চুয়াডাঙ্গায় বিজয় মেলা উদ্বোধনের সময়ই আয়োজকেরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন, যাতে শব্দদূষণ না হয় সেদিকে সর্বাত্মক নজার রাখা হবে। প্রাথমিক থেকে শুরু করে মাধ্যমিক পর্যায়ে বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। এর মাঝে মেলার মাঠের ওই লটারি ছেড়েছে কয়েক ডজন মাইক, তাতে কতোটা বিরক্তের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তা গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে অংশ বিশেষ উঠে এসেছে। প্রতিবেদন পাঠ আয়োজকরা নিশ্চয় শব্দদূষণ রোধে উদ্যোগী হবেন। এ প্রত্যাশা অতিরঞ্জিত নয়, কারণ- মেলার আয়োজক বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চুয়াডাঙ্গা জেলা ও উপজেলা ইউনিট। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা নিশ্চয় সঠিক সিদ্ধান্তটিই নেবেন।
এমনিতেই লটারি নামের জুয়োর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন। মেলা বলে কথা। মেলায় শুধু রেশমি চুরির দোকান থাকলে চলে? সার্কাস, যাত্রা যেমন লাগে, তেমনই চিত্তরঞ্জনের সমাজ স্বীকৃত ব্যবস্থা থাকতে হয়। নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, মেলার মাঠে এখন আর সেই আগের মতো শিশু শিক্ষনীয় বিষয়গুলো পাত্তা পায় না। দর্শনীয় ফল,ফলারীও প্রদর্শন হয় না। কালক্রমে দিন বদলানোর বাতাসে ওসব উবে গেছে। এসেছে র্যাল লটারি। এ ব্যবসায় যারা নিয়োজিত তাদের অজানা নয়, ‘যতো প্রচার, ততো প্রসার।’ ব্যবসা যখন জমেছে, তখনো আরো জমাতে প্রচার মাইকের ভলিয়ম বাড়াতে দোষ কী? ভলিয়মই শুধু নয়, মাইকের সংখ্যা বাড়িয়ে প্রচারের পরিধি বাড়ালে লাভের সম্ভাবনা বেশি। ফলে ব্যবসায়ীরা তাদের মতো করেই প্রচার প্রসারে মেতেছে। এতে, মেলার আয়োজকদের সেই উদ্বোধনী দিনে দেয়া প্রতিশ্রুতি যে ভঙ্গ হচ্ছে, সেটা ওরা বুঝবে কিভাবে? বোঝানোর দায়িত্ব অবশ্যই আয়োজকদের। পত্রিকায় প্রকাশের অর্থ আয়োজকদের চোখের সামনে মেলে ধরা।
চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে এমনিতেই সুস্থ বিনোদনের তেমন ব্যবস্থা নেই। নেই চিত্তবিনোদনের তেমন স্থান। বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়ার মতো সবুজে ঘেরা বাগানগুলো দিন দিন জনসংখ্যা বিস্ফোরণে বিলীন হচ্ছে। গড়ে উঠছে কংক্রিটের শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ। এর মাঝে একটু বিনোদনের আয়োজন দোষের কী? অবশ্যই প্রগতিশীল মনের মানুষ তেমনটি চায়, যেমনটি পেলে একটু সময় সুন্দর হয়, নিজেকে একটু রাঙানো যায়। মেলা মানে, তেমনটিই হওয়ার কথা। অর্থলিপ্সুতা বা অধিক লাভের আশায় আয়োজনটা হয়ে উঠে অন্যরকম। হচ্ছেও তাই। এতে প্রগতিশীলতার পথে বিরূপ প্রভাব পড়ে, সুবিধা লুটে মৌলবাদ। শিশু শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার সময় শব্দদূষণ অবশ্যই সুন্দর সমাজ গঠনে অন্তরায়।