অবশ্যই অশান্তি কাম্য নয়, যদিও শান্তির জন্যই কখনো কখনো অশান্তির সূত্রপাত ঘটে। শান্ত চুয়াডাঙ্গা কেন অশান্ত, কেন গুলি বর্ষণ? প্রশ্নগুলো সাধারণ মানুষেরও। অধিকাংশ ঘটনার আড়ালেই কারো না কারোর উদ্দেশ্য লুকিয়ে থাকে। থাকে স্বার্থান্ধতাও। পুলিশে বা রাজনৈতিক দলের জবাবদিহিতায় ঘাটতি থাকলে আমজনতার জিম্মি দশার শঙ্কা বাড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় সমাজ। মূলত এসব কারণেই দরকার, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, সত্যের উন্মোচন।
পুলিশের সকল দায়িত্ব পালনে পেশাদারত্ব থাকলে ভাবমূর্তিতে আচড় লাগার কথা নয়। আসামি গ্রেফতার করার পর কেন গ্রেফতার তা জানতে গিয়েও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার কথা নয়। যে পুলিশ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে নিযুক্ত, সেই পুলিশের তরফে আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ শান্তিপ্রিয় আমজনতাকে হতাশ করে। আইন প্রয়োগে পুলিশে পেশাদারত্ব থাকলে হামলার সাহস দূরাস্ত, উর্দি ছোঁয়ার সাহস হওয়ার কথা নয়। নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, পুলিশে পেশাদারত্বের চেয়ে ক্ষমতাতোষণটাই যেন দায়িত্ব পালনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া একজনকে পুলিশ পরিচয়ে আটক করে গাড়িতে তোলার পর যদি গুম হয়ে যায়, তা হলে শঙ্কা তো বাড়েই। অভিযোগ, সাতগাড়ি থেকে ছাত্রলীগের দুজনকে পুলিশ ধরে গাড়িতে তুললে, সেই গুম-শঙ্কা থেকেই থানায় খোঁজ নিতে গেলে লাঠিচার্জ, গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শিকার হতে হয়েছে তার দলীয় সহকর্মীদের। যদিও পুলিশের দাবি, আসামি ছিনিয়ে নেয়ার জন্য হামলা করা হয়েছে। পুলিশ আক্রান্ত হয়েছে বলেই ছুড়তে হয়েছে রাবারবুলেট ও টিয়ারশেল। পুলিশের এ দাবি সঠিক নয় বলে দাবি করে সংশ্লিষ্টরা বলেছে, গ্রেফতার করা হয়েছে কি-না তা জানতে গেলে পুলিশ অস্বীকার করে। শহীদ হাসান চত্বরে সমবেত হয়ে স্লোগান দিতেই পুলিশ ছোড়ে গুলি ও টিয়ারশেল। জনপ্রতিনিধি বলেছেন, পুলিশ গুলি ছুড়েছে শুনে নিজের দায়বদ্ধতা থেকেই দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করি। পুলিশ সুপারকে প্রশ্ন করি- শান্ত চুয়াডাঙ্গা অশান্ত কেন, কেন এবং কার হুকুমে গুলি ছোড়া হলো? কেনই বা খুন মামলার আসামিরা ধরা পড়ছে না। পুলিশের জবাব, ‘পুলিশ অফিসার আক্রান্ত হলে আত্মরক্ষার্থে ওটুকু করতেই হয়েছে।’ যদিও গত শুক্রবার রাত ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গায় যা হয়েছে, যা ঘটেছে তা কোনভাবেই খাটো করে দেখা উচিত নয়। পত্র-পত্রিকায় উভয়পক্ষের বক্তব্য কম বেশি উপস্থাপন হয়েছে। পুলিশ বাদী হয়ে আবার মামলাও রুজু করেছে। সেহেতু, নিরপেক্ষ সুষ্ঠু তদন্ত হলে অবশ্যই পাওয়া যাবে সঠিক চিত্র। পুলিশ যেহেতু এখানে একটি পক্ষ, সেহেতু বিচার বিভাগীয় তদন্তই কাম্য।
যেটুকুই হয়েছে, যেটাই ঘটেছে তার পুনরাবৃত্তি কাম্য নয়। পুলিশ নিরাপত্তার প্রতীক। পুলিশকে হতে হবে আইনের পূজারী। দায়িত্বপালনে থাকতে হবে স্বচ্ছতা ও পেশাদারত্ব। পরিহার করতে হবে ক্ষমতাতোষণ। অপরদিকে ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদেরও হতে হবে সহনশীল। সকলকেই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, শ্রদ্ধাশীল করা দরকার। সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ সমাজকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে নিতে সহায়ক হবে নিশ্চয়।