দর্শনায় সেলুনে চুল কাটানো ও হোটেলে খাওয়াকে কেন্দ্র করে তুলকলাম কান্ড

দর্শনা অফিস: হরিজন সম্প্রদায়ের সদস্যরা অধিকার আদায়ে লড়ছে বেশ কিছুদিন ধরে। বৈষম্য বিলুপ্ত আইন বাস্তবায়ন, সেলুনে চুল-দাড়ি কামানো, হোটেল-রেস্তোরা ও চায়ের দোকানে খেতে দেয়ার ব্যবস্থাসহ নানা দাবি পূরণে সরকারের সম্মতি পেলেও সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে তা হয়নি বাস্তবায়ন। এ অধিকার বাস্তবায়ন যেমন ছিলো সময়ের অপক্ষামাত্র, তেমনি তড়িত দাবি পূরণে নাছোড় হয়ে পড়েছে হরিজন সম্প্রদায়ের সদস্যরা। হরিজন ঐক্য পরিষদের সভাসমাবেশ রয়েছে অব্যাহত। এরই মধ্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান চুয়াডাঙ্গা পরিদর্শনকালে হরিজনদের দাবি পূরণে সোচ্চার হওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাদের সাথে মতবিনিময় করেন। হঠাত করেই দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে স্থানীয় পুলিশ ও কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে দর্শনা রেলবাজারে আসেন। এ সময় সাথে থাকা হরিজন সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকজন যুবককে বাজারের দুটি সেলুনে চুল ও দাড়ি কামানোর জন্য নির্দেশ দেন ইউএনও ফরিদুর রহমান। নরসুন্দররা হরিজনদের দাড়ি চুল কামানোর ক্ষেত্রে আপত্তি জানালেই ভ্রম্যমাণ আদালতের বিচারকের নির্দেশ মোতাবেক বাধ্য হয়েই চুল কাটতে শুরু করে। এক ব্যবসায়ী আপত্তি তুললে তাকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে করা হয় জরিমানা আদায়। এতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সাথে সাথেই ঘটে ক্ষোভের বহির্প্রকাশ। মুহূর্তের মধ্যে প্রতিবাদ গড়ে তোলে বাজারের ব্যবসায়ীরা। ৫ মিনিটের ব্যবধানে দর্শনা রেলবাজারের সমস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। শুরু হয় বিক্ষোভ। বিক্ষুদ্ধ ব্যবসায়ীদের তোপের মুখে পড়তে হয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফরিদুর রহমানসহ কর্মকর্তাদের। পুলিশকে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে। ঘোলাটে পরিস্থিতি ও ব্যবসায়ীদের শান্ত করতে ঘটনাস্থলে পৌঁছান মেয়র পদপ্রার্থী আলী মুনসুর বাবু, নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব গোলাম ফারুক আরিফ, দর্শনা রেলবাজার দোকান মালিক সমিতির সভাপতি তোফাজ্জেল হোসেন, সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন রতন, সাধারণ সম্পাদক সাবির হোসেন মিকা, যুগ্মসম্পাদক আবুল বাশার, কোষাধ্যক্ষ মোখলেসুর রহমানসহ নেতৃবৃন্দ। ব্যবসায়ীদের কিছুটা শান্ত করে নেতৃবৃন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ কর্মকর্তাদের সাথে করে বাজার থেকে বেরিয়ে আসেন। দর্শনা ব্যাংকের সামনে আবারো সমবেত হয় ব্যবসায়ীরা। শুরু হয় হ হট্টগোল। দ্বিতীয় বারের মতো ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ কর্মকর্তাদের। এক পর্যায়ে নেতৃবৃন্দ উপজেলা প্রশাসনকে বুঝিয়ে ফেরত পাঠান। বিক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীদের আবারো শান্ত করলেন নেতৃবৃন্দ। প্রায় ৪ ঘণ্টা বাজারের দোকানপাট বন্ধ থাকার পর কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক খোলা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে নেতৃবৃন্দ ছাড়াও ভূমিকা নেন দামুড়হুদা থানার অফিসার ইনচার্জ লিয়াকত আলী ও দর্শনা আইসি ইনচার্জ ফেরদৌস ওয়াহিদ। দর্শনা রেলবাজার দোকান মালিক সমিতির সভাপতি তোফাজ্জেল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সাবির হোসেন মিকা সাক্ষরিত প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের আগেভাগে অবহিত করলে হয়তো এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সৃষ্টি হতো না। এছাড়া দুঃখজনক হলেও সত্যি দর্শনা রেলবাজারের ব্যবসায়ীদের নির্বাচিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি থাকলেও ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ যে কোনো ধরনের অভিযানের ক্ষেত্রে কমিটিকে অবহিত করা হয় না। এছাড়া হরিজনদের এ দাবি পূরণের ক্ষেত্রে সময়ের প্রয়োজন। যা বাস্তবায়ন এতো তড়িতগতিতে অনেকটাই অসম্ভব। এ বিষয়ে সবশেষ খবর জানতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি মোবাইলফোন রিসিভ করেননি।