরে নিষ্ঠুর নির্যাতনের চিহ্নসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের লাশ পাওয়া যায় মিরপুর ও রায়েরবাজার এলাকায়। মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সকাল ৭টা ৫৫ মিনিটে সর্বপ্রথম মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। রাষ্ট্রপতির পর শহীদবেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়। তিন বাহিনী প্রধান, মন্ত্রিসভার সদস্য ও সংসদ সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় শেখ হাসিনার সাথে ছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, মতিয়া চৌধুরী, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আ ক ম মোজাম্মেল হক, শাজাহান খান, মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, ড. আবদুর রাজ্জাক, ইকবালুর রহিম প্রমুখ। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের সাথে কুশল বিনিময় করেন। এরপর জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এইচ এম এরশাদ দলীয় নেতাদের নিয়ে শহীদবেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে ১৪ দলের শরিকরা বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানান। সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে শ্রদ্ধা জানান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, রুহুল কবির রিজভী আহমেদ ও অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া উপস্থিত ছিলেন। সকাল সোয়া ৮টার দিকে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ খুলে দেয়া হয়। বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ছাড়াও সর্বস্তরের মানুষ শহীদবেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে প্রথম প্রহরে মোমবাতি জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে কয়েকটি সংগঠন। সকাল সাড়ে ৭টার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন সারিবদ্ধভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। একপর্যায়ে রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধ মুখরিত হয়ে ওঠে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পদচারণে। অনেকে পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে শহীদবেদিতে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন।
একাত্তরে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে এ বধ্যভূমিতে যেভাবে ফেলে রাখা হয়েছিলো অভিনয়ের মাধ্যমে মূল বেদির পাশে সেই দৃশ্যের অবতারণা করেন কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের সদস্যরা। খোলা একটি জায়গায় সারিবদ্ধভাবে রাখা হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ছবি। সেখানেও অনেককে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায়। স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যান ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতির সামনে। তিনি বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সাথে দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ ও ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে শ্রদ্ধা জানানো সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-৭১, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, বাসদ, গণফোরাম, এলডিপি, সাম্যবাদী দল, জেএসডি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, জাকের পার্টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ, বিএমএ, ঢাকা আইনজীবী সমিতি, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগ, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ, যুব মৈত্রী, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, জয় বাংলা সাংস্কৃতিক জোট, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, বঙ্গবন্ধু নাগরিক সংহতি পরিষদ, মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগ, গণমুক্তি আন্দোলন।
রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধ: এখানে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, ড. আবদুর রাজ্জাক, আহমদ হোসেন প্রমুখ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানান উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। আরও শ্রদ্ধা নিবেদন করে মুক্তিযোদ্ধা সুপ্রিম কমান্ড কাউন্সিল, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন সংগঠন ও রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বেলা বাড়ার সাথে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় স্মৃতিসৌধ এলাকা। ফুলে ফুলে ভরে যায় স্মৃতিসৌধের মূল বেদি।