চুয়াডাঙ্গা পুলিশ-ছাত্রলীগের বিরোধে গুলি ককটেল টিয়ারশেল : থানায় পৌঁছে এসপিকে হুইপের প্রশ্ন কার অর্ডারে গুলি?

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের সাথে ছাত্রলীগের বিরোধে গুলি, ককটেল ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ হয়েছে। তুমুল সংঘর্ষে শহীদ হাসান চত্বর যেনো রনক্ষেত্রে রূপ নেয়। গতরাত সাড়ে ৯টার দিকে সদর থানা চত্বরে শুরু হয় লাঠিচার্জ ও সংঘর্ষ। শহীদ হাসান চত্বরসহ শহীদ আবুল কাশেম সড়কে সংঘর্ষের সময় টিয়ারশেল, গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আতঙ্কিত হয়ে মুহূর্তের মধ্যে শহর জনশূন্য হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়। সোয়া ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাতীয় সংসদের হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন সদর থানায় উপস্থিত হয়ে প্রশ্ন তোলেন, গুলি কেন? প্রকাশ্যে ঘুরলেও কেন যুবলীগকর্মী আজিজুল খুন মামলার আসামিদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না? এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও হু্ইপের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। পুলিশের তরফে শারীরিক লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে।
ঘটনার পর চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার রাশীদুল হাসান সদর থানায় পৌছুলে জাতীয় সংসদের হুইপ ছেলুন জোয়ার্দ্দার এমপি পুলিশ সুপার রাশীদুল হাসানকে প্রশ্ন করে বলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর কেন পুলিশ গুলি চালালো। কোন ম্যাজিস্ট্রেট গুলি চালানোর অর্ডার দিলো। এ সময় পুলিশ সুপার বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের সাতগাড়ি পুরাতনপাড়ার সাইদ মিস্ত্রির ছেলে আসাদুল ও একই গ্রামের বিশারতের ছেলে খালিদ মাহমুদ একাধিক মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি। সন্ধ্যায় এদেরকে গ্রেফতার করা হয়। কোর্টমোড়ে একদফা আসামিদের ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা চলে। পরে আসামিদের থানায় নেয়া হলে থানা ঘেরাও করে থানার ওসিকে লাঞ্ছিত করা হয়। ককটেলও মারা হয় পুলিশকে লক্ষ্য করে। তারই প্রেক্ষিতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়েছে। মেরেছে টিয়ারশেল। ছত্রভঙ্গ করতেই মূলত এ পদক্ষেপ। শহীদ হাসান চত্বরের কয়েকটি চেয়ার ও বেঞ্চে আগুন ধরিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করা হয়।
জাতীয় সংসদের হুইপ জেলা আওয়ামী লীগের পুনর্নির্বাচিত সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন, চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটনসহ অনেকেই এ সময় থানায় ছিলেন। থানা চত্বর ছিলেন বেশ কিছু ছাত্রলীগ যুবলীগের নেতাকর্মী। পুলিশ সুপারকে এ সময় হুইপ বলেন, এতোদিন কিছু হলো না। চুয়াডাঙ্গা শান্ত ছিলো। শান্ত আছেও। কয়েক মাস ধরে কিছু বিপথগামী উচ্ছৃঙ্খল যুবক অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। আর পুলিশ তাদেরকে লাই দিয়ে চুয়াডাঙ্গায় একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটাচ্ছে। ডিঙ্গেদহে যুবলীগকর্মী আজিজুল খুন হলো। তার স্ত্রী মামলা করলো। সেই মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরলেও কেন তাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না? যুবলীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম আসমান জানান, যুবলীগ কর্মী আজিজুল খুন মামলার আসামিদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করা না হলে শনিবার এসপি অফিস ও থানা ঘেরাও করা হবে।
জানা গেছে, ছাত্রলীগের খালিদ ও আসাদুলকে পুলিশ গ্রেফতার করে। খবর পেয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিকসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী সদর থানায় যান। রাত তখন সাড়ে ৯টা। ওসির সাথে কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে পাশে থাকা কয়েকজনের কটূক্তিতে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সময় সদর থানার সীমানা পাঁচিলে ঘটে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা। থানা থেকে পুলিশ বের হয়ে ধাওয়া করতে থাকে। ইটপাটকেলও নিক্ষেপ করতে থাকে কেউ কেউ। এ সময় পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ছোড়ে। গুলির শব্দও পাওয়া যায়। ছাত্রলীগের তরফে অভিযোগ, পুলিশ কমপক্ষে ৬ রাউন্ড গুলি করেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, গুলি-বোমার শব্দ শুনে হুইপ দোতলা থেকে নিচে নামেন। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিস্তারিত খুলে বললে হুইপ কালবিলম্ব না করে সদর থানার উদ্দেশে রওনা হন।
এ ব্যাপারে পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন বলেন, পুলিশ সুপার যেসব অভিযোগ করেছেন তা মিথ্যা। তিনি বলেন হুইপ সাহেব থানায় গিয়েছিলেন গুলি করার কৈফিয়ত নেয়ার জন্য। ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ছাড়া শহরে কেন পুলিশ গুলি চালালো। এতোদিন শহরে অনেক ঘটনা ঘটেছে গুলি হয়নি, এখন কেন পুলিশ গুলি চালালো। রাবার বুলেট নয় পুলিশ গুলি চালিয়েছে। গুলির বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও এসপি সাহেব জানিয়েছেন। তাছাড়া পুলিশ লাঞ্ছিত হওয়া বা থানা ও এসপি অফিস ঘেরাও করার যে আলটিমেটামের কথা পুলিশ বলেছে তা মিথ্যা। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। মেয়র টোটন বলেন, চুয়াডাঙ্গায় একটি মহল কয়েক মাস ধরে শান্ত চুয়াডাঙ্গাকে অশান্ত করে রেখেছে। এই শহরে সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে। তারা একের পর এক হামলা করছে। যুবলীগের খোকার বাড়িতে হামলা করেছে। তার মায়ের ওপর হামলা করেছে, কোপ মেরে রক্ত ঝরিয়েছে। হরিজন সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়েছে। ডিঙ্গেদহে আজিজুল খুন হয়েছে। সেই মামলার কোনো আসামিকে ধরা হচ্ছে না। তারা বুক চিতিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বুধবার সম্মেলন চলাকালে সারা শহর ভাঙতে ভাঙতে গেছে কেদারগঞ্জ পর্যন্ত। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক খুস্তার জামিলের বাড়িতে বোমা হামলা হয়েছে। এতোসব ঘটনা ঘটে গেছে শহরে, অথচ এসপি ও তাদের কয়েকজন কর্মকর্তা অপরাধীদের গ্রেফতার না করে জামাই আদর করে রেখেছেন। এ কারণে তারা চুয়াডাঙ্গায় সন্ত্রাস করে শান্ত চুয়াডাঙ্গাকে অশান্ত করে রেখেছে। মেয়র বলেন হুইপ সাহেব বলেছেন, এসব আসামিদের একদিনের মধ্যেই গ্রেফতার করতে হবে। না হলে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
পুলিশ সুপার রাশীদুল হাসান অবশ্য গুলি ছোড়া প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, পুলিশ আত্মরক্ষায় রবার বুলেট ছুড়তে বাধ্য হয়েছে। পুলিশের গায়ে হাত তুলেছে বলেই পুলিশ পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে। তা ছাড়া যে মামলার আসামি ধরা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করা হচ্ছে তাও ঠিক নয়। কেননা, বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের মধ্যে আমরা তদন্ত করে দেখছি। যদি প্রকৃতপক্ষে জড়িত হয় তা হলে তাদের গ্রেফতার করা হবে। আর অন্য কেউ জড়িত থাকলে তাকেও গ্রেফতার করা হবে।