আলমডাঙ্গা ব্যুরো/জামজামি প্রতিনিধি: আলমডাঙ্গার বানিনাথপুর গ্রামের ৩ বছরের শিশু এনামুল হত্যা মামলার আসামি ফজলুর বাড়ি ভাঙচুর করে মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। পানবরজ ও গাছপালা কেটে সাবাড় করা হয়েছে। রাগে-ক্ষোভে বানিনাথপুর ও পার্শ্ববর্তী গ্রামবাসী গতকাল মঙ্গলবার ভোরে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আসামিদের রিমান্ডে নিয়েও স্বীকারোক্তি আদায়ে পুলিশের ব্যর্থতা ও মামলাটি দ্রুত আইন ট্রাইব্যুনালে না পাঠানোর কারণে বিক্ষুব্ধ হয়ে এলাকাবাসী ফজলুর বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় গ্রামবাসী ফজলুর বাড়ি থেকে রক্ত মাখা একটি বস্তা,সায়া ও বাথরুমের স্লাবের নিচ থেকে বস্তার ভেতর লুকিয়ে রাখা দুটি ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করেছে।
৩ বছরের অবুঝ শিশু এনামুলকে নৃশংসভাবে জবাই করে হত্যার ঘটনায় একই পরিবারের ২ শিশুসহ সন্দেহভাজন ৭ আসামিকে বিচারের কাঠগড়ায় সোপর্দ করা হয়েছে। এ সত্ত্বেও মামলাটি কচ্ছপ গতিতে এগুচ্ছে বলে কেউ কেউ উস্কানিমূলক নানামুখী প্রোপাগান্ডার কারণেই ঘটেছে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ। গ্রামবাসী মধ্যরাতে একত্রিত হয়ে আইনের প্রতি ধৃষ্টতাস্বরূপ মানব শূন্য বাড়িতে ঢুকে হামলা চালানো হয়েছে। ঘর-গৃহস্থালিতে চড়াও হয়ে ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ ঘটিয়েই ক্ষান্ত হতে পারেনি হামলাকারীরা। অভিযোগে উঠেছে, মাঠের ধান, পানবরজ ও গাছপালা কেটে মধ্যযুগীয় বর্বরতার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে আলমডাঙ্গা থানার ওসি তদন্ত সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। গ্রামবাসীরা বলেছে শিশু এনামুলকে নৃশংসভাবে হত্যা করে আসামিরা পার পেতে পুলিশকে ম্যানেজ করছে এ ধরনের কথাবার্তা ছড়ানো কারণেই বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী এই ন্যাক্কার জনক হামলা করে। এলাকাবাসী চায়, সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া কয়েকটি শিশু হত্যার বিচারের ন্যায় এনামুল হত্যার বিচার দ্রুততার সাথে সম্পন্ন হোক ।
বাড়ি ঘরে ভাঙচুরের সময় টয়লেটের পাশে মাটিতে পুঁতে রাখা হেঁসো ও বটি ও পেটিকোট পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এ ঘটনায় তুমুল উত্তজনা ছড়িয়েছে।
আলমডাঙ্গার জামজামি ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড মেম্বার নুর ইসলামের ছেলে এনামুল গত ২০ নভেম্বর সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। রাতে প্রতিবেশী মৃত শাহাদত মন্ডলের ছেলে ফজলু মণ্ডলের বাড়ির উঠোন সংলগ্ন পানবরজে সারির মাঝে রক্তাক্ত জবাই করা শিশু এনামুলের লাশ পড়ে থাকতে দেখে আঁতকে ওঠে পরিবার। ছুটে আসে গ্রামবাসী। পুরোনো বিরোধের জের ধরে পানবরজ মালিক নিহতের পরিবারের অভিযোগের মুখে হত্যাকারী সন্দেহে প্রতিবেশী পানবরজ মালিক ফজলু, স্ত্রী খালেদা, ছেলে রেজাউল ও জামাই নায়েব আলীকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা কাস্টডিতে নেয়। পরদিন গ্রামবাসীর হাতে উদ্ধার হয় রক্ত সাদৃশ্য দাগের ভেজানো লুঙ্গি। ফজলুর কনিষ্ঠ ছেলে আলামিন ও ছেলে রেজাউলের শিশু সন্তানসহ স্ত্রী পারুলাকে পরদিন রোববার আদালতে সোপর্দ করে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ। সেই থেকে তারা রয়েছেন জেলহাজতে। সূত্র জানিয়েছে গত সোমবার দিনগত রাতে গ্রামবাসী মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে জড়ো হয়। এরপর হাজতি আসামি ফজলু মন্ডলের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে ও শেষাবধি ঘরে আগুন ধরিয়ে ঘর গৃহস্থালি পুড়িয়ে দেয়। এ নিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রক্তমাখা বস্তা ও রক্তে চোবানো সায়া উদ্ধার করেছেন বানিনাথপুরের ইছাহক আলীর স্ত্রী ডলি খাতুন ও মসলেম আলির স্ত্রী সাজেদা খাতুন। ভাঙচুর করার সময় তারা ঘটনাস্থলে গেলে রক্তমাখা বস্তা ও রক্তে চোবানো সায়া দেখতে পান। এছাড়া বাথরুমের স্লাবের পেছনে লুকিয়ে রাখা বস্তা থেকে দুটি ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করেছে একই গ্রামের আফজাল আলী। গতকাল মঙ্গলবার ভোরবেলা হামলার ঘটনা ঘটে। তবে কার নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে তা গ্রামের কেউ বলতে চায়নি। কিছু আসামিকে পুলিশ আর কিছু আসামি গ্রামবাসী ধরে থানায় সোপর্দ করে। পুলিশের হাতে প্রমাণ থাকার পরও পুলিশ আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে কিছুই স্বীকার করাতে পারেনি এমন অভিযোগে ক্ষুব্ধ হয় এলাকাবাসী। এমন ভয়াবহ ও নির্মম হত্যাকাণ্ডের আসামিদের মাত্র ২ দিনের রিমান্ড নেয়া হলো। পুলিশের এমন ব্যর্থতা ও মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে না দেয়ার অভিযোগে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী ও পার্শ্ববর্তী নারায়ণপুরের কিছু বিক্ষুব্ধ মানুষ এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অনেকেই জানিয়েছেন।