ঝিনাইদহে ১১ মাসে ৮১ জনের লাশ উদ্ধার খুন হয়েছে ৬৪ জন
শিপলু জামান ঝিনাইদহ প্রতিনিধি ঃ
ঝিনাইদহে গত ১১ মাসে খুনসহ ৮১ জনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে ৬৪ জন বিভিন্ন ভাবে খুন হয়েছেন। ১৭ জনের মৃত্যু নির্ণয়ে ময়না তদন্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে খুন হওয়া ৭টি লাশের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এদিকে খুনসহ উদ্ধারকৃত লাশের মধ্যে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ২৫ জন, শৈলকুপায় ১৪, মহেশপুরে ১৪, কোটচাঁদপুরে ৯, কালীগঞ্জে ১৪ ও হরিণাকুন্ডু উপজেলায় ৫ জন রয়েছে। পুলিশের একটি সুত্র জানায় উদ্ধার হওয়া লাশের মধ্যে অনেকের ময়না তদন্তের পর অপমৃত্যুর আলামত পাওয়া গেছে। পুলিশ ও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা গেছে ২০১৫ সালের জানুয়ারী মাসে কালীগঞ্জে এক আওয়ামীলীগ নেতাসহ জেলায় চার জন খুন হয়েছেন। ফেব্রয়ারী মাসে খুন হয় আটজন। এর মধ্যে বিএসএফ জোড়া হত্যাকান্ড ঘটায় মহেশপুরের লেবুতলা সীমান্তে। এছাড়া ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ডেফলবাড়ি গ্রামের মাঠে দুলাল ও পালাশ নামে দুই যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়। মার্চ মাসে জেলায় চার জনের লাশ উদ্ধারসহ খুন হয় আটজন। এরমধ্যে কোটচাঁদপুরের ভোমরাডাঙ্গা গ্রামে মুক্তিপণের দাবীতে মাদ্রাসা ছাত্র মিরাজকে নৃশংস ভাবে হত্যা করে দুর্বত্তরা। এই মামলায় পুলিশ ঘাতক চক্রকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এপ্রিল মাসে ৩টি লাশ উদ্ধারসহ খুন হয় ৬ জন। মে মাসে জেলায় খুনসহ বিভিন্ন ব্যক্তির ১১টি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এরমধ্যে কালীগঞ্জে স্ত্রীর পরকিয়ার শিকার হন রফিউদ্দিন নামে এক মোচিকের কর্মচারী। শৈলকুপার আনন্দনগর গ্রামে স্ক্রল ছাত্র আশিককে হত্যা করা হয়। হরিণাকুন্ডুর ভেড়াখালী গ্রামে ভাইয়ের হাতে কলেজছাত্র কামরুজ্জামান নিহত হন। কোটচাঁদপুরে দলীয় কোন্দলে নিহত হন সোনা মিয়া নামে এক শ্রমিকলীগ নেতা। জুন মাসে চার জন নিহত হন। এরমধ্যে মহেশপুরের বাঘাডাঙ্গায় বিএসএফর নির্যাতনে জাহাঙ্গীর নামে এক বাংলাদেশী নিহত হন। ব্যাপারীপাড়ার সেচ্ছাসেবকলীগ কর্মী তরিকুলকে শহরের গুলশানপাড়ায় খুন করা হয়। কোটচাঁদপুরের ফাদিলপুর থেকে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এখনো পর্যন্ত তার পরিচয় মেলেনি। জুলাই মাসে লাশ উদ্ধারসহ নিহত হয় আট জন। এর মধ্যে সদর উপজেলার অচিন্তনগর গ্রামে শিশু মনিরাকে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়। এই মাসে জেলায় তিন অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার হয়। কোটচাঁদপুরে এক বৃদ্ধ, সদর উপজেলার ফুরসন্দি ও শৈলকুপার ত্রীবেনি গ্রাম থেকে দুই যুবকের লাশের পরিচয় মেলেনি। আগষ্ট মাসে জেলায় মহিলাসহ ৬ জনের লাশ উদ্ধার হয়। এর মধ্যে শৈলকুপার বড়মৌকুড়ি গ্রামে গ্রাম্য সংঘর্ষে আব্দুল ওহাব নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। সেপ্টেম্বর মাসে জেলায় খুনসহ ৯ জনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর মধ্যে শৈলকুপায় যুবদল নেতা, এক মহিলার গলা কেটেসহ দুই ভ্যান চালককে হত্যা করা হয়। একই মাসে শহরের মথুরাপুর গ্রামে বৈশাখী খতুন নামে এক স্কুল ছাত্রীকে হত্যা করা হয়। রাজাপুর গ্রামে এক রিক্সা চালককে পিটিয়ে হত্যা করে গ্রামবাসি। অক্টোবর মাসে ১০ জনের লাশ উদ্ধার হয়। এর মধ্যে কালীগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ি এলাকার রেল লাইনে যশোর আওয়ামী লীগের কর্মী এনামুল হককে হত্যা করা হয়। ২০ অক্টোবর একই উপজেলার ফারাশপুর গ্রামে মা তাসলিম ও মেয়ে তাসনিমকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। ২৫ অক্টোবর সদর উপজেলার হাটগোপালপুর এলঅকার কাশিমপুর গ্রামে আব্দুল আজিজকে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা। ৩১ অক্টোবর সদর উপজেলার ওয়াড়িয়া গ্রামে মিম নাকে এক কিশোরীকে হত্যা করা হয়। ১ নভেম্বর মহেশপুর উপজেলায় এরশাদ আলী নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়। ২ নভেম্বর শ্বাশুড়ি ও ম্যালিকা হত্যা মামলার প্রধান আসামী কামাল শেখ র্যাবের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়। ১১ নভেম্বর হরিণাকুন্ডু উপজেলার ফতেপুর গ্রামে কবরী বেগম নামে এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। ২৬ নভেম্বর কালীগঞ্জ যশোর সড়কে মনিরুদ্দীন নামে এক গরু ব্যবসায়ীকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ২৭ নভেম্বর শৈলকুপার আওধা বড়বাড়ি গ্রামে মজুমদারপাড়ার ভ্যান চালক মিরাজ হোসেনকে দুর্বৃত্তরা হত্যা করে। এ সব হত্যাকান্ড নিয়ে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ জানান, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া জেলার আইনশৃংখলা পরিস্থিতি সার্বিক ভাবে ভাল। চরমপন্থিদের কোন বিস্তার নেই। সামাজিক বিরোধও কমে এসেছে। তিনি জানান, জেলায় নয় মাসে যে সব হত্যাকান্ড ঘটেছে কয়েকটি ছাড়া সবগুলোর মোটিভ ও ক্লু পুলিশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শিপলু জামান
ঝিনাইদহ
–