স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুতগতিতে। নির্ধারিত সময়ের আগেই পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করাকে সরকার দৃশ্যত চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছে। গত দুই বছরে রাজনৈতিক সহিংসতা, হরতাল, অবরোধের সময়ও সেতু নির্মাণের কাজ চলেছে স্বাভাবিক সময়ের মতো একই তালে একই লয়ে। ইতোমধ্যে সেতু প্রকল্পের ২৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূল সেতুর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছেন আনুষ্ঠানিকভাবে। সকালে শরীয়তপুরের জাজিরায় নদী শাসন এবং দুপুরের পর মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় মূল সেতুর পিলার বসানোর কাজ উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী এক বিশাল জনসমাবেশে তাত্পর্যপূর্ণ একটি মন্তব্যও করেছেন। বলেছেন, ‘আমি চেয়েছিলাম আমরাও পারি তা দেখাব। আজ আমরা সেই দিনটিতে এসে পৌঁছেছি।’
পদ্মা সেতু বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষের জন্য এক স্বপ্নের সেতু। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুটি নির্মিত হলে তা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেতুতে পরিণত হবে। ২১টি জেলার সাথে সড়কপথে রাজধানীর সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিলো দেড় দশক আগে। ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ স্বপ্নের সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কিন্তু শুরুতেই স্বপ্ন পূরণে দেখা দেয় প্রতিবন্ধকতা। ওই বছরের সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের কাছে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়। ভেস্তে যায় সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা।
২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব নেয়ার পর স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন। বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা ঋণ সহায়তার প্রস্তাবও পাওয়া যায়। কিন্তু হঠাৎ করেই বিশ্বব্যাংক ঋণ সহায়তার প্রস্তাব থেকে পিছু টান দেয়। অজুহাত হিসেবে খাড়া করা হয় সম্ভাব্য দুর্নীতির অভিযোগ। যে প্রকল্পে তারা কোনো অর্থ ছাড় দেয়নি সে অর্থ নিয়ে দুর্নীতি কীভাবে হয় সে প্রশ্ন তুলে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবাদও জানানো হয়। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের এ ‘রাজনীতি’ সরকারকে হতাশ করার বদলে ইচ্ছা পূরণে সাহসী করে তোলে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন প্রধানমন্ত্রী। ২৯ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে প্রমাণ হবে বাংলাদেশও পারে, পেরেছে। অপরের দয়া ছাড়াই নিজস্ব অর্থায়নেও যে পদ্মা সেতুর মতো বিশাল প্রকল্প বাস্তবায়ন করার সক্ষমতা বাংলাদেশ অর্জন করেছে সেটিও প্রমাণিত হবে।