অতোগুলো পাখি হত্যা করা হলো, মামলা হবে না? প্রশ্ন আছে, জবাবটা আমাদের সমাজের বাস্তবতায় সত্যিই বড্ড ঝাপসা। হতাশার। অথচ স্পষ্ট আইন রয়েছে। রয়েছে আইন প্রয়োগের লোকবলও। তা হলে কেন আইনগত পদক্ষেপে গড়িমসি? এ প্রশ্নর পরপরই যে প্রশ্নটি এখন আমজনতাকে কুরে কুরে খায় তাহলো- তবে কি জবাবদিহিতার অভাবেই দায়িত্বশীলদের অধিকাংশকেই করেছে অলস, উদাসীন? অবশ্যই একটু ঘুরে দাঁড়ানো দরকার, দরকার আমাদের তথা মানবজাতির জন্যই। দায়িত্বশীলদের একটু কর্তব্যপরায়ণ করতে না পারলে প্রজন্মের কাঠগড়ায় এই বর্তমানকে শুধু দোষী সাব্যস্তই হতে হবে না, পুরো মানবজাতিকে বিপন্নের দিকে ঠেলে দেয়ার দায়ভারটাও পড়বে কর্তাদেরই ঘাড়ে। খেসারত অবশ্য আমজনতার।
সব প্রাণীর মধ্যেই বোধ হয় আমিত্বভাবটা রয়েছে। তার মধ্যে মানুষের একটু বেশিই। আমি, আমরা তথা আমাদের বাঁচাতেই যেন ব্যস্ত। অথচ পরিবেশ রক্ষা করতে না পারলে ধরিত্রীই থাকবে না। যে ধরিত্রীর বুকে বিচরণ আমাদের। ধরিত্রী না থাকলে আমি, আমরা বা আমাদের অস্তিত্ব থাকবে কোথায়? আমিতো ভালো আছি! ভেবে তৃপ্তির ঢেকুর তোলা আমাদের যেন অনেকেরই স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা না হলে যেখানে সেখানে বিষপ্রয়োগ করে পশুপাখি হত্যা করছি কেন? বন্যপ্রাণী হত্যা রোধে দেশে প্রচলিত আইন রয়েছে, সেই আইন কেন গত দুদিন ধরে নীরব? চুয়াডাঙ্গা জেলা শহর সংলগ্ন বিএডিসি খামার ও খামার এলাকায় বহু পাখপাখালি মরে পড়ে থাকতে দেখে সঙ্গত কারণেই বিবেকবানদের এ প্রশ্ন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বপনকৃত গমবীজে মাত্রাতিরিক্ত বিষ মাখানোর কারণেই কয়েকশ ঘুঘু, চড়ুই, শালিক, কবুতর, মুরগি মারা গেছে। বিষের তীব্রতা এতোটাই ভয়াবহ যে, বিষক্রিয়ায় মারা যাওয়া পাখি খেয়ে কুকুরও মারা গেছে। যে জমিতে বপন করা গমবীজ খেয়ে এ বিপর্যয়, সেই জমি কোনো মুর্খের নয়। অভিযোগকারীরা বলেছেন, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন তথা বিএডিসি’র তত্ত্বাবধানে পরিচালিত খামারের। যদিও এ খামারের একজন কর্মকর্তা বপনকৃত গমবীজে বিষ মাখানোর কথা অস্বীকার করে বলেছেন, বহিরাগত পাখি শিকারীদের রাখা বিষ খেয়েই এতো পাখপাখালির মৃত্যু হয়েছে। অবশ্য স্থানীয়দের দাবি, এবারই বিষ মাখানো গমবীজ বপন প্রথম নয়। তাহলে এবার অতো পাখি মারা গেলো কেন?
কিছ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে পাওয়া গেছে, বহু তথ্য। পূর্বেও বিষমাখানো বীজ বপন করা হয়েছে, তবে তাতে এবারের মতো অতোটা ভয়াবহতা ফুটে ওঠেনি, পরিলক্ষিত হয়নি। কারণ, পূর্বে বিষ মাখানো গমবীজ বপনের একদিন আগেই খামার এলাকায় বসবাসকারী পরিবারগুলোকে সতর্ক করে বলা হতো, গমবীজ বপন করা হবে, হাস-মুরগি দু’চারদিন একটু আটকে রেখো। প্রতিবেশীদের সতর্ক করার পাশাপাশি বপনকৃত জমিতে রাখা হতো লোকবল। পাখি বসলেই তাড়ানো হতো। থাকতো কাকতাড়ুয়াও। এবার তা হয়নি বলেই অতোগুলো পাখিকে মরতে হলো। এসব তথ্য অবশ্য স্থানীয় সচেতনদের নিকট থেকেই পাওয়া। তার পরও প্রকৃত ঘটনা জানার জন্য দরকার সুষ্ঠু তদন্ত। প্রকৃত দায়ীর উপযুক্ত শাস্তি। দরকার পাখপাখালির শতভাগ নিরাপত্তা।