অচল কল রাতারাতি সচল : দূর হয়েছে দুর্গন্ধ

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের যে টিউবওয়েল গুলোতে পানি উঠতো না, সেই টিউবওয়েলগুলো রাতারাতি ম্যাজিকের মতো সচল হয়ে গেছে। চাপলেই দিব্যি হড়হড় করে উঠছে পানি। আর দুর্গন্ধ? আবর্জনার স্তুপ উবে গেছে চোখের পলকে। ড্রেনগুলোও পরিষ্কার। এরপরও কি দুর্গন্ধ থাকে? কেন? স্বাস্থ্যমন্ত্রী আসছেন যে!
মন্ত্রী আসছেন শুনেই যদি রাতারাতি অচল কল সচল হয়, দূর হয়ে যায় দুর্গন্ধ, হাসপাতালের পরিবেশ হয়ে ওঠে স্বাস্থ্যসম্মত তা হলে মাসে মাসে মন্ত্রী আসে না কেন? যে হাসপাতালে ঢুকতে হলে প্রধান ফটক থেকেই নাকে কাপড় না হলে রুমাল দিতে হয়, সেই সদর হাসপাতাল এলাকার অধিকাংশ সরল সোজা সাধারণ মানুষেরই এ প্রশ্ন। হাসপাতালের দেয়ালে লেখা ‘বিনা রশিদে টাকা দেবেন না’ যেখানে সেখানে কফ থুথু ফেলবেন না’ ময়লা আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলবেন’ লেখাগুলো ঝাপসা হয়ে গিয়েছিলো। সেই লেখাগুলোর ওপর রঙতুলির আচড়ে করে তোলা হয়েছে চকচকে। রুম পরিচিতির জন্য দরজার ওপর ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে ডিজিটাল ব্যানার। হাসপাতালের এসব বদলে যাওয়া কেন? আগামীকাল ২ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। এ সম্মেলনে আসছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমসহ অনেকে। স্বয়ং স্বাস্থ্যমন্ত্রী যখন চুয়াডাঙ্গায় আসছেন, তখন হাসপাতাল কি ওই অবস্থায় রাখা যায়? যদি মন্ত্রী হাসপাতাল পরিদর্শনে এসেই পড়েন!
অবশ্য হাসপাতালের উপর উপর চকচকে করে তোলা হলেও ভেতরের পুরোনো ক্ষতগুলো তেমনই থাকছে। যেমন, অপারেশন থিয়েটারের ৫টি এসির মধ্যে ৩টি অচল। ভিআইপি কেবিনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রটি বহুদিন ধরেই অচল। ভিআইপি এক রোগীর লোকজন মাঝে একদফা মেরামত করলেও এসিটি সুস্থ থাকেনি বেশিদিন। ২ নম্বর কেবিনটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। কেন? বাথরুমের নোংরা কেবিনটি ব্যবহারের অযোগ্য। সেবিকাদের ড্রেসিং রুম থাকলেও কতোদিন তা খোলা হয়নি তা মনে করাও কঠিন। সিকরুম? তাও বন্ধ। মেল মেডিসিন বিভাগের সেবিকাদের শৌচাগারের জন্য ছুটতে হয় অন্য ওয়ার্ডে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আকস্মিক হাসপাতাল পরিদর্শন করতে পারেন ভেবে হাসপাতালের উপর উপর পরিষ্কার পরিছন্নতার পাশাপাশি চাকচিক্য ফুটিয়ে তোলার প্রয়াস চলছে পুরোদমে। এসিসহ যেসব সমস্যাগুলো স্থায়ী হয়ে রয়েছে তা আড়ালেরই যেন চেষ্টা চলছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ৪টি টিউবওয়েলের সব কটিই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছিলো। রোগী ও রোগীর লোকজনকে পার্শ্ববর্তী উপজেলা পরিষদ চত্বরের কল থেকে পানি আনতে হতো। উপজেলার কলপাড়ে সকাল-বিকেল সন্ধ্যায় পড়তো নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরের লম্বা লাইন। দিনের পর দিন এ দুর্ভোগ থাকলেও হাসপাতালের টিউবওয়েল মেরামতের তেমন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যেতো না। অপরিষ্কারের কারণে দুর্গন্ধ তো বারোমেসে। আর বৈদ্যুতিক সরঞ্জমাদির মধ্যে পাখা খুলে রোগীর গায়ের ওপর পড়াই শুধু নয়, প্রয়োজনীয় বাল্ব না থাকায় অন্ধকারের সমস্যাটাও ছিলো দীর্ঘদিনের। সুইচ? তাতে হাত দিয়ে অন-অফ করার মতো ছিলো না অনেকগুলো। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর চুয়াডাঙ্গায় আগমনে ৩৬টি বাল্ব, ৩৬টি সুইচ, হোল্ডার দিয়ে স্থাপনের জন্য বৈদ্যুতিক বিভাগের দায়িত্বে থাকা মোতালেব হোসেন রনিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি জুনিয়র মেকানিক্যাল দায়িত্বে। গত কয়েকদিন ধরে তার ব্যস্ততা দেখে বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে তিনি মুচকি হাসি দিয়ে বলেন, সবই ওপরওয়ালার ইচ্ছে। হেলথ এডুকেটর দেলোয়ার হোসেন লোকজন নিয়ে পরিষ্কার পরিছন্নতার কাজ তদারকি করছেন। তিনি বললেন, পৌরসভা থেকে পাওয়া ৫ জন আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দিয়েছেন ৬ জন। মোট ১১ জনকে দিয়ে হরদম পরিষ্কার পরিছন্নতার কাজ চলছে। আর হাসপাতালের ভেতরের ওয়ার্ডগুলো দফায় দফায় ধোয়া হচ্ছে। আয়াদেরও লাগানো হয়েছে একাজে। দীর্ঘদিনের আবর্জনার স্তুপ ওরাই সরিয়েছে। হাসপাতাল চত্বরের চা দোকানগুলো দুদিনের জন্য সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আজ ও আগামীকাল হাসপাতাল চত্বরে কোনো দোকান রাখা যাবে না।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এমনিতেই আমরা হাসপাতালের পরিষ্কার পরিছন্ন করি। মন্ত্রী আসছেন বলে এখন একটু বেশি বেশি।