জঙ্গি অর্থায়ন প্রতিরোধে দুর্বল বাংলাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশে জঙ্গি অর্থায়ন বা সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ ব্যবস্থায় এখনও দুর্বলতা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছে এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিং (এপিজি)। সংস্থাটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর অনিয়ম ও জালিয়াতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। বাংলাদেশ সফর শেষে এপিজির প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এসব বিষয় উঠে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকসূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে গৃহীত ব্যবস্থার পর্যাপ্ততা ও কার্যকারিতা মূল্যায়নে ১১ অক্টোবর এপিজি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসে। আট সদস্যের দলটি চলে যাওয়ার একদিন আগে তৈরি করা প্রাথমিক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, ‘সন্ত্রাসে অর্থায়ন বা জঙ্গি অর্থায়ন প্রতিরোধ ব্যবস্থার যে দুর্বলতা রয়েছে তা কাটিয়ে ওঠার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। সব ধরনের লেনদেন মনিটরিং করা হচ্ছে। তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আইনি ব্যবস্থাও কঠোর করা হয়েছে। আগামী জুলাইয়ের মধ্যে দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘পৃথিবীর সব অর্থনীতিতেই সন্ত্রাসী অর্থায়ন আছে। আমাদের অর্থনীতিতে নেই এমন কথা বলা যাবে না। এ কারণেই আমরা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করছি। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে সুশাসন আনতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আশা করি, আগামী জুলাইয়ের মধ্যে এপিজি গ্রুপের দেয়া অধিকাংশ শর্ত পূরণ করা সম্ভব হবে।’
এপিজি ১৩ দিন বাংলাদেশে অবস্থান করে। ওই সময়ে দলটি ২৪টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা সরকারি সংস্থা এবং ২৬টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে ৪৫টি সভায় মিলিত হয়। সূত্র জানায়, প্রতিনিধি দলটি ২১ অক্টোবর তাদের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ বাংলাদেশের কাছে উপস্থাপন করে।
প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে কয়েকটি চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি বিগত সময়ে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়নে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের প্রশংসা করা হয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনি কাঠামোকে যে কোনো উন্নত দেশের আইনি কাঠামোর সমকক্ষ বলে মন্তব্য করা হয়। এতে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার মধ্যে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও হেড অব বিএফআইইউর (বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট) গতিশীল নেতৃত্বের জন্য স্বল্পতম সময়ে বাংলাদেশে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
উল্লেখ্য, মিউচুয়াল ইভ্যালুয়েশনে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নির্ধারণকারী সংস্থা ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্স কর্তৃক প্রণীত ৪০টি সুপারিশের বিপরীতে একটি দেশের আইন ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর পর্যাপ্ততা ও সক্ষমতা মূল্যায়ন করা হয়।