বগুড়ার শিবগঞ্জে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের বর্বরতা : শিয়া মসজিদে মুয়াজ্জিন খুন : গুলিবিদ্ধ ৩

স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকায় তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় বোমা হামলার পর এবার বগুড়ার শিবগঞ্জে শিয়া মসজিদে হামলা চালানো হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার মাগরিবের নামাজের সময় দুর্বৃত্তদের গুলিতে ওই মসজিদের মুয়াজ্জিন মোয়াজ্জেম হোসেন (৬০) নিহত এবং ইমাম ও মুসল্লিসহ আরও ৩ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
শিবগঞ্জ উপজেলার কিচক ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামে ওই ঘটনা ঘটে। নিহত মোয়াজ্জেম হোসেন ওই গ্রামের বছির উদ্দিনের ছেলে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৮ রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করেছে। তবে ওই ঘটনায় জড়িতদের কাউকে শনাক্ত কিংবা গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। স্থানীয় শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন অভিযোগ করেছেন পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাস ছড়ানোর জন্যই ওই ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
গুলিবর্ষণে আহতরা হলেন শিবগঞ্জ উপজেলার চককানু মধ্যপাড়া গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে শিয়া মসজিদের ইমাম শাহিনুর রহমান (৪৫), একই গ্রামের খুদু মিয়ার ছেলে আফতাব আলী (৪৫) ও একই উপজেলার আলাদিপুর গ্রামের মৃত খয়ের মাহমুদের ছেলে আবু তাহের (৫৫)। এদের মধ্যে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত শাহিনুর ও আবু তাহের শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
হরিপুর গ্রামের শিয়া সম্প্রদায়ের অনুসারী তৌফিকুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার ওই মসজিদে মুসল্লিরা মাগরিবের নামাজ আদায় করছিলেন। সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে নামাজের শেষ রাকাতের সময় অজ্ঞাতনামা কয়েক দুর্বৃত্ত মসজিদের ভেতরে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি করে পালিয়ে যায়। এতে ৪ জন গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধদের প্রথমে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে ৩ জনকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
ওই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিত্সক ডা. জাহিদুল ইসলাম জানান, রাত সাড়ে ৭টার দিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় প্রথম যে দুজনকে আনা হয়েছে তাদের মধ্যে মোয়াজ্জেম হোসেন নামে একজন হাসপাতালে আনার আগেই মারা যান। তিনি বলেন, মোয়াজ্জেম হোসেনের হাতে গুলি লেগেছিলো। তবে তার মাথায়ও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তিনি পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অপর দুজনের মধ্যে আবু তাহেরের পায়ে এবং শাহিনুরের কোমরে গুলি লেগেছে।
বগুড়ার শিবগঞ্জ থানার ওসি আহসান হাবিব জানান, আহত আফতাব আলীকেও উন্নত চিকিত্সার জন্য শিবগঞ্জ উপজেলা হাসপাতাল থেকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
কারা কী উদ্দেশ্যে শিয়া সম্প্রদায়ের ওই মসজিদে হামলা চালিয়েছে সে ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত করে কিছুই বলতে পারেনি। তবে হরিপুর গ্রামের বাসিন্দা ইরানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোজাফফর হোসেন জানান, প্রায় ১৫/১৬ বছর আগে ওই গ্রামের কিছু মানুষ প্রথমে শিয়া অনুসারী হন। পরবর্তীতে তাদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বর্তমানে ওই গ্রামের অন্তত ৫০০ মানুষ শিয়া অনুসারী হয়েছেন। আমাদের সম্প্রদায়ের কারও সাথে অন্য কারো কোনো বিরোধ ছিলো না। শুধু সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বিস্তারের জন্যই ন্যক্কারজনকভাবে ওই হামলা চালানো হয়েছে।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান জানান, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে হামলাকারীরা সংখ্যায় ৩/৪জন ছিলো। তারা গুলি চালিয়ে দ্রুত পালিয়ে গেছে।আমরা আহতদের চিকিত্সা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছি। তবে হামলাকারীদের শনাক্ত এবং তাদের গ্রেফতারেরও চেষ্টা চলছে।