ঢাকার উত্তরায় জাপানি নারী হিরোয়ি মিয়েতা খুনের হোতা জাকির পাটোয়ারী রতনকে গ্রেফতার করেছে ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সিআইডি তিনদিন আগে কলকাতা থেকে তাকে গ্রেফতার করে । রতনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। রতন হিরোয়ি মিয়েতার ব্যবসায়ীক অংশীদার ছিলেন। ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্বের কারণেই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন রতন।
রতনকে আটকের বিষয়টি কলকাতা থেকে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হয়েছে। এর আগে রতনের ভারতে অবস্থানের তথ্য বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই সেদেশের সিআইডিকে দিয়েছিল। শনিবার দুপুরে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা। রাত ৯টা ৪২ মিনিটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও তাকে গ্রেফতারের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, রোববারের (আজ) মধ্যেই ভারত তাকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দু’জন (সিজার তাবেলা ও কুনিও হোশি) বিদেশি নাগরিক হত্যার তদন্ত নিয়ে যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যস্ত, সে সময়ে বিশেষ সুবিধা নিতে জাকির পাটোয়ারী রতন হিরোয়ি মিয়েতাকে হত্যা করে। ওই সময় এ খুনের ঘটনাটিও ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা চালিয়েছিলেন রতন। তবে বিষয়টি টের পেয়ে দ্রুত মূল ঘটনা উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। এরা সবাই এজাহারভুক্ত আসামি।
পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, জাপানি এ নারীকে হত্যার প্রধান আসামি রতনকে গ্রেফতারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একাধিক স্থানে অভিযানও চালায়। কিন্তু তিনি বিভিন্ন কৌশলে আত্মগোপন করেন। একপর্যায় গোপনে ভারতে পাড়ি দেন। সেখান থেকে বাংলাদেশে তার কয়েকজন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগও করেন রতন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাইবার প্রযুক্তি দলের সদস্যরা তা নজরদারির মাধ্যমে রতনের অবস্থান নিশ্চিত হন। এরপর ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তার অবস্থান এবং ব্যবহার করা মোবাইল ফোন নম্বরও সরবরাহ করেন। এসব তথ্যের ভিত্তিতে তিনদিন আগে সিআইডি পশ্চিমবঙ্গ থেকে রতনকে গ্রেফতার করে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, তাকে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, কলকাতা সিআইডি ইতিমধ্যে বাংলাদেশে দায়িত্বশীল দু’জন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন। উত্তরা পূর্ব থানা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, হিরোয়ি মিয়েতা উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরে ১৩/বি নম্বর সড়কের ৮ নম্বর হোল্ডিংয়ে সিটি হোমস নামে এক ডরমেটরিতে থাকতেন। আগস্ট মাসে ওই নারীকে সেখান থেকে সরিয়ে ভাটারা থানা এলাকার এক বাসায় রাখেন তার ব্যবসায়িক অংশীদাররা। ২৬ অক্টোবর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরিবারের সদস্যরা তার কোনো খোঁজ না পেয়ে বিষয়টি ঢাকাস্থ জাপান দূতাবাসকে জানায়।
জাপান দূতাবাসের ভাইস কাউন্সিলর কুসুকি মাৎসুনা থানা পুলিশকে মৌখিকভাবে জানানোর পর ১৯ নভেম্বর উত্তরা পূর্ব থানায় হিরোয়ি নিখোঁজ থাকার বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি করেন। গোপনে জিডি অনুসন্ধানের চারদিন পর প্রযুক্তির মাধ্যমে পুলিশ নিশ্চিত হয় জাপানি নারী খুন হয়েছেন। সিটি হোমসের কর্মকর্তা ও বোর্ডারদের কাছে পাওয়া তথ্যে তদন্তে ছয়জনের নাম আসে। আর এতে প্রধান অভিযুক্ত হলেন জাকির পাটোয়ারী ওরফে রতন। তদন্তে খুনের বিষয় নিশ্চিতের পর উত্তরা পূর্ব থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) মিজানুর রহমান মামলা করেন। রতন বাদে এ মামলার পাঁচ আসামি মারুফুল ইসলাম, রাশেদুল হক বাপ্পী, ফখরুল ইসলাম, মো. জাহাঙ্গীর ও ডা. বিমলচন্দ্র শীলকে গ্রেফতার করা হয়। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে মূল পরিকল্পনাকারী ও প্রধান অভিযুক্ত রতনের নাম জানান তারা।