পৌর নির্বাচনে দল মনোনীত মেয়র প্রার্থীদের প্রত্যয়নপত্র দেওয়া শুরু করেছে বিএনপি, যার মধ্য দিয়ে দলটি ভোটে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে আরেক ধাপ এগোলো।
মঙ্গলবার রাতে গুলশানে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে দলীয় প্রত্যয়নপত্র কয়েকজন প্রার্থীর হাতে তুলে দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান, যাকে দলের পক্ষে প্রত্যয়নকারী হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে।
প্রথম দিন রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভায় মাসুদ রানা, নওহাটা পৌরসভায় শেখ মকবুল হোসেন, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌরসভায় মহিউদ্দিনের হাতে প্রত্যয়নপত্র তুলে দেন শাহজাহান।
অর্থাৎ এই তিনজন আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
দলীয় প্রতীকে প্রথম পৌর নির্বাচনের তফসিল ইসি দেওয়ার পর শর্তসাপেক্ষে তাতে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি। সোমবার সিইসির সঙ্গে দেখা করে ভোট পেছানোর দাবিও জানিয়ে আসেন দলটির নেতারা।
তবে বিএনপির ওই দাবি নাকচ করে সিইসি জানিয়ে দেন, নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। এরপর বিএনপি সুষ্ঠু ভোট নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করলেও রাতেই প্রার্থীদের প্রত্যয়নপত্র দেওয়া শুরু করে।
প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার আগে শাহজাহান সাংবাদিকদের বলেন, “অনেক কথা থাকা সত্ত্বেও আমরা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে পৌর নির্বাচনকে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছি।
“এই চ্যালেঞ্জ শুধু দলের জন্য নয়; গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ, মানুষের ভোটাধিকার ফিরে পাবার চ্যালেঞ্জ, ভোটকেন্দ্রে অবাধে ভোটাধিকারের পরিবেশ তৈরি করার চ্যালেঞ্জ।”
“আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, আমরা কোনো শর্ত দিয়ে নির্বাচনে যাইনি। আমরা রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে ভোটে অংশ নিচ্ছি। এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমরা মাঠে থাকব,” বলেন জাতীয় সংসদের সাবেক এই হুইপ।
বিএনপিকে নির্বাচনে রাখার দায়িত্ব সরকার ও নির্বাচন কমিশনের উপরই নির্ভর করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
“আমি আশা করি, নির্বাচন কমিশন ও সরকার দয়া করে আমাদেরকে মাঠ থেকে সরিয়ে দেবেন না। নির্বাচনের মাঠে থেকে জনগণ কী চায়, তা যেন আমরা যাচাই করতে পারি।”
৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত শেখ হাসিনার সরকারের জনভিত্তি নেই বলে বিএনপির দাবি। ওই ভোট বর্জনের পর ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও জালিয়াতির অভিযোগ তুলে ভোটগ্রহণের মাঝপথে সরে আসে।
পৌর নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থীদের অংশগ্রহণ যেন নির্বিঘ্ন হয়, তা নিশ্চিত করতে ইসির প্রতি আহ্বান জানান শাহজাহান।
“আমাদের নেতা-কর্মী ও প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করতে গিয়ে যেন হয়রানির মুখে না পড়ে। নেতা-কর্মী যারা আটক রয়েছেন, তাদের জামিনের ব্যবস্থা করবেন। গণগ্রেপ্তার বন্ধ করবেন।”
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের এই নির্বাচনে শুধু নিজের দল নয়, প্রয়োজনে ‘দায়িত্বশীল’ অন্য প্রার্থীকে সমর্থন দিতেও বিএনপি প্রস্তুত বলে জানান তিনি।
“যারা আমাদের সঙ্গে আন্দোলনে আছেন, তাদের কতটুকু গুরুত্ব দিচ্ছি তা আমার পাশে বসা জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম মেম্বারকে দেখেই আপনারা বুঝতে পারছেন। শুধু জোটের নয়, প্রয়োজনে সমাজের দায়িত্বশীল ভালো লোক, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে শরিক হতে চান, প্রয়োজনে তাদেরকেও আমরা মনোনয়ন দেব।”
বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক প্রথম যে তিন মেয়র প্রার্থীকে দিয়েছে, তাদের একজন মহিউদ্দিন জাতীয় পার্টি (জাফর) নেতা। তিনি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌরসভায় ভোট করবেন।
শাহজাহানের সঙ্গে এসময় জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আহসান হাবিব লিংকন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামীমুর রহমান শামীম, আসাদুল করীম শাহিন, সাবেক সাংসদ ওয়াদুদ ভুঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।
গুলশান কার্যালয়ে দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাশী ও তাদের অসংখ্য সমর্থকরাও ভিড় জমিয়েছেন।
২৩৫টি পৌরসভার মধ্যে কতটিতে মেয়র প্রার্থী শরিক দলগুলোকে দেবে বিএনপি- জানতে চাইলে শাহজাহান বলেন, “সংখ্যা আমরা বলতে চাই না। এই নির্বাচনে বিএনপি তার শরিকদের নিয়ে অংশ নেবে। শরিকরা কেউ চাইলে তাদের বিমুখ করব না।”
নিবন্ধন হারানো জামায়াতে ইসলামী কি ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবে- এই প্রশ্নের জবাবে বিএনপির যুগ্মমহাসচিব বলেন, “৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। জামায়াতে ইসলামীর নিজস্ব রাজনীতি আছে। তার কী কৌশল হবে, কী প্রক্রিয়ায় তারা নির্বাচনে অংশ নেবে, সেটা তাদের ভাবতে দেওয়া উচিৎ।”
তফসিল অনুযায়ী, ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে। ৫ ও ৬ ডিসেম্বর বাছাই শেষে ১৩ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন।
রাজশাহী বিভাগে প্রার্থী যারা
রাজশাহী বিভাগে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের নাম বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে।
রাজশাহীর প্রার্থীরা হলেন- নওহাটায় শেখ মকবুল হোসেন, দুর্গাপুরে সাইদুর রহমান (মন্টু), কেশরহাটে আলাউদ্দিন আলো, তাহেরপুরে আবু নাঈম মো. সামছুর রহমান (মিন্টু), কাঁকনহাটে হাফিজুর রহমান, আড়ানীতে তোজাম্মেল হক, তানোরে মিজানুর রহমান মিজান, চারঘাটে জাকিরুল ইসলাম, মুণ্ডুমালায় ফিরোজ কবীর, গোদাগাড়ীতে আনোয়ারুল ইসলাম।
নাটোরের নলডাঙ্গায় আব্বাছ আলী, গুরুদাসপুরে মশিউর রহমান বাবুল, বড়াইগ্রামে ইসাহাক আলী, নাটোরে শেখ ইমদাদুল হক আল-মামুন, সিংড়ায় শামীম আল রাজি মো. শিহানুর রহমান ধানের শীষ প্রতীকে প্রার্থী হচ্ছেন।
পঞ্চগড় পৌরসভায় তৌহিদুল ইসলাম পেয়েছেন বিএনপির প্রত্যয়নপত্র।
জয়পুরহাট পৌরসভায় শামসুল হক, কালাইয়ে সাজ্জাদুর রহমান তালুকদার সোহেল পাচ্ছেন ধানের শীষ প্রতীক।
রংপুরের বদরগঞ্জ পৌরসভায় পরিতোষ চন্দ্র চক্রবর্তী মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী হচ্ছেন।
চাঁপাই নবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে সফিকুল ইসলাম, নাচোলে মো. কামারুজ্জামান পাচ্ছেন ধানের শীষ প্রতীক।
লালমনিরহাট পৌরসভায় আবদুল হালিম, পাটগ্রামে এ কে মোস্তফা সালাউজ্জামান ওপেলকে প্রত্যয়নপত্র দিচ্ছেন শাহজাহান।
গাইবান্ধা পৌরসভায় মো. শফিউজ্জামান শহীদ, গোবিন্দগঞ্জে ফারুক আহম্মেদ বিএনপির প্রার্থী হচ্ছেন।
কুড়িগ্রাম পৌরসভায় মো. নুরুল ইসলাম (নুরু), নাগেশ্বরীতে আদম আলী, উলিপুরে তারিক আবুল আলা ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হচ্ছেন।