স্টাফ রিপোর্টার: ‘নির্বাচনে অংশ না নিয়ে সারাদেশে জ্বালাও পোড়াও করেছেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি মানুষ পুড়িয়ে মেরেছেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচন করবেন না বলে আন্দোলনের নামে প্রায় আড়াইশ মানুষ হত্যা করেছেন। কিন্তু এতোসব প্রাণ নেয়ার পর ঠিকই তো নাকে খত দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের অধীনেই নির্বাচন করছেন খালেদা জিয়া। তিনি বিভিন্নভাবে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন। খালেদা জিয়া যতোই চক্রান্ত করুন না কেন তার ইচ্ছে কোনোদিন পূরণ হবে না।’ কথাগুলো বলেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। গতকাল বুধবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় নাসিম এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এবারের পৌর নির্বাচন হবে সেমিফাইনাল। শেখ হাসিনার নৌকাকে বিজয়ী করে ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনের ফাইনালে বিজয় অর্জন করতে হবে।’ এ জন্য নেতাকর্মীদেরকে আরও উজ্জীবিত হওয়ার আহ্বান জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। তিনি তার বক্তৃতায় বলেন ‘একাত্তরের পরাস্ত শক্তি প্রতিশোধ নিতেই পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছিলো। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান তাদেরকে পুনর্বাসন করেছিলেন। জিয়াউর রহমান প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। তিনি পাকিস্তানের এজেন্ট হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে এদেশে ফিরিয়ে এনে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার পর তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুরস্কৃত করেছেন। যুদ্ধাপরধীদের এমপি বানিয়েছেন, মন্ত্রী বানিয়েছেন। এখন তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ বাধাগ্রস্ত করার জন্য দেশে-বিদেশে চক্রান্ত শুরু করেছেন।’ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে হানিফ বলেন, ‘জামায়াত কোনো রাজনৈতিক দল নয়। এরা পাকিস্তানের প্রেতাত্মা। আর খালেদা জিয়া পাকিস্তানের এজেন্ট।’ তিনি তার বক্তব্যে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরে বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকার দেশের বিদ্যুত, খাদ্য, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, শিক্ষাসহ সার্বিকভাবে অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটিয়েছে।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জাতীয় সংসদের হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপির সভাপতিত্বে চুয়াডাঙ্গা টাউন ফুটবল মাঠে অনুষ্ঠিত হয় এ সম্মেলন। সকাল থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সম্মেলনে যোগ দেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষকলীগ, শ্রমিকলীগ, মহিলা লীগসহ সব অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বেলা ১১টা বাজতে না বাজতেই পুরো মাঠ কানায় কানায় ভরে ওঠে। জয় বাংলা স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে সম্মেলনস্থল চুয়াডাঙ্গা টাউন ফুটবল মাঠ। একের পর এক সঙ্গীত পরিবেশন করেন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের শিল্পীবৃন্দ। এ সময় আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। জাতীয় সঙ্গীতের সাথে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ জাতীয় পতাকা ও সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, গীতা পাঠ ও বাইবেল পাঠের পর অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। এরপর সাংগঠনিক প্রতিবেদন পাঠ করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদুল ইসলাম আজাদ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশেষ অতিথি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক এমপি, দলের অন্যতম সদস্য এসএম কামাল হোসেন এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের এমপি আলী আজগার টগর, জীবননগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মোর্তূজা, দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টু, চুয়াডাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আশহাবুল হক মালিক লন্টু, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান নান্নু, দফতর সম্পাদক রফিকুল ইসলাম লাড্ডু, আলমডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসান কাদির গনুসহ জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানের বিশেষ তত্ত্বাবধানে ছিলেন চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন। সমাপনী বক্তব্যে অনুষ্ঠানের সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘কোনো বিভেদ নয়। আমরা এক হয়ে চুয়াডাঙ্গাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’ এরপর চুয়াডাঙ্গা পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, আলমডাঙ্গার হাসান কাদির গনু, দর্শনার মতিয়ার রহমান ও জীবননগরের আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী প্রভাষক নাসির উদ্দিনকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় এবং তাদেরকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান, অ্যাড. শামশুজ্জোহা, ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক খুস্তার জামিল, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. আব্দুল মালেক, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ উজ্জামান লিটু বিশ্বাস, প্রচার সম্পাদক ফেরদৌস ওয়ারা সুন্না, উপপ্রচার সম্পাদক শওকত আলী বিশ্বাস, কার্য নির্বাহী সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমানসহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক, মহিলা এমপি সেলিনা আক্তার বানু ও ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু। অনুষ্ঠানের সমাপনীতে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর বেলা সাড়ে ৩টার দিকে কাউন্সিল অনুষ্ঠান পর্বে মাহবুব-উল আলম হানিফ উপস্থিত কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি ঘোষণা দেন। কমিটিতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দারকে পুনরায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদকে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে প্রেরণের জন্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অনুরোধ করা হয়। পরবর্তীতে তা কেন্দ্র থেকে অনুমোদন দেয়া হবে বলে হানিফ উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মাইকে ঘোষণা দেন।
প্রসঙ্গত, অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপির। আগের দিন তার চাচা মারা যাওয়ার কারণে তিনি চুয়াডাঙ্গায় আসতে পারেননি বলে অনুষ্ঠানে জানিয়ে দেয়া হয়।